ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪০, ২৭ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ২১:২৫, ২৭ অক্টোবর ২০২০
বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি

লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের মর্যাদা ছিল না। প্রস্তুতি ম্যাচের আবহে প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক ক্রিকেট। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের জন্য বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ ছিল এক প্রকার ফেরার প্রক্রিয়া। বাকিদের জন্য ছিল মেলে ধরার মঞ্চ। সব মিলিয়ে তিন দলের ৪৫ ক্রিকেটারের লড়াই হয়েছে বেশ জমজমাট।  

প্রায় ৪০ লাখ টাকার প্রাইজমানির টুর্নামেন্টে প্রাপ্তি ছিল অনেক বেশ। অপ্রাপ্তিও রয়েছে। রাইজিংবিডির ক্রীড়া বিভাগের চোখে যেসব প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি ধরা পড়েছে তা তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে।

প্রাপ্তি

ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরা

করোনা প্রাদুর্ভাবের পর ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরা ছিল সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। জৈব সুরক্ষা বলয়ে খেলোয়াড়দের মাঠে আনে বিসিবি। ৪৫ ক্রিকেটারের পাশাপাশি টিম ম্যানেজমেন্ট, অফিসিয়ালদের জৈব সুরক্ষা বলয়ে রেখে পুরো টুর্নামেন্ট আয়োজন করে বোর্ড। লম্বা বিরতির পর বড় পরিসরে টুর্নামেন্ট আয়োজন করার চ্যালেঞ্জ ছিল তাদের। করোনা আক্রান্তের ভয় ছিল প্রতি মুহূর্তে। সব কিছুকে পেছনে ফেলে সফলভাবে এ টুর্নামেন্ট আয়োজন করে বিসিবি। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্ট চলাকালীন তিনবার করোনা পরীক্ষা হয়েছিল অংশগ্রহণকারী সবার। প্রত্যেকে করোনা নেগেটিভ হয়েছিল। সফলভাবে এ টুর্নামেন্ট আয়োজন করায় বিসিবি ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাতে আত্মবিশ্বাসী। নভেম্বর পাঁচ দল নিয়ে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে বিসিবি। জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আতিথেয়তা দিতে চায় দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। 

তরুণদের উজ্জ্বল পারফরম্যান্স

বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি তরুণদের পারফরম্যান্স। আফিফ হোসেন ধ্রুব, তৌহিদ হৃদয়, শেখ মেহেদী হাসান, শরীফুল ইসলাম, রিশাদ হোসেনরা দ্যুতি ছড়িয়েছেন। প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা নজর কেড়েছেন সবার। জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলা আফিফ দ্বিতীয় ম্যাচে প্রায় সেঞ্চুরি পেয়ে গিয়েছিলেন। ৯৮ রানে তার ইনিংসটি শেষ হয় রান আউটে। সব মিলিয়ে ৫ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৫৭ রান। তৌহিদ হৃদয় সমান খেলে তুলেছেন ১২২ রান, প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচে খাদের কিনারা থেকে দলকে তুলে ম্যাচজয়ী ইনিংস উপহার দেন। শেখ মেহেদী হাসান বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও ছিলেন দারুণ। চার ম্যাচে ৩৫.৩৩ গড়ে তুলেছেন ১০২ রান। বাঁহাতি পেসার শরীফুল তিন ম্যাচে ৪.৮০ ইকোনমি রেটে পেয়েছেন ৪ উইকেট। এছাড়া লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন চার ম্যাচে ৪.৪১ ইকোনমিতে নিয়েছেন ৪ উইকেট। 

সরাসরি সম্প্রচার

ঘরোয়া ক্রিকেটে সব সময়ই টিভি সম্প্রচার উপেক্ষিত থাকে। বিসিবির অনীহার পাশাপাশি টেলিভিশনগুলোর অনিচ্ছার কারণে ক্রিকেটপ্রেমীরা পর্দায় ক্রিকেটারদের ম্যাচ দেখতে পারেন না। করোনার কারণে দর্শক প্রবেশের অনুমতি ছিল না। এজন্য ফেসবুক ও ইউটিউবে ম্যাচ সম্প্রচার করে বিসিবি। ৭টি ক্যামেরায় ম্যাচগুলো ধারণ করা হয়। আর ফাইনাল দেখানো হয়েছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে। পাশাপাশি স্থানীয় ক্রুদের নিয়ে প্রোডাকশনে বাড়তি চাকচিক্য না থাকলেও মানসম্পন্ন কাজ হয়েছে। প্রেসিডেন্টস কাপ দিয়ে বিসিবি অন্তত ধারণা পেয়েছে, মানসম্পন্ন প্রচার করা কঠিন কিছু নয়, ব্যয়বহুলও নয়।   

