ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ফুটবল পায়ে শেকল ভাঙার আনন্দ

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ২৩:৫৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২
ফুটবল পায়ে শেকল ভাঙার আনন্দ

বিজয়ের আনন্দ সবচেয়ে আলাদা। আর তা যদি হয় পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার জয়, শৃঙ্গের চূড়ায় আরোহণ করার, সমাজের টিপ্পনী ধূলোয় উড়িয়ে দেওয়ার, তবে সেই আনন্দ হয়ে উঠে আরও বর্ণিল ও গৌরবময়।

‘পারে না, পারবে না’ বলে মাঠে নামার আগেই চারদেয়ালে আটকে রেখে স্বপ্ন ধুলিসাৎ করার অপচেষ্টা তো জনম জনম ধরেই হয়ে আসছে। কিন্তু একটা দল সেই শেকল ভেঙে আশার সূর্য উড়িয়েছে। ফুটবল পায়ে মুক্তির গান গেয়েছে। ছোট ছোট অর্জনে ভরা শোকেসেও যেন তৃপ্তি খুঁজে পান না তারা।

আরো পড়ুন:

আনন্দ পেটে আসে। কিন্তু গর্বে বুক ফুলে উঠে না! স্বপ্ন যে আরও বড়, আকাশের মতো দিগন্তবিস্তৃত। এবার তাদের আকাশ ছোঁয়ার অপেক্ষা ফুরাল। হিমালয় কন্যার দেশে ফুটবল পায়ে শেকল ভাঙার সেই আলোকবর্তিকারাই উড়ালেন বিজয় নিশান, গাইলেন বিজয়ের গান।

স্বপ্ন রঙিন করে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল জিতেছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। বাংলাদেশের মেয়েরা এখন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা। দশরথ স্টেডিয়ামে যখন পতপত করে উড়লো বাংলাদেশের পতাকা, যখন সাবিনা, কৃষ্ণা, শামসুন্নাহাররা চোখের জলে ভেজালেন সবুজ ঘাস— তখন ৮১৩ কিলোমিটার দূরে দেশে থাকা একঝাক কিশোরী হয়তো বলে উঠেন, ‘আমি-ই হবো সাবিনা।’ ‘আমি-ই কৃষ্ণা।’

সাফে নারীরা এর আগে একবার ফাইনাল ও তিনবার সেমিফাইনালে উঠেছিল। শিরোপায় চুমু খাওয়া হয়নি। এবার নারীরা শিরোপা খরা কাটিয়েছে নেপালকেই ৩-১ গোলে উড়িয়ে। নারীদের এই অর্জন পুরুষদের দেখানো পথেই হেঁটেছে। ১৯৯৯ সালের ৪ অক্টোবর এই দশরথ স্টেডিয়ামে আলফাজ আহমেদের দেওয়া একমাত্র গোলে নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশ পুরুষ দল প্রথম সাফ ফুটবল জিতেছিল। ২৩ বছর পর নারীরা একই ভেন্যুতে, একই প্রতিপক্ষকে হারিয়ে অমরত্বের স্বীকৃতি পেয়ে গেলেন।

নারীদের এই শিরোপা শুধুই মাঠের সবুজ গালিচায় রঙিন ফুটবলের সৌন্দর্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এ শিরোপা কঠিন জীবন সংগ্রামের। এই শিরোপা শত বাধা পেরিয়ে মাঠে নামার নানা জানা-অজানা গল্পের। এ জয় সাহসী নারীদের সমাজ পাল্টে দেওয়ার মনোভাবের।

সোমবারের ফাইনালের আগে দলের অন্যতম তারকা সানজিদার ফেসবুক পোস্ট ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুঁতে। যেখানে সানজিদা নিজের সংগ্রাম, ত্যাগ, অর্জন, বাফুফের দেওয়া সুযোগ-সুবিধাসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন। সানজিদা বলেছিলেন, `যারা আমাদের এই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে আছেন, সেই সকল স্বপ্নসারথিদের জন্য এটি আমরা জিততে চাই। সানজিদা কথা রেখেছেন। কথা রেখেছেন সাবিনা। সঙ্গে বাকিরাও।

তারা দেখিয়ে দিয়েছেন, লক্ষ্যে পৌঁছানোর অদম্য জেদ ও স্বপ্ন পূরণের ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকলে শেকলভাঙা সম্ভব। ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে জয়ের সূর্য উড়িয়ে হিমালয়ের বুকে নতুন এক বাংলাদেশকে তারা চিনিয়েছেন। যারা শুধু নিজেরা জিততে জানে না, অন্যকেও স্বপ্ন দেখাতে জানে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়