আড়াল থেকে আরো অতলে

তারা ছিলেন পোস্টারবয়। পোস্টারবয় আছেন। সামনেও থাকবেন। মানদণ্ড যদি হয় শুধু-ই ক্রিকেট, তাহলে সেই মানচিত্রে তারা অবিসংবাদিত সেরা। সমকাল পেরিয়ে মহাকালেও তারা দেদীপ্যমান হবেন। কিন্তু ক্রিকেটের জোয়ারের সঙ্গে যখন রাজনৈতিক মাঠে বিচরণ শুরু করলেন তখন ব্যাকগিয়ারে চলতে শুরু হলো তাদের সমর্থনের গাড়ি। ভাঙতে থাকলে সমর্থকগোষ্ঠী।
পরিস্থিতি এখন এমন অবস্থানে যে, ক্রিকেটার থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠায় তাদের ভাগ্য আকাশে কালো মেঘ ছেয়ে আছে। সেটা এতোটাই কুণ্ডুলী পাকিয়েছে যে, তাদের ক্রিকেটাকাশে সামান্য আলোকরশ্মি উঁকি মারার সম্ভাবনাও নেই।
রাজনৈতিক পটভূমির পরিবর্তন এবং দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে দেশের ক্রিকেট থেকে আড়ালে ছিলেন দুই ক্রিকেটার ও সাবেক সংসদ সদস্য; একজন মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং অন্যজন সাকিব আল হাসান। এখন আড়াল থেকে একেবারেই অতলে চলে গেছেন; এতোটাই যে, তাদের নিয়ে আলোচনটাও বন্ধ!
এই পট পরিবর্তনের খেলা ঘটে গেছে ২০২৪ সালেই। এ বছরই রাজনৈতিক পতন হয়েছে মাশরাফি ও সাবিকের। সেই ধাক্কায় তাদের নিয়ে কোনো খেলোয়াড়ি সমীকরণও আর মিলছে না।
এই যেমন ধরুন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। এগারতম আসরের পর্দা উঠছে ৩০ ডিসেম্বর। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছেন, আগের সব আসরের আয়োজন এবার ছাড়িয়ে যাবে। অথচ ফারুক আহমেদের প্রথম মেগা আসরে নেই বিপিএলের দুই আইকন ও চিরাচরিত মুখ মাশরাফি-সাকিব। তাদের রাখার নিশ্চয়তা অবশ্য ফারুক আহমেদেরও নেই। তার যতটুকু পারার ছিল, প্লেয়ার্স ড্রাফটে নাম উঠানো, সেটা তিনি করেছেন।
সাকিব মাস দেড়েক আগে প্লেয়ার্স ড্রাফটের আগেই চিটাগং কিংসে নাম লিখিয়েছিলেন। মাশরাফিকে ড্রাফট থেকে দলে নেয় সিলেট স্ট্রাইকার্স। দল যখন পেয়েছেন তখন ২২ গজে দেখা যাবে- এমন ভাবনা কাজ করছিল। কিন্তু সময় যতোই গড়িয়েছে, তাদের খেলার প্রদীপটাও নিভু নিভু করছিল। এখন? জ্বলে ওঠার আগেই নিভে গেল আশার প্রদীপ! মাশরাফি ও সাকিবকে ছাড়াই চলবে বিপিএলের এগারতম আসর।
বিপিএলে মাশরাফির কীর্তির শেষ নেই। আগের দশ আসরের চারটিতেই পৃথক তিন দলকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসকে দুইবার। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও রংপুর রাইডার্সকে একবার করে শিরোপার স্বাদ দিয়েছেন। মাশরাফির হাত ধরে সিলেট স্ট্রাইকার্সও শিরোপার অপেক্ষা ঘোচাতে পারত। কিন্তু সেবার ভাগ্য পাশে ছিল না বলে রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
শেষ আসরে সিলেটের হয়ে খেললেও আশানুরূপ পারফরম্যান্স করতে পারেননি বলে নিজ থেকে সরে গিয়েছিলেন মাঝপথে। এবার ২২ গজে ফেরার তীব্র ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাকে আড়ালে থাকতে বাধ্য করেছে।
মাশরাফিকে শুধু খেলোয়াড় নয়, মেন্টার হিসেবেও চেয়েছিল সিলেট। সেটাও হচ্ছে না। অথচ মাশরাফি বিপিএলের সফলতম অধিনায়ক। ১০৫ ম্যাচে ৬৪ জয় পৃথক পাঁচ দলের হয়ে। জৌলুসপূর্ণ আসরে এবার দেখা যাবে না ম্যাজিশিয়ান মাশরাফিকে। ৭ দশমিক ০২ ইকোনমিতে ১১০ ম্যাচে ৯৮ উইকেট তার বোলিং সক্ষমতার কথাই বলছে। আর ১২৫ দশমিক ৪১ স্ট্রাইক রেটে ৬০২ রান করে ব্যাটিং অবদানটাও ভালোভাবেই রেখে গেছেন।
সাকিবেরও তা-ই। বিপিএলের সাবেক চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক। ব্যাটিং-বোলিংয়ে সবচেয়ে সফল। ১১৩ ম্যাচে উইকেট ১৪৯টি। সমান ম্যাচে রান ২৩৯৭। দশ আসরের চারটিতে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। বিপিএলের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়কে ছাড়াই ছুটবে চার-ছক্কা আর উইকেটের ফুলঝুরি।
তাদের না থাকা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক যুক্তি আছে। অনেক তর্ক আছে। সেসব ছাপিয়ে একটি দৈব সত্যও রয়েছে, অতলে হারানো মাশরাফি-সাকিবের অনুপস্থিতি অনেকটাই ধূসর করে রাখবে বিপিএল!
ঢাকা/ইয়াসিন/রাসেল