ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

আগুন কাড়িছে মেরাজ আলীদের বেবাক

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৬, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আগুন কাড়িছে মেরাজ আলীদের বেবাক

আহমদ নূর : মেরাজ আলী (৫০)। পেশায় রিকশা চালক। স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারের ৪ সদস্য নিয়ে থাকতেন রাজধানীর কড়াইল বস্তির এক ছাপড়া ঘরে। আগুনে সে ঘর পুড়ে গেছে।

 

মেরাজ আলীর ভাষায়, ‘আগুন কাড়িছে আমার বেবাক’। এখন ‘বেবাক’ হারিয়ে মেরাজ আলী খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন।

 

রোববার আগুনে জ্বলে গেছে তার সঞ্চয়। অথচ একদিন আগেও তিনি ভাবতেন, অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা করাবেন। এখন মেরাজের চোখে মুখে অন্ধকার।

 

 

শুধু মেরাজ আলী নন, রোববার দুপুরে কড়াইল বস্তিতে লাগা আগুনে পাঁচ শতাধিক ঘর পুড়ে যায়। এতে বহু মানুষ সঞ্চয় হারিয়েছে, আশ্রয় হারিয়েছে।

 

সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের জায়গায় বসে অনেকে মাথা চাপড়াচ্ছেন। ঘর হারিয়ে কাঁদছেন অনেকে। কেউ কেউ ছাঁই সরিয়ে ফেলছেন, টিন পরিস্কার করছেন। আবার কেউ কেউ নতুন ঘর বানানোর চেষ্টা করছেন।

 

সবার চোখে মুখে স্পষ্ট ছিল সম্বল হারানোর কষ্ট। তারপরও তারা এখানে থাকতে চান, নতুন করে বাঁচতে চান, জীবনকে নতুন রূপ দিতে চান।

 

 

মেরাজ আলী রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এখন আমি কি নিয়া বাঁচমু, ঘর হারিয়েছি। জমানো সম্বল হারিয়েছি। এখন মনে হয় টাকার অভাবে চিকিৎসা না করিয়ে স্ত্রীকেও হারাইতে হইব।’ 

 

স্থানীয় পৌঢ় নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘আগেও বস্তিতে আগুনে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে এখনও সেইসব ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেন নি। অনেকে আছেন যারা সুদের ব্যবসা করেন তাদের কাছ থেকে ঋণ নেবেন। নতুন করে কিছু করার চেষ্টা করবেন। আবার ক্ষতি সামাল দিতে কেউ কেউ তাদের স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের কাজে পাঠাবেন।’

 

তিনি বলেন, ‘এ বস্তিতে নানা ধরণের মানুষের বাস। তারা রিকশা চালানো, গার্মেন্টসে চাকরি, খাদ্যপণ্যের ক্ষুদ্র ব্যবসা ইত্যাদি বিভিন্ন পেশায় রয়েছে। আবার অনেকে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথেও জড়িত। যাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার সক্ষমতা আছে তারা হয়তো দ্রুতই তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। কিন্তু যাদের কিছুই নেই বা যারা কম আয়ের মানুষ তারা কি করবে?’

 

 

কথা হয় পোশাক শ্রমিক আলেয়া বেগমের সাথে। কাজ করেন মহাখালী এলাকায় একটি গার্মেন্টস কারখানায়। অগ্নিকাণ্ডের সময় ছিলেন কাজে। বিকেলে বস্তিতে ফিরে এসে দেখেন সব শেষ। এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘স্বামী সংসার নিয়ে এই বস্তির এক ঘরে ১০ বছর ধরে আছি। এক মুহূর্তে সব হারিয়ে গেল। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য কিছু টাকাও জমিয়েছিলাম। আগুনে এগুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গেল। এখন এই ছাই দিয়ে আমি কি করবো।’

 

আগুনে পোঁড়া একটি জায়গায় মাথার উপর কম্বল টানিয়ে রান্না করছিলেন পঞ্চাশ বছর বয়সী আলেয়া বেগম। রোদ থেকে বাঁচার জন্য এভাