কার্ডিফের সুখস্মৃতি নিয়ে বাঁচা মরার লড়াইয়ে বাংলাদেশ
নাভিদ হাসান || রাইজিংবিডি.কম
আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আজ সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) প্রথমবারের মতো বল গড়াতে যাচ্ছে রাওয়ালপিন্ডিতে। দুপুর তিনটায় সেই ম্যাচে উড়ন্ত নিউ জিল্যান্ডের মুখোমুখি বাংলাদেশ। টাইগারদের সামনে অবশ্য খুব সোজা হিসেব- ‘মারো অথবা মরো’। আজ হারলেই টুর্নামেন্ট থেকে কাটা পড়বে বাংলাদেশ। কেবল মাত্র জয়ই পারবে নাজমুল হোসেন শান্ত বাহিনীকে শেষ চারের রেসে টিকিয়ে রাখতে।
শক্তিমত্তার বিচারে প্রতিপক্ষ নিউ জিল্যান্ড আছে বেশ এগিয়ে। দারুণ ফর্মে থাকা কিউইরাই এখন পর্যন্ত শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদার। ত্রিদেশীয় সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে শিরোপা জিতেছিল তারা। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম ম্যাচেও স্বাগতিকদের বিপক্ষে উড়ন্ত সূচনা করেছে মিচেল স্যান্টনারের দল।
কন্ডিশন বিবেচনায় স্বাগতিকদের পর সবচেয়ে এগিয়ে নিউ জিল্যান্ডই। পাকিস্তানে দুপুরে কড়া রোদের পর সন্ধ্যায় হানা দেয় ঠান্ডা ও শিশির। প্রায় এক মাস ধরে সেই কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। অন্যদিকে বাংলাদেশ কেবল দুদিন পেল টেনেটুনে।
অন্যদিকে আসরের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হেরে কোণঠাসা বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের চারজনই দুই অংকের রান ছুঁতে ব্যর্থ হন; তিনজন তো রানের খাতা খুলার আগেই সাজঘরে ফেরেন। তবে এত কিছুর পরও আমূলে বদলে ফেলার সুযোগ নেই একাদশ।
রোহিত-কোহলিদের বিপক্ষে চোটের কারণে খেলতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ওয়ানডেতে দারুণ ফর্মে আছেন এই লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান। শেষ চারটি ইনিংস যথাক্রমে ৯৮, ৫০*, ৬২ এবং ৮৪*। তাই ফিট থাকলে এই ম্যাচে রিয়াদের দলে ঢুকাটা নিশ্চিত। তবে সেটা কার জায়গায় তা নিয়ে আছে ধোঁয়াশা। বাস্তবতার হিসেবে দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম আছেন সম্পূর্ণ অফ ফর্মে, তার বদলি হিসেবেই রিয়াদ দলে আসাটা যুক্তিসঙ্গত। তবে টিম ম্যানেজম্যান্ট হয়তো সেই সাহসী সিদ্ধান্তের পথে হাঁটবে না। প্রথম ম্যাচে ওপেনিংয়ে ব্যর্থ সৌম্য সরকারকেই বেঞ্চে বসাবে। অথচ নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সৌম্যের অতীত পারফরম্যান্স বেশ আশাজাগানিয়া।
এই ম্যাচে নাহিদ রানা দলে ঢুকবেন তা এক প্রকার নিশ্চিত। তবে সেটা মোস্তাফিজুর রহমানের বদলি হিসেবে হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত। অফ ফর্মে থাকা ফিজ প্রথম ম্যাচে দুবাইয়ের ধীর গতির উইকেটেই কার্যকরী ছিলেন না। তাই রাওয়ালপিন্ডির ব্যাটিং স্বর্গে ‘কাটার মাস্টারে’র কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করাটা বোকামি। এদিকে আরেক পেজার তানজিম হাসান সাকিবও ভারতের বিপক্ষে ব্যর্থ ছিলেন। তবে তার পেছনে একটা কারণও ছিল। সুইং স্পেশালিস্ট সাকিবকে থার্ড পেসার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল সে ম্যাচে। সব বিবেচনায় রাওয়ালপিন্ডিতে সাকিবের একাদশে টিকে যাওয়াটা যুক্তিসঙ্গত। তবে এখানেও টিম ম্যানেজম্যান্ট সাহস দেখিয়ে মোস্তাফিজকে ড্রপ করতে পারবেন কিনা সেটা দেখার বিষয়।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে এক্স ফেক্টর হতে পারেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। কিউই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান টম ল্যাথাম দারুণ সুইপ খেলেন। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই পেয়েছিলেন শতক। তবে রিশাদ আগের ম্যাচে অক্ষর প্যাটেলকে ওভার সিম এবং স্ট্রেট সিমের মিশেলে যেভাবে ঘোল খাইয়েছেন, তা এক কথায় দারুণ। একই কৌশল লাথামের বিপক্ষেও কার্যকরী হতে পারে।
এদিকে নিউজিল্যান্ড দল আছে মধুর সমস্যায়। তাদের অলরাউন্ডার রাচীন রাবীন্দ্র ফিট হয়েছেন। তবে এই বাঁহাতি ওপেনারকে একাদশে ফিরাতে গেলে বাদ পড়বেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান উইল ইয়ং অথবা কিউইদের শেষ দুই বছরের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান ডেভন কনওয়ে। এই দিকটা ছাড়া ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে দারুণ ছন্দে থাকা নিউ জিল্যান্ডের অন্য চাপ নেই বাংলাদেশের বিপক্ষে।
নিকট অতীত বলছে, রাওয়ালপিন্ডির এই মাঠে তিনশর বেশি রানও যে নিরাপদ নয়। সবশেষ নিউ জিল্যান্ডেরই ছোড়া ৩৩৭ এবং ২৮৯ রানের চ্যালেঞ্জ হেসে খেলেই জিতেছিল পাকিস্তান। তবে এই জায়গাতে কিউদের ঠিক বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। গত বছর (২০২৪) এই মাঠেই পাকিস্তানকে টেস্টে দুই ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। তাছাড়া বাংলাদেশের তিনশ রানের ইনিংস খেলা বা তাড়া করার যোগ্যতা আছে। সবশেষ ৫ ইনিংসের ৩টিতে টাইগাররা তিনশর বেশি রান করেছে।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৪৫ ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে কিউইদের ৩৩টি জয়ের বিপরীতে টাইগারদের জয় ১১ ম্যাচে। অন্যদিকে শান্তরা ২০১৫ সালের পর একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই সবচেয়ে বেশি (২১টি) ওয়ানডে খেলেছে। যার মাঝে ১৭টি জিতে বরাবরের মতো এগিয়ে আছে কিউইরা, অন্যদিকে টাইগারদের জয় ৩টিতে।
এখন পর্যন্ত এই দুই দল চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে মুখোমুখি হয়েছিল দুবার। যার সবশেষটি বাংলাদেশ জিতেছিল। কার্ডিফে ২০১৭ সালের সেই ম্যাচে সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অনদব্য ব্যাটিংয়ে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশে। ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর, সাকিব-রিয়াদ ২২৪ রানের জুটি গড়ে জিতিয়েছিলেন দলকে। সোফিয়া গার্ডেনের সেই সুখস্মৃতি নিয়েই আজকের ম্যাচে টসে নামবেন টাইগার অধিনায়ক শান্ত।
ঢাকা/নাভিদ