ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বেরাইদের চেয়ারম্যানের অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ২৪ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বেরাইদের চেয়ারম্যানের অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক

এম এ রহমান মাসুম : ঢাকার বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের প্রায় সাত কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের অনুসন্ধানে ওই সম্পদের আয়ের উৎস জ্ঞাত আয় বহির্ভূত প্রতীয়মান হওয়ায় অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছেন সংস্থাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও উপসহকারী পরিচালক উপ-সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান।

সম্পদের নোটিশ প্রদানের বিষয়টি দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন।

দুদক উপপরিচালক ঋত্বিক সাহার সই করা সম্পদের নোটিশে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে দুদকের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে, বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্বনামে ও বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাই দুদক আইন ২০০৪ সালের ধারা এর উপ-ধারা-১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিজ, তার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের নামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী আদেশ প্রাপ্তির সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিশনের নির্ধারিত ছকে দুদক সচিব বরাবর দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হলে বা মিথ্যা বিবরণী দাখিল করলে আইনের ২৬ (২) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দুদক সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম দুদকের নোটিশের বিপরীতে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার জন্য দুদকের কাছে সময় চেয়ে আবেদন করেছেন।

এদিকে দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মো. জাহাঙ্গীর আলমের নামে অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত ও অয়কর নথিতে ঘোষিত সম্পদের মূল্য ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ৩ হাজার ৮৮৩ টাকা এবং দায় পাওয়া যায় ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭১৯ টাকা। দায় বা ঋণ বাদ দিয়ে নীটসম্পদ পাওয়া যায় ১০ কোটি ৮৯ লাখ ৭ হাজার ১৬৪ টাকা। এর মধ্যে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ৫ কোটি ৫ লাখ ৪১ হাজার ৬৩ টাকা আর ব্যয় পাওয়া যায় ১ কোটি ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৬৬ টাকা। উক্ত আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে নীট আয় ও সঞ্চয় পাওয়া যায় ৪ কোটি ৩ লাখ ৯২ হাজার ৯৭ টাকা। এক্ষেত্রে নীট আয় ও সঞ্চয়ের চেয়ে সম্পদ বেশি পাওয়া ৬ কোটি ৮৫ লাখ ১৫ হাজার ৬৭ টাকা। যা জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই মো. জাহাঙ্গীর আলমের নামে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬ (১) ধারা অনুযায়ী সম্পদ বিবরণী নোটিশ জারি করার জন্য কমিশন থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বেরাইদ ইউনিয়নের স্থানীয় অধিবাসী জাহাঙ্গীর আলম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর গত আট বছরে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদকে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পাওয়ার পর নির্বাচনী ব্যয় জোগাড়ের নামে বালু নদীতে চলাচলকারী নৌযান থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি শুরু করেন জাহাঙ্গীর। বালু ও শীতলক্ষ্যায় ড্রেজিংসহ অন্যান্য কাজের জন্যও বিপুল অঙ্কের চাঁদা আদায় হচ্ছে জাহাঙ্গীরের নামে। স্থানীয় মন্দিরের জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন জাহাঙ্গীরের ভাই। ইউনিয়ন পরিষদের জন্য আসা বরাদ্দ নিয়ে নয়ছয় করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আগে পলিথিন বিক্রি করতেন জাহাঙ্গীর। এরপর মদের ব্যবসাও করেছেন। অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে এখন তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে দেড় কোটি টাকা এবং মধ্য বাড্ডায় প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট, বেরাইদের ঐতিহ্যবাহী ভূঁইয়াপাড়া মসজিদের সামনে প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের বহুতল ভবন, মাদানী অ্যাভিনিউর পাশে ৫০ কোটি টাকা মূল্যের বাগানবাড়ি এবং ৬০ কোটি টাকার বেনামি জমি, বেরাইদে ৬ কোটি টাকার বহুতল বাড়িসহ বিপুল বিত্তবৈভব অর্জন করেছেন জাহাঙ্গীর।

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সবই ষড়যন্ত্র। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি পক্ষ ভিত্তিহীন এ অভিযোগ করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য দুদকের নোটিশ পেয়েছি। সময় চেয়েছি। দুদকের চাহিদা অনুযায়ী শিগগিরই সম্পদ বিবরণী দাখিল করা হবে।’

অন্যদিকে দুদক সচিব ড. শামসুল আরেফিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি অনুসন্ধানকালীন কোনো বিষয় নিয়ে কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ অক্টোবর ২০১৮/এম এ রহমান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়