ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

একাধিক মামলায় ফাঁসতে পারেন বাচ্চু

আসছে ৩০ মামলা, আসামি দেড় শতাধিক

এম এ রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ২২ আগস্ট ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আসছে ৩০ মামলা, আসামি দেড় শতাধিক

এম এ রহমান : বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারিতে অনুসন্ধানে থাকা ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরো ৩০টি মামলা করতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

 

যেখানে দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা মিলেছে অন্তত ৩০টি কোম্পানির। ৩০টি কোম্পানির মালিক ও বেসিক ব্যাংক কর্মকর্তাসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে।

 

আসামি হিসেবে একাধিক মামলায় আসতে পারে বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর নাম। তবে কোম্পানির নাম ও বাচ্চুকে মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা অনুসন্ধানের স্বার্থে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কোনো শীর্ষ ব্যক্তিরা মুখ খুলছেন না।

 

এর আগে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫৬ মামলা দায়ের করে দুদক। যদিও বেসিক ব্যাংক থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধান কাজ বাকি থেকে যায়।

 

মামলা দায়েরের বেশ কয়েক মাস পরে আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পৃথক অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক। দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের দল অনুসন্ধান শুরু করে। বর্তমানে অনুসন্ধান কাজ প্রায় শেষ পর্য়ায়ে। শিগগিরই ৩০টি কোম্পানি ও বেসিক ব্যাংক কর্মকর্তাসহ অন্তত ১৫০ জনকে আসামি করে কমিশনে অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দিতে যাচ্ছে দুদকের অনুসন্ধান দল।

 

এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে জানান, কমিশনের নির্দেশে দুদকের অনুসন্ধান কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অনুসন্ধানে অন্তত ৩০টি কোম্পানির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। যেখানে ৩০টি কোম্পানি ও বেসিক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অন্তত ১৫০ জনকে আসামি করা হচ্ছে। এবারের আসামির তালিকায় বেসিক ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর নাম থাকছে। তবে বাচ্চুর মতো ভিআইপিকে আসামি করার জন্য আরো নথিপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে।  

  

তিনি জানান, ৩০ মামলার প্রত্যেকটি মামলায় আসামি করা হচ্ছে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও এমডিসহ ২/৩ জন কর্মকর্তাকে। একই সঙ্গে থাকবে বেসিক ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের ৩/৪ জনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সে হিসেবে প্রতিটি মামলায় ৫/৬ জন ব্যক্তিকে আসামি করা হতে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।

 

বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ২০১০ সালে আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও গুলশান থানায় মোট ৫৬ মামলায় ১৫৬ জনকে আসামি করা হয়। তবে বেসিক ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি।

 

মামলায় বেসিক ব্যাংকের ২৬ জন কর্মকর্তা, ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের ৯২ জন এবং সার্ভে প্রতিষ্ঠানের ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফখরুল ইসলাম ৪৮টি মামলায়, বর্তমান উপমহাব্যবস্থাপক (ডিএমডি) ফজলুস সোবহান ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থ ২৩টি, মো. সেলিম ৮টি, বরখাস্ত হওয়া ডিএমডি এ মোনায়েম খানকে ৩৫টি মামলায় আসামি করা হয়েছে।

 

যদিও অভিযোগ রয়েছে জাতীয় পার্টির নেতা ও বেসিক ব্যাংকের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জনের একটি চক্র ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতে মূল ভূমিকা রেখেছে। ওই চক্রটি অন্যান্য ব্যাংক থেকে নিজেদের পছন্দের বেশ কয়েকজনকে ব্যাংকের গুলশান, শান্তিনগর ও প্রধান শাখায় নিয়োগ দেন। এদের মাধ্যমে বড় বড় ঋণ প্রস্তাব উত্থাপন ও অনুমোদন দেওয়া হয়।

 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বেসিক ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের মার্চে তা দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকাই নিয়ম ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অর্থ আত্মসাৎ নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা চিহ্নিত হলে সরকার ব্যাংক পুনর্গঠনে বাধ্য হয়। প্রথমে ব্যাংকের এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। এরপর ২০১৪ সালের ২৯ মে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ৪ জুলাই অর্থমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে পদত্যাগপত্র দেন শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। পরবর্তী সময়ে ব্যাংকের ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িক এবং সাতজনকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

 

এ বিষয়ে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল রাইজিংবিডি বলেন, বেসিক ব্যাংকের যে পরিমাণ অর্থ জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে তার একাংশের অনুসন্ধান শেষে ৫৬টি মামলা করা হয়েছে। অর্থ জালিয়াতির বাকি যে অংশ ছিল সেটার অনুসন্ধান এখন চলছে। অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে ঋণ কেলেঙ্কারির তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

গ্রেপ্তার অভিযানে দুদক এরই মধ্যে ব্যাংকের বরখাস্ত হওয়া প্রাক্তন ডিএমডি ফজলুস সোবহান, মো. সেলিম ও গুলশান শাখার প্রাক্তন ডিজিএম শিপার আহমেদসহ বেশ কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ আগস্ট ২০১৬/এম এ রহমান/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়