রুদ্ধশ্বাস জয়ে সিরিজ সমতায় সফর শেষ ভারতের
ইংল্যান্ডের সামনে ছিল এক ঐতিহাসিক সুযোগ। ১২৩ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে ওভালের মঞ্চে রচিত হতে পারতো নতুন ইতিহাস। রেকর্ড ৩৭৪ রান তাড়া করে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার হাতছানি ছিল সামনে এবং তার খুব কাছেই পৌঁছে গিয়েছিল দলটি।
কিন্তু ইতিহাসের দরজা একটুর জন্যই খুললো না। আজ সোমবার (০৪ আগস্ট) পঞ্চম টেস্টে শেষ দিনে ৩৭৪ রানের লক্ষ্যে নেমে ইংল্যান্ড শেষ পর্যন্ত থেমে যায় ৩৬৯ রানে, সব উইকেট হারিয়ে। মাত্র ৬ রানের রুদ্ধশ্বাস জয়ে ভারত সিরিজে ২-২ এ সমতা ফেরাল এবং এক অনন্য সফরের ইতি টানলো।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ভারতের এটি সর্বনিম্ন ব্যবধানে জয়। এর আগে তারা সবচেয়ে কম ব্যবধানে জিতেছিল ১৩ রানে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
তবে ম্যাচটা এমন নাটকীয় রূপ নাও পেতে পারতো, যদি না চতুর্থ দিনের শুরুতে হ্যারি ব্রুকের একটি ক্যাচ হাতছাড়া করতেন সিরাজ। তখন ইংল্যান্ডের স্কোর ১০৬, ব্রুক ছিলেন ১৯ রানে। সেই ছোট্ট ভুল থেকেই যেন জমতে থাকে নাটক। ব্রুক ও জো রুটের দৃঢ়তায় গড়ে ওঠে ১৯৫ রানের দুর্দান্ত এক জুটি, যা চতুর্থ দিনকে করে তোলে ইংল্যান্ডের। ব্রুক ১১১ ও রুট ১০৫ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে আউট হলে স্কোরবোর্ডে তখন যথাক্রমে ৩০১ ও ৩৩৭ রান।
কিন্তু তাদের বিদায়ের পর হঠাৎ করেই ম্যাচে জমে ওঠে উত্তেজনার ঘনঘটা। ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৩৯ রানে চতুর্থ দিন শেষ করে ইংল্যান্ড। ক্রিজে তখন দুই জেমি স্মিথ ২ রানে ও জেমি ওভারটন শূন্য রানে। পঞ্চম দিনে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৩৫ রান, আর ভারতের দরকার ছিল ৪টি উইকেট।
শেষ দিনের শুরুতেই নাটক! ৩৪৭ রানের মাথায় স্মিথকে ফেরান সিরাজ। এরপর ৩৫৪-তে ফিরেন ওভারটনও। ৩৫৭ রানের মাথায় প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন জশ টাঙ। এরপরই ইনজুরিতে পড়া ক্রিস ওকস মাঠে নামেন ‘এক হাতে’ ব্যাট করতে।
ওকসকে একপ্রান্তে রেখে সাহসী লড়াই চালিয়ে যান গাস অ্যাটকিনসন। দলের স্কোরে যুক্ত করেন ১০ গুরুত্বপূর্ণ রান। যখন স্কোর ৩৬৭, ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য বাকি মাত্র ৭ রান—সেই মুহূর্তে সিরাজের আগুনে ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান অ্যাটকিনসন। গর্জে ওঠে ওভাল, ভারতের খেলোয়াড়রা বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠেন। এমন একটি জয়, যেখানে হার মানা মানে সিরিজ খোয়ানো, সেখানে উল্লাস তো স্বাভাবিক, বরং সেটাও যেন কম পড়ে যায়।
অ্যাটকিনসন ১ ছক্কায় ১৭ রান করে আউট হন। ক্রিস ওকসকে একটি বল খেলার সুযোগও দেননি, ফলে তার নামের পাশে কোনো রান যোগ হয়নি।
সিরাজ ছিলেন ভারতের জয়ের নায়ক। বল হাতে ১০৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ৫টি মূল্যবান উইকেট। হয়েছেন ম্যাচসেরা। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা ১২৬ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। অপর উইকেটটি নেন আকাশদীপ।
যদিও ম্যাচসেরা সিরাজ, সিরিজ সেরা হয়েছেন দুইজন- ভারতের শুভমান গিল ও ইংল্যান্ডের হ্যারি ব্রুক। গিল পুরো সিরিজে করেছেন ৭৫৪ রান, আর ব্রুক ৪৮১ রান। তাতে দুজনেই ভাগাভাগি করে নিয়েছেন সিরিজ সেরার সম্মান।
ঢাকা/আমিনুল