বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে ছেলেটি || রণজিৎ সরকার
রণজিৎ সরকার || রাইজিংবিডি.কম
মানিক ঢাকা শহরে নতুন এসেছে। চাচাতো ভাই শাওন তাকে নিয়ে এসেছে। শাওন চা-সিগারেট বিক্রি করে। ধানমন্ডি এলাকায়। বিশেষ করে ৩২ নম্বরের আশপাশে।
কয়েক দিন যাওয়ার পর শাওন বলল, ‘মানিক, একা একা চা-সিগারেট বিক্রি করতে পারবি তো?’
মানিক বলল, ‘পারব। কোনো সমস্যা হবে না।’
‘তাহলে তুই ৩২ নম্বরের আশপাশে বিক্রি করবি।’
‘ঠিক আছে ভাইয়া, আমি বিক্রি করব।’
মানিক চা-সিগারেট বিক্রি করতে শুরু করল। বিকেলে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে এসে অবাক হলো সে। বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল ও। তাকিয়ে থাকল বাড়ির দিকে। ভাবল, এই বাড়িতে টিকিট কেটে দল বেঁধে মানুষ কেন ঢোকে? বুঝতে পারল না মানিক। ও দাঁড়িয়ে থাকল।
বেশ কিছু সময় ধরে একটা লোক মানিককে দেখছিলেন। লোকটি মানিকের কাছে এসে বললেন, ‘এই ছেলে, একটা লাল চা দাও তো?’
মানিক লোকটির দিকে তাকাল। তারপর বলল, ‘দিচ্ছি ভাইয়া।’
লোকটি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বললেন, ‘এই বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছ কেন?’
মানিক বাড়িটার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এই বাড়িতে এত লোকজন ঢোকে কেন?’
‘তুমি কি জানো, এই বাড়িটা কার?’
‘না।’
‘ঢাকা শহরে কত দিন হলো এসেছ?’
‘কয়েক দিন হলো মাত্র।’
‘ও, আচ্ছা, তুমি কি বঙ্গবন্ধুর নাম শুনেছ?’
‘হ্যাঁ, শুনেছি। রাস্তাঘাটে বিভিন্ন পোস্টারে ছবি দেখি। কালো কোট পরা, চোখে চশমা। এখানেই তো দুইটা ছবি আছে। রাস্তার এই পাশে একটা, আর ওই পাশে একটা।’ হাত উঁচু করে দেখাল মানিক।
‘এটা তার বাড়ি। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। বিখ্যাত বাড়ি।’
‘আচ্ছা, এ বাড়িতে মানুষ ঢোকে কেন?’
‘তুমি কি বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে কিছু জানো?’
মানিক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি চিনি। কিন্তু তার সম্পর্কে কিছু জানি না। আপনি কি বঙ্গবন্ধুর বাড়ি সম্পর্কে জানেন? আমাকে বলবেন?’
লোকটি মানিকের জানার আগ্রহ দেখে বললেন, ‘অবশ্যই বলব, কিন্তু তার আগে তোমার চা বিক্রি শেষ করে এসো।’
‘আমি এসে কি আপনাকে এখানে পাব? মনে হয় না। তারপর চেয়ে আপনি এক্ষুনি বলেন।’
লোকটি বাঁ হাত দিয়ে মানিকের মাথার চুল নেড়ে দিয়ে বললেন, ‘আমি আছি। এখানেই থাকব। তুমি না-আসা পর্যন্ত আমি কোথাও যাব না।’
‘ঠিক আছে। চা-শেষ করে আসি।’
‘আচ্ছা, যাও।’
মানিক ‘এই চা-সিগারেট, চা-সিগারেট’ বলতে বলতে চলে গেল সামনের দিকে। লোকটি দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর মানিক চা বিক্রি শেষ করে এল। এসে দেখল, লোকটি দাঁড়িয়েই আছেন।
কাছে এসে বলল, ‘ভাইয়া, আমার চা বিক্রি শেষ। এবার বলেন।’
লোকটি বললেন, ‘তোমার ফ্লাস্ক আর সিগারেট ওই ঘরে জমা দাও। আমি টিকিট নিয়ে আসি।’
‘ঠিক আছে।’
মানিকের জিনিসগুলো জমা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢুকল ওরা।
মানিক বলল, ‘এবার বলেন?’
লোকটি বললেন, ‘মনোযোগ দিয়ে শুনবে কিন্তু।’
‘ঠিক আছে বলেন।’
লোকটির মন ভার করে বলতে লাগলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকেরা।’
‘কী! কাদের হত্যা করা হয়েছিল সে রাতে?’
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ রাসেল, শেখ, কামাল, সুলতানা কামাল, আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শেখ জামাল, পারভিন জামাল রোজী, শেখ ফজলুল হক মণি, বেবী সেরনিয়াবত, শেখ আবু নাসের, কর্নেল জামিলউদ্দিন আহমেদ, বেগম আরজু মণি, সুকান্ত আবদুল্লাহ, শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নউদ খান রিন্টু, আরিফ সেরনিয়াবাত।’
লোকটির কথা শুনে মানিকের মন খারাপ হয়ে গেল। চোখে পানি চলে এল। তারপর ধীরে ধীরে মানিক বলল, ‘এতগুলো মানুষকে একসঙ্গে হত্যা করল কেন?’
লোকটি বললেন, ‘তুমি ছোট মানুষ, বুঝবে? ঝুববে না। শুধু এটুক বোঝো- ক্ষমতা। ক্ষমতার জন্য। তবে কি জানো, তোমার মতো ছোট্ট রাসেলকেও হত্যা করেছে ঘাতকেরা।’
মানিকের মন আরো খারাপ হয়ে গেল। লোকটির চোখ দিয়ে পানি চলে এল। হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানা। সে সময় তারা দেশের বাইরে ছিলেন বলে বেঁচে আছেন।’
‘তাই! বঙ্গবন্ধুর মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা!’
‘হ্যাঁ।’
‘যদি রাসেল বেঁচে থাকত। তাহলে আজ কত বড় হতো।’
‘তা হতো। চলো, এখন তোমাকে ঘুরে ঘুরে সব দেখাই। আরো কিছু কাহিনি বলি।’
‘আচ্ছা, চলেন।’
‘ঘুরতে ঘুরতে বলি।’
‘ঠিক আছে।’
৩২ নম্বরের ৬৭৭ নম্বর বাড়িটার সব কক্ষ ঘুরতে লাগল দুজন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ আগস্ট ২০১৫/কমল কর্মকার
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন