ঢাকা     শনিবার   ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বিরুলিয়া সেতু : এক যুগেও অসম্পন্ন

সাফিউল ইসলাম সাকিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ১৯ জানুয়ারি ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিরুলিয়া সেতু : এক যুগেও অসম্পন্ন

সাভারের বিরুলিয়া এলাকায় নির্মানাধীন বিরুলিয়া সেতু (ছবি : সাকিব)

সাফিউল ইসলাম সাকিব, সাভার : একযুগ আগে নির্মাণ শুরু হয় সেতুটির, এখনো চলছে! কবে শেষ হবে তা কারো জানা নেই। সেতুটির নাম বিরুলিয়া সেতু। সাভারের বিরুলিয়ায় তুরাগ নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে এই সেতু।

 

নির্মাণ কাজ যেন সময়মত শেষ হয়, সেজন্য চুপিসারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীও এসে দেখে গেছেন কয়েকবার। ঠিকাদার কোম্পানিকে সময়মতো কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশনাও দিয়েছেন কঠোরভাবে। তবে তাতে কোনো কাজ হয়েছে বলে মনে হয় না স্থানীয়দের। কারণ এতে ভাগ্যোন্নয়ন হয়নি সেতুটির। একই সঙ্গে তুরাগ নদীর দুই পাড়ের মানুষেরও।

 

২০০২ সালে প্রথম এই সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর। তবে অর্ধেক শেষ করেই থেমে যায় তারা। তার ১১ বছর পর প্রথম দফার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার অভিযান শুরু হয় ২০১৪ সালে। কিন্তু তাতেও দেখা দিয়েছে অনিশ্চিয়তা।

 

দ্বিতীয় দফায় অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বাঁশি। সেজন্য ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। সেই হিসেবে মাত্র আট মাস সময় পায় প্রতিষ্ঠানটি। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, তাদের কাজের সময়সীমার একেবারে শেষ প্রান্তে এসে নির্মাণ কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। আর ডিসেম্বর পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো ছয় মাস সময়মীমা বাড়ানোর আবেদন জানায় প্রতিষ্ঠানটি। এতে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছেন সেতুর দুই পারের মানুষ।

 

স্থানীয় জনগণ ও সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাভার ও রাজধানীর মধ্যে দূরত্ব কমানো এবং যানযট নিরসনে উপজেলার বিরুলিয়া এলাকায় তুরাগ নদীর ওপর বিরুলিয়া সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ২০০২ সালে কাজ শুরুর পর অজানা কারণে মূল সেতুর অর্ধেক নির্মাণের পরেই থেমে যায় কাজ। এরপর কেটে যায় দীর্ঘ ১১ বছর। এই ১১ বছরের সেতুটি হারাতে বসে নিজের অস্তিত্ব। পত্রপত্রিকায় সংবাদ দেখে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসেন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

 

১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে সে বছর ২৮ জানুয়ারি অসমাপ্ত অংশ সমাপ্ত করণ কাজের উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বর (২০১৪) মাসে প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে সেতুটির উদ্বোধন করা হবে।’

 

 এখনো চলছে মূল সেতুর কাজ (ছবি : সাকিব)

 

তবে তার সেই ঘোষিত সময় পার হয়ে গেলেও সমাপ্ত হয়নি সেতুর কাজ। সরেজমিন সেতু এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে নির্মাণে কাজে চরম ধীরগতি। হাতে গোনা কিছু সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে চলছে নির্মাণ কাজ। তবে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমন দাবী করলেও এখনো সেখানে ঢালাইয়ের কাজ চলছে। সংযুক্ত সড়ক নির্মাণেও বেশিদূর এগোতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। সময়সীমা শেষ হওয়ার পর সংযোগ সড়ক নির্মাণে সেতুর পশ্চিম প্রান্তে সবে বালু ভরাটের কাজে হাত দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান আলাল অভিযোগ করে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অন্যত্র সেতুর কাজ থাকায় সেপ্টেম্বর মাসের দিকে এখানে কাজ শুরু করে। যে কারণে বিরুলিয়া সেতুর নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি।’

 

এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বাঁশির ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এ পর্যন্ত সেতুর কাজ প্রায় ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বর্ষার কারণে কাজ কিছুটা কম হয়েছে। এখন পুরোদমে কাজ চলবে। পরিকল্পনা বিভাগে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছি আমরা। আশা করছি বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে দিতে পারব।’

 

তবে পুণরায় ছয় মাস সময় বাড়ালেও প্রতিষ্ঠিানটি নির্মাণকাজ শেষ করতে পারবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সেতুর আশপাশ এলাকার বাসীন্দারা।

 

সেতুর সংযুক্ত সড়কে বালু ভরাটের কাজ চলছে (ছবি : সাকিব)

 

এদিকে, বিলম্বে কাজ শুরু করার বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টিকে সমর্থন দিয়েছে ঢাকা সড়ক ও জনপদ বিভাগ। প্রতিষ্ঠানটির উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন রাইজিংবিডিকে জানান, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন যৌক্তিক। এত বড় প্রকল্প নির্মাণে যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে তা সঠিক হয়নি। এ জন্য সময়সীমা বাড়ানোর আবেদনে আমরা সমর্থন দিয়েছি। তবে, ছয় মাসের বদলে ঠিকাদারকে তিন মাস সময় দেওয়া হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে বাকী কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।  

 

 

 

রাইজিংবিডি/সাভার/১৯ জানুয়ারি ২০১৫/সাকিব/সনি     

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়