ইরফান শুক্কুর

প্রেসিডন্টস কাপে ব্যাটিংয়ে সবার থেকে বেশি নজর কাড়েন ইরফান শুক্কুর। নাজমুল একাদশের এ ক্রিকেটার ৫ ম্যাচে ৭১.৩৩ গড়ে, ৮৮.০৬ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন ২১৪। সর্বোচ্চ রান ছিল ৭৫ রানের। লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ে নেমে বড় রান করা কঠিন। কিন্তু টপ অর্ডারদের ব্যর্থতায় ইরফান ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বড় রান করে রীতিমত চমকে দিয়েছেন। তার দাপুটে ব্যাটিংয়ে ছড়ায় মুগ্ধতা। উইকেটের চারিদিকে শট খেলার সামর্থ্য, পরিস্থিতি বুঝে ব্যাটিং করা এবং ফিটনেসে ইরফান আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। তার পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়েছেন জাতীয় নির্বাচকরাও। কোচও প্রথমবার তার পারফরম্যান্স দেখে উচ্ছ্বসিত। 

পেসারদের ধারাবাহিকতা

ঘরোয়া ক্রিকেটে সব সময়ই দেখা যায় স্পিনারদের দাপট। কিন্তু বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে পেসাররা এমন পারফর্ম করলেন যে, স্পিনাররা আড়ালে চলে যান। নতুন বলে নিয়মিত উইকেট পেয়েছেন পেসাররা। মধ্য ওভারগুলোতেও তাদের ছিল ধারাবাহিকতা। শেষটাতেও দ্যুতি ছড়ান। ১২ উইকেট নিয়ে সাইফ উদ্দিন ও রুবেল হোসেন ছিলেন শীর্ষে। মাত্র তিন ম্যাচ খেলে ৯ উইকেট শিকার করেছেন তরুণ সুমন খান। এইচপির এ পেসার ফাইনালের ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন। ৫ উইকেট নিয়ে ডানহাতি পেসার নিজেকে প্রথমবার বড় মঞ্চে তুলে ধরেন। এছাড়া মুস্তাফিজুর রহমান, ইবাদত ও আল-আমিন হোসেন ৮টি করে উইকেট পান। পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতায় থাকা তাসকিন পেয়েছেন ৭ উইকেট। 

অপ্রাপ্তি

ব্যাক গিয়ারে ‘তারা’

তরুণরা যেমন ভালো করেছেন ঠিক তেমনই উল্টো পথে হেঁটেছেন জাতীয় দল ও এর বাইরে থাকা একাধিক সিনিয়র ক্রিকেটার। ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল পারেননি প্রত্যাশা পূরণ করতে। ৪ ম্যাচে করেছেন মাত্র ১০১ রান। লিটন কুমার দাশ শেষ ম্যাচে ৬৮ করলেও আগের চার ম্যাচে রান ছিল ৪৩। সৌম্য সরকার সুপার ফ্লপ। ৫ ম্যাচে করেছেন ৫০ রান। এনামুল হক বিজয় ৪ ম্যাচে ৪৫। আর সাব্বির রহমান পাঁচ ম্যাচে রান করেছেন ৩৯। নাজমুল হোসেন শান্ত সমান সংখ্যক খেলে ৫৯ রান করেন। মুমিনুল হক ও মোসাদ্দেক হোসেন চার ম্যাচে ৫৬ ও ৬৩ রান করেছেন। 

চিরাচরিত উইকেট

ব্যাটসম্যানরা রান না পাওয়ার জন্য উইকেটকে দোষারোপ করতে পারেন। করোনাকালে দীর্ঘ বিরতি থাকলেও মিরপুর শের-ই-বাংলার উইকেট ছিল চিরাচরিত- ধীর গতির ও নিচু বাউন্সের। এমন উইকেটে বড় স্কোর হবে না নিশ্চয়ই। তবুও ব্যাটসম্যানদের নিবেদনের ঘাটতি ছিল প্রবল। দৃষ্টিকটু শটে তারা আউট হয়েছেন একাধিকবার। সেগুলো শুধরে নিয়ে চাইলে বড় স্কোর করাও যেত। প্রতিযোগিতায় মাত্র চার ইনিংসে দুইশর বেশি রান হয়েছে। সর্বোচ্চ রান ২৬৪, সর্বনিম্ন ১০৩।  

আড়ালে স্পিনাররা

পেসারদের দাপটে স্পিনাররা চলে গেছেন আড়ালে। তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও দ্যুতি ছড়াতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৬ উইকেট পেয়েছেন নাসুম। তাইজুল পেয়েছেন ৩ উইকেট। মিরাজের পকেটেও গেছে তিন উইকেট। লেগস্পিনারদের এবার খেলানো ছিল বাধ্যতামূলক। রিশাদ হোসেন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট পেয়েছেন। আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ও মিনহাজুল আবেদীন আফ্রিদি কোনও উইকেট পাননি। আফ্রিদি প্রথম ম্যাচ খেলেই ইনজুরিতে ছিটকে যান প্রতিযোগিতা থেকে। 

ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়