ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘এতো বড় একটা টুর্নামেন্ট হচ্ছে অথচ থার্ড আম্পায়ার নেই!’

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১০, ১৫ মে ২০২৩  
‘এতো বড় একটা টুর্নামেন্ট হচ্ছে অথচ থার্ড আম্পায়ার নেই!’

ব‌্যাটিংয়ে রান, বল হাতে নিলেই উইকেট। সদ‌্য শেষ হওয়া ওয়ালটন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে চিরাগ জানির জন‌্য এ যেন নিয়মিত ঘটনা। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে ঢাকা লিগ খেলতে এসে ভারতীয় এ ক্রিকেটার পেয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার। ব‌্যাটিংয়ে ৬৬৯ রান, বোলিংয়ে ২৪ উইকেট নিয়ে নিজের সামর্থ‌্যের প্রমাণ দিয়েছেন প্রতি ম‌্যাচেই। পেস অলরাউন্ডার ভারতে ফেরার আগে মুখোমুখি হয়েছিলেন রাইজিংবিডির ক্রীড়া প্রতিবেদক ইয়াসিন হাসানের। ঢাকা লিগ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন দুজন।

এবারের ঢাকা লিগের সফর কেমন গেল?
চিরাগ জানি:
ঢাকায় এটা আমার দ্বিতীয় সফর। সময়টা উপভোগ করেছি বেশ। পারফরম‌্যান্স ভালো হওয়াতে আসলে ভালো সময় কেটেছে। ম‌্যান অব দ‌্য সিরিজও হয়েছি। এজন‌্য যারপরনাই খুশি। নিজের পারফরম‌্যান্সে তো খুশি, পাশাপাশি দলও ভালো করেছে। একটা-দুইটা ম‌্যাচ আমাদের পক্ষে আসতে পারত। সেগুলো হলে আমরা চ‌্যাম্পিয়নও হতে পারতাম। হ‌্যাঁ, সব মিলিয়ে ভালো সময় কেটেছে বলবো।

আরো পড়ুন:

মানুষ বলাবলি করছে, আপনি ঢাকা লিগের সেরা বিদেশি ক্রিকেটার। আপনিও কি এই মন্তব‌্যে বিশ্বাস করেন?
চিরাগ জানি:
এটা নিশ্চিতভাবেই আমার জন‌্য সেরা কম্প্লিমেন্ট। এর চেয়ে বেশি কিছু কী চাইতে পারি? এমন না যে আমি-ই কেবল পারফর্ম করেছি। পারভেজ ভাইও (শেখ জামালের পারভেজ রসুল) ভালো করেছে। ব‌্যাটিংয়ে আমার রানটাই বড় পার্থক‌্য গড়ে দিয়েছে বলবো। নিজের পারফরম‌্যান্সে গর্বিত।

নিজের সাফল‌্যের পেছনের রেসিপি কি ছিল?
চিরাগ জানি:
আমি দশ বছর হলো ক্রিকেট খেলছি। শুরু থেকেই আমার মাথায় ছিল আমি যেখানেই খেলি নিজের ছাপ যেন রাখতে পারি। এজন‌্য প্রস্তুতি সেভাবেই নেই। গত বছর ঢাকা লিগ ছিল আমার প্রথম সফর। এখানের উইকেট নিয়ে আমি কিছুটা পড়াশোনা করেছি। ক্রিকেটারদের সম্পর্কে জেনেছি। তাতে হয়েছে কি, আমার বোলিং করতে সুবিধা হয়েছে। দুইবারই অধিনায়ক হিসেবে পেয়েছিলাম মাশরাফি ভাইকে। এখানে সে তো কিংবদন্তি। আমাকে পরিষ্কার ধারণা দিয়েছে এখানে সফল হওয়ার জন‌্য কী করা লাগবে। আপনি দেখবেন, আমার বোলিংয়ে কিন্তু গতি নেই। কিন্তু বৈচিত্র‌্য আছে। এটা এখানে মানানসই। ব‌্যাটিংয়েও তাই। লম্বা সময় ক্রিজে থাকলে এখানে রান পাবেনই। সফল হওয়ার জন‌্য এখানে প্রক্রিয়া স্থির থাকতে হয়। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিজের ম‌্যাচ পরিকল্পনা সাজাতে হয়। এসব জিনিস যখন সব নিজের পক্ষে আসে তখন আপনা আপনি আপনি সফল হবেন। 

