স্টোকসের হাসি, জাদেজার হৃদয় জয়
বেন স্টোকসকে চার মেরে ফিফটি ছুঁয়ে ফেললেন রবীন্দ্রর জাদেজা। মাইলফলক উদযাপনে জাদেজা কার্পণ্য করেন না। কিন্তু আজকে লর্ডসে জাদেজা নিরুত্তাপ। চুপচাপ, অপেক্ষায় আরো বড় কিছুর।
ম্যানচেস্টারে ঊনিশ বিশ্বকাপের সেই দুদিনের সেমিফাইনাল মনে আছে? ভারত-নিউ জিল্যান্ড সেমিফাইনাল প্রথম দিন বৃষ্টিতে পণ্ড। দ্বিতীয় দিন একই জায়গা থেকে ম্যাচ শুরু। অদ্ভুত বিশ্বকাপের আরেকটি বিরল ঘটনা।
সতীর্থদের আসা-যাওয়া মিছিল থামিয়ে সেদিন একপ্রান্তে নিউ জিল্যান্ডের বোলারদের চোখ রাঙানি দিচ্ছিলেন জাদেজা একাই। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর ব্যাট তরবারির মতো ঘুরাচ্ছিলেন। তার সিগনেচার উদযাপন। ড্রেসিংরুমে তখন কারো মুখেই তেমন আশা নেই। বিরাট, রোহিত, হার্দিকদের মুখ ম্লান। পরাজয় নিশ্চিত ভেবেই বসে আছেন তারা।
জাদেজা দূর থেকেও তা দেখতে পেয়েছিলেন। ভালো না লাগায় হাত উচিঁয়ে ইশারা করেছিলেন...কী হলো? আমি আছি না? বাচনভঙ্গি এমনই ছিল। কিন্তু ভাগ্যদেবী সেদিন তার পক্ষে ছিল না। ম্যানচেস্টারে মাহেন্দ্র সিং ধোনি ধীর গতিতে না খেললে কিংবা পরবর্তীতে অসময়ে জাদেজা আউট না হলে অমরত্বের স্বীকৃতি পেয়ে যেতেন তিনি।
গত কালকের লর্ডস সেই আক্ষেপ ঘুচানোর পথেই ছিল। এবার রঙিন পোশাকের পরিবর্তে মর্যাদার সাদা পোশাকের লড়াই। একটু একটু করে জাদেজা সেই পথেই যাচ্ছিলেন। জানতেন লক্ষ্যে পৌঁছতে হলো একচুলও মনোবল নষ্ট করা যাবে না। মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে। দাঁতে দাঁত কামড়ে টিকে থাকতে হবে। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ব্যাটিং করতে হবে।
জাদেজা করে দেখালেন। পান্ত, রাহুল, ওয়াসিংটন, নীতিশরা যা করতে পারেননি তা জাদেজা একাই করলেন। ফিফটি করলেন। উযদাপন জমিয়ে রাখলেন। ১৯৩ রানের লক্ষ্য ছুঁয়েই হয়তো ক্রিকেটের জন্মভূমিতে তার নবজাগরণ হবে। কিন্তু এবারের এপিটাফও নিজে লিখতে পারলেন না।
শেষটা হতাশায় মোড়ানো। রোমাঞ্চে ছড়ানো। স্পিনার শোয়েব বশিরের বল ঠিকঠাক ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ। বল ড্রপ করে ব্যাকস্পিন করলো। সিরাজের কোনো খেয়ালই নেই বল কোথায়। এরপর দুইটি ড্রপ। এরপর গড়িয়ে স্টাম্পে...।
টেস্টের পঞ্চম দিনে লর্ডসের গ্যালারি ভরেনি। কিন্তু হুট করেই মনে হলো পুরো স্টেডিয়াম জেগে উঠেছে। সিরাজ আউট। ভারতের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেল ২২ রানে। সিরাজের চারিপাশে তখন পাঁচ ফিল্ডারের উল্লাস। বশিরের পেছনে একটু পরই ছুটলেন।
ক্রিজের অপরপ্রান্তে জাদেজা দাঁড়িয়ে। বাঁহাতে ব্যাট। ডানহাতে গ্লাভসজোড়া নিয়ে হেলমেটে হাত। কী থেকে কী হয়ে গেল! ২৬৬ মিনিট, ১৮১ বলের লড়াই। যে লড়াইয়ে শেষমেশ তাকে হারের যন্ত্রণায় পুড়তে হলো! লর্ডসের সবুজ ঘাস মাড়িয়ে যেতে হলো ব্যালকনিতে।
ইংল্যান্ড ছিল অনবদ্য। হারার আগে তারা হারেনি। হারতে চায়নি। জাদেজা ‘কাঁটা’ তারা সরাতে পারেনি। কিন্তু বাকিদের ঠিকই হারিয়েছেন। বেন স্টোকসের স্মৃতির পাতায়, অর্জনের টালিতে লর্ডস আরেকটি অবিস্মরণীয় ম্যাচ হিসেবে লিখা হয়ে গেল।
স্টোকস লড়লেন, জিতলেন, হাসলেন।
জাদেজাও লড়লেন। জিতলেন কেবল হৃদয়।
ঢাকা/ইয়াসিন