ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সবাইকে বিদ্যুৎ দিতে টিআইএন বাদের প্রস্তাব

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ২৪ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সবাইকে বিদ্যুৎ দিতে টিআইএন বাদের প্রস্তাব

হাসান মাহামুদ : কয়েক বছর ধরে দেশের অর্থনীতির আকার বাড়ছে। রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে করদাতার সংখ্যা বাড়িয়ে ১ কোটিতে উন্নীত করতে চাইছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে নতুন বাজেটে। কিন্তু দেশে শতভাগ বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিতে ব্যতিক্রম কথা বলছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তারা গ্রাহকদের জন্য টিআইএনের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার চাইছে। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করছে সরকার। এর মধ্যে অধিকাংশ জনগণের করযোগ্য আয় নেই। সে হিসেবে তাদের টিআইএন সার্টিফিকেট থাকার কথা নয়। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, যাদের টিআইএন নেই তাদেরও বিদ্যুৎসেবার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন তারা। সেক্ষেত্রে টিআইএন না থাকলেও সেবা দিতে চান তারা। তাই টিআইএন সার্টিফিকেটের বাধ্যবাধকতা না রাখার সুপারিশ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। একজন মানুষের শুধু বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য টিআইএন সার্টিফিকেট তৈরি করা বাড়তি চাপ হিসেবে দেখছে বিভাগটি।

জানা গেছে, বিদ্যুতের নতুন সংযোগ নিতে ও পুরনো গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল দিতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে ২০১৯-২০ সালের নতুন বাজেটে। নতুন এই প্রস্তাবে বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন দেশের ১ কোটির বেশি মানুষ। একই সঙ্গে  স্বল্প বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকেরাও ভোগান্তিতে পড়বেন।

এর আগে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হতো আবেদনকারীর দুই কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি, জমির দলিল বা লিজের ফটোকপি, ১০ তলার বেশি হলে অগ্নিনির্বাপণ সনদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মধ্যে হলে ভবন নির্মাণের বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ফটোকপি ও দুই কিলোওয়াটের বেশি গ্রাহকের বিদ্যুৎ লোড হলে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের সনদ।

বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ শফিকউল্লাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এদের টিআইএন সনদ পাওয়া অনেক কঠিন বিষয়। বাজেটে যেহেতু এটি প্রস্তাব করা হয়েছে, এখনো অনুমোদন হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানোর, যাতে বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে এটি বাদ দেওয়া হয়।

এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুতের নতুন সংযোগ নিতে ও পুরনো গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল দিতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়ে আজ সোমবার চিঠি পাঠিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

প্রান্তিক গ্রাহকদের মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ ৫০ ইউনিটের মধ্যে। সব মিলিয়ে এসব গ্রাহকের মাসিক বিদ্যুৎ বিল আসে ১৫০ টাকা। কিন্তু এর জন্য টিআইএন সার্টিফিকেটের বাধ্যবাধকতা যৌক্তিক নয় বলে মনে করা হচ্ছে। এসব গ্রাহকের বিলে সরকার ভর্তুকি দেয়। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ৬ টাকার কাছাকাছি হলেও এদের কাছে বিক্রি করা হয় সাড়ে ৩ টাকায়। গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবন মান উন্নয়নে এই বিদ্যুৎ বড় ভূমিকা রাখে।

সরকার সাধারণ মানুষকে করের আওতায় আনতে এবার বাজেটে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য টিআইএন সার্টিফিকেটের বাধ্যবাধকতার প্রস্তাব করে। সরকারের এই উদ্যোগকে ভালো বললেও দেশের বিশাল একটি অংশ এর জন্য বিপাকে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ ক্রমান্বয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করছে। আবেদনের পাঁচ মিনিটের মাথায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। শহরের আবাসিক গ্রাহকদের সংযোগ সাত দিনের মধ্যে প্রদানের বাধ্যবাধকতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

দেশে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছেন মফস্বল শহর ও গ্রামগুলোতে আরইবি সমিতিগুলোর। আরইবির গ্রাহকসংখ্যা ২ কোটি ৫৮ লাখ। আর আরইবি অঞ্চলে মাসে মাত্র ৫০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন এমন গ্রাহকের সংখ্যা রয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ। এসব গ্রাহককে সরকার হতদরিদ্র বিবেচনা করে তাদের বিদ্যুতের মূল্য ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করেছে। এদের একটি বড় অংশ সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা।

দেশে বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বছরে আড়াই লাখ টাকা। এর বেশি অর্থ আয় করলেই কেবল কর দিতে হয়। কিন্তু এর চেয়ে কম আয় করেন এমন ১ কোটির বেশি লোক রয়েছেন, যারা বিদ্যুতের গ্রাহক। নতুন নিয়মে তারাই বেশি বিপদে পড়বেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে এখন ৩ কোটি ৩৪ লাখ বিদ্যুতের গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের মোট গ্রাহকের সংখ্যা ২ কোটি ৩১ লাখ। অর্থাৎ পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ ছাড়া দেশের শহর এলাকায় ১ কোটি ৩ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন, যাদের করের আওতায় আনতে ঘোষিত বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুতের গ্রাহক ছাড়াও অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে যাদের পানি ও গ্যাসের সংযোগ আছে, তাদেরও টিআইএন বাধ্যতামূলক করার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার করদাতার সংখ্যা বাড়িয়ে ১ কোটিতে উন্নীত করতে চায়। তারই অংশ হিসেবে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়। আর পুরনো গ্রাহকদের মধ্যে যাদের টিআইএন নেই, তাদের কিছুটা সময় দেওয়া হচ্ছে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুন ২০১৯/হাসান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়