ব‌্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগ মিলিয়ে আপনি কমপ্লিট প‌্যাকেজ। ঢাকা লিগে এর আগেও অনেক অলরাউন্ডার খেলেছেন। কিন্তু মনে হচ্ছে আপনার চেয়ে সফল কেউ হননি। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
চিরাগ জানি:
মন্তব‌্যের জন‌্য ধন‌্যবাদ। তবে আমি বাকিদের কথা বলতে পারব না। তবে অনেক ভারতীয় ক্রিকেটার এখানে খেলে গিয়েছে। আমি নিজ শহরেও ঢাকা লিগের নাম শুনেছি। যেটা হয়েছে, আমি পুরো মৌসুমের জন‌্য এসেছি। এক-দুই ম‌্যাচ বা চার-পাঁচটা ম‌্যাচ খেলেই চলে যাবো এমনটা নয়। লম্বা সময়ের জন‌্য এসেছি পারফর্ম করেছি বলে সবার চোখে পড়ছে। এজন‌্য হাইলাইট হচ্ছে বেশি। তবে আমি নিশ্চিত বাকিরাও দলকে একইভাবে সার্ভিস দিয়েছে। যারা আগে খেলেছেন তারাও একই কাজ করেছেন। আমার ম‌্যানেজমেন্টও খুশি। এটা বড় বিষয়। আশা করছি আগামী বছরও রূপগঞ্জ আমাকে খেলতে ডাকবে। 

এখানের উইকেট আর খেলার পরিবেশ নিয়ে কিছু বলবেন?
চিরাগ জানি:
এখানের উইকেট ভালো। শেষবার যখন খেলেছিলাম তার চেয়ে ভালো। পেস বোলারদের জন‌্য তেমন সহায়তা নেই। তবে ব‌্যাটসম‌্যানরা আরামে খেলতে পারে। এটা পেস বোলারদের চ‌্যালেঞ্জও। বৈচিত্র‌্য এনে সফল হওয়া। এছাড়া অনেক গরম। অসহনীয় গরম। খেলার বাইরে তো আমি হোটেল থেকে তেমন বেরও হইনি। তবে খেলার পরিবেশ উন্নতির জন‌্য একটা জিনিস যোগ করতে হবে।

কোন জিনিসটা?
চিরাগ জানি:
থার্ড অ‌্যাম্পায়ার। এতো বড় একটা টুর্নামেন্ট হচ্ছে অথচ থার্ড আম্পায়ার নেই। স্টাম্পিং ও রান আউটের নির্ভুল সিদ্ধান্তের জন‌্য থার্ড আম্পায়ারের প্রয়োজন আমি অনুভব করছি। এতে নির্ভরযোগ‌্যতা আরও বাড়বে।

ভারতে তো অনেক টুর্নামেন্ট হয়। ঢাকা লিগের সঙ্গে কোনো প্রতিযোগিতার কী তুলনা চলে?
চিরাগ জানি:
ভারতে অনেক টুর্নামেন্ট হয়। অনেক খেলোয়াড় খেলে। শুধু রঞ্জি ট্রফিতেই ৩৮টি দল খেলে। এরপর বিজয় হাজারে ট্রফি, সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফি, আইপিএলও হচ্ছে। যেটা সত‌্য কথা, ওখানের খেলার মান, সুযোগ সুবিধা অনেক উচুঁতে।

বিপিএল খেলার আগ্রহ আছে?
চিরাগ জানি:
বিপিএল খেলার আগ্রহ তো অবশ‌্যই আছে। কিন্তু এখন আমি বিসিসিআইয়ের চুক্তিভুক্ত খেলোয়াড়। যখন আমি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবো তখন খেলার সুযোগ থাকবে।

ঢাকা থেকে পরিবারের জন‌্য কেনাকাটা করেছেন নাকি?
চিরাগ জানি:
হ‌্যাঁ, বেশ কাপড়-চোপড় কিনেছি। পরিবারের মেয়েদের জন‌্য শাড়ী নিয়েছি। বাচ্চার জন‌্য বেশ সুন্দর কিছু জামা কিনেছি। এখানে পণ‌্যের গুনগত মান ভালো। সঙ্গে সস্তায় পাওয়া যায়। ব‌্যাগ ভর্তি শপিং করেছি।

লম্বা সময় ছিলেন। খাওয়া-দাওয়া কেমন করেছেন?
চিরাগ জানি:
এখানে নন ভেজিটেরিয়ান খাওয়া প্রচুর পাওয়া যায়। কিন্তু ভেজিটেরিয়ান খাওয়ার চাহিদা কম। আমি ভেজিটেরিয়ান হওয়ায় কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। তবুও কাটিয়ে দিলাম তো দেড় মাস।

কোনো ক্রিকেটারকে কী আপনার মনে ধরেছে? শুধুমাত্র আপনার দলেই না, প্রতিপক্ষ দলের কাউকে?
চিরাগ জানি:
আমাদের দলের ইমন খুব আকর্ষণীয়। পাওয়ারফুল হিটার। তার ভবিষ‌্যৎ আছে। নিজেকে স্থির রাখতে পারলে ভালো অবস্থানে যেতে পারবে। এছাড়া বেশ কিছু ভালো বোলারও দেখেছি। তাদের নাম মনে আসছে না। প্রত‌্যেকেই তারা ভালো ছিল।

পঞ্চাশ ওভারের এই প্রতিযোগিতা আমাদের দেশে একটিই হয়। বছরে তাও একবার। কোথায় উন্নতির জায়গা আছে?   
চিরাগ জানি:
ঢাকা লিগের ঐতিহ‌্য সম্পর্কে আমি অবগত। অনেক পুরোনো ও মর্যাদার প্রতিযোগিতা। এখন একজন বিদেশি ক্রিকেটার খেলার সুযোগ পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক তারকা মানের খেলোয়াড়রাও আসছে। এটা প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক প্রতিযোগিতা। তরুণদের জন‌্য বিশাল প্লাটফর্ম। এখানে যদি কেউ পারফর্ম করে তার বিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। আগেও বলেছি, থার্ড আম্পায়ার যোগ করতে পারলে ভালো হবে। তাতে প্রতিযোগিতার নির্ভরযোগ‌্যতা আরও বাড়বে।

মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে কিছু বলবেন?
চিরাগ জানি:
লিভিং লিজেন্ড। খেলা নিয়ে এতো পরিস্কার ধারণা খুব কম জনের দেখেছি। আমি তাকে তার আর্লি স্টেজে পেলে আরও ভালো হতো। মাথা পরিষ্কার। আমরা খেলছি, মজা করছি। তার ব‌্যবহার অনেকটা বড় ভাইয়ের মতো। ড্রেসিংরুমে মনে হবে না যে সে অধিনায়ক। এটা তার দারুণ গুণ। আমরা জিতছি-হারছি কিন্তু একটা পরিবারের মতো ছিলাম। দুই বছর হলো তার সঙ্গে খেলছি। কথা বললে মনে হয়, আমাদের পরিচয় দীর্ঘ সময়ের। এভাবে সে আমাকে আপন করে নিয়েছেন। এখানে সাব্বির বা ইরফানের সঙ্গে যেভাবে মিশছে, আমার সঙ্গেও তাই। মনে হয়নি যে, আমি আরেকটি দেশ থেকে এসেছি। লম্বা সময় তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছে। কথা বললে যেটা হয়, তাদের অভিজ্ঞতাগুলো নেওয়া যায়।

একেবারে শেষ পশ্ন, ঢাকা লিগকে দশে কত দেবেন?
চিরাগ জানি:
দশে আট তো অবশ‌্যই পাবে। সাড়ে আটও দিতে পারি। আচ্ছা সাড়ে আট-ই।

ঢাকা/আমিনুল

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়