ঢাকা     শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

এশিয়ান গেমস হকিতে সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত গোলরক্ষক নয়ন

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩  
এশিয়ান গেমস হকিতে সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত গোলরক্ষক নয়ন

দলের সবচেয়ে জুনিয়র গোলরক্ষক ছিলেন তিনিই। অথচ এশিয়ান গেমসের মতো বড় আসরে ঠিকই জায়গা করে নিলেন হকির উদীয়মান তারকা মো. নুরুজ্জামান নয়ন। প্রাথমিক দলে (মোট ৪০ জন খেলোয়াড়) দেশসেরা গোলরক্ষক অসীম গোপ, জাতীয় দলের আরেক পরিচিত মুখ আবু সাঈদ নিপ্পন, এমনকি অভিজ্ঞ সাইজুদ্দিনও ছিলেন। তাদের টপকে ১৮ জনের চূড়ান্ত দলে জায়গা করে নিলেন দিনাজপুর জেলার সদর উপজেলার মুন্সিপাড়ার ছেলে নয়ন।

আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর চীনের হ্যাংজু শহরে অনুষ্ঠিত হবে ১৯তম এশিয়ান গেমস। আসরে অংশ নিতে ১৯ সেপ্টেম্বর চীনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বে বাংলাদেশ জাতীয় হকি দল।

খুব বেশিদিন হয়নি হকি অঙ্গনে পা রেখেছেন বিকেএসপির সাবেক শিক্ষার্থী নয়ন অথচ এর মধ্যেই জীবনের অনেকগুলো অধরা স্বপ্নপূরণ করে ফেলেছেন। ২০১৬ সালে সাভারের বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে মনে মনে পণ করেছিলেন একদিন লাল-সবুজ জার্সিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এশিয়ান গেমসে সুযোগ পাওয়ার মধ্য দিয়ে সেই স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে।

নয়ন আরও একটা স্বপ্নের বীজ অন্তরে গেঁথে রেখেছিলেন। দেশের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিন ভর্তি হবেন। নয়নের সেই স্বপ্নও পূরণ হয়েছে। চারুকলার ছাত্র হিসেবে শিগগিরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করতে যাচ্ছেন।

জীবনের বড় দুটি স্বপ্ন পূরণ হওয়াতে দারুণ খুশি নয়ন। এ ব্যাপারে জাতীয় দলের তরুণ গোলরক্ষক বলেন, ‘জাতীয় দলে খেলার সৌভাগ্য সকলের হয় না। আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান সেই সুযোগ পেয়েছি। তাও এশিয়ান গেমসের মতো বড় মঞ্চে। কঠোর পরিশ্রমই আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছে। ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল একদিন লাল-সবুজ জার্সিতে জাতীয় দলে খেলব। আল্লাহ পাকের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আরও কৃতজ্ঞতা আমাদের বিকেএসপির সমস্ত কোচ, আমাদের ফেডারেশনের কর্মকর্তা বিশেষ করে আমাদের সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক সাঈদ ভাই, রানা ভাই, কোচ আশিক স্যার, টিটু স্যার, বাপ্পি স্যারসহ আমাদের ফেডারেশনের সকল কর্মকর্তাদের। সবাই আমার ওপর আস্থা রেখে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি সেই আস্থা এবং বিশ্বাসের মর্যাদা রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করব।’

অনেক আনন্দের মাঝেও প্রিয়জন হারানোর কষ্ট নয়নের। গত বছর প্রিয় নানাজানকে হারিয়েছেন। নানাই ছিলেন নয়নের জীবনের সব কিছু। বাবা, মা, বন্ধু- সব কিছুর মিশ্রণ ছিলেন প্রিয় নানাজান। আজকে নয়ন হয়ে ওঠার পেছনে সমস্ত অবদান নানার।

এ ব্যাপারে নয়ন বলেন, ‘নানাজান বেঁচে থাকলে আজ অনেক খুশি হতেন। আমার নানা সব সময় বলতেন তোমাকে একদিন জাতীয় দলে খেলতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিদ্যাপীঠে পড়তে হবে। নানাজান আমার মনের মধ্যে যে দুটি স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়েছিলেন সেই দুটি স্বপ্নই আজ পূরণ হয়েছে। অথচ নানাজান আমার সেই সাফল্য দেখে যেতে পারলেন না। আমার জীবনে নানা বাড়ির অবদান বলে বোঝাতে পারব না। আমি বড়ই হয়েছি নানা বাড়িতে। আমার বাবা অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, মা গৃহিনী। আমার আরও তিনজন ছোট ভাই-বোন আছে। তবে নানা, নানী, মামারাই আমার জীবনের সব কিছু।’

নয়নের আপন মামা মাসুম একজন স্বনামধন্য হকি খেলোয়াড়। প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী, মোহামেডানের মতো বড় দলগুলোতে খেলেছেন। মামার হাত ধরেই মূলত ছোট্ট নয়নের হকিতে পা রাখা।

সালটা ২০১৫। ওই সময় একজন স্কেটার হিসেবে মোটামুটি নামডাক ছড়িয়ে পড়েছিল নয়নের। বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব-১৬ এবং অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেও ছিলেন। স্কেটিংয়ের নেশায় বুঁদ ছিলেন। কিন্তু নয়নের মামা মাসুম তা হতে দেননি। স্কেটিংয়ের পরিবর্তে নয়নের হাতে তুলে দেন হকি স্টিক। হকিতে ভবিষ্যৎ ভালো এমনটা বলে ভাগিনাকে স্কেটিং থেকে ফিরিয়ে হকিতে নিয়ে আসেন। নয়নকে হকির প্রাথমিক জ্ঞান অ আ ক খ হাতে-কলমে শেখান মাসুম। এরপর ২০১৬ সালে দিনাজপুর থেকে নানার হাত ধরে ঢাকার সাভার বিকেএসপিতে এসে ট্রায়ালে টিকে হকিতে ভর্তি হন।

বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তরতর করে শুধু এগিয়েছে নয়নের উন্নতির গ্রাফ। ছাত্র থাকাকালীন সাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হয়ে বিজয় দিবস, বিকেএসপি কাপে অংশ নেন। ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগ হকিতে সুযোগ মেলে তার। প্রথম সুযোগেই জায়গা করে নেন আবাহনীর মতো চ্যাম্পিয়ন টিমে। ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হকিতে খেলেন মেট্রো এক্সপ্রেস বরিশালের জার্সিতে।

তবে ২০২৩ সালটা নয়নের জীবনে সবচেয়ে আশীর্বাদপুষ্ট বছর। এ বছরই এএইচএফ কাপে হকিতে (ওমানে অনুষ্ঠিত) চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন নয়নরা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে অনূর্ধ্ব-২১ এশিয়া কাপে খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ওমানের সেই টুর্নামেন্টেও দুর্দান্ত খেলেন নয়ন।

নয়নের এখন একটাই লক্ষ্য দীর্ঘ সময় জাতীয় দলকে সার্ভিস দেয়া। বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের মঞ্চে নিয়ে যাওয়া।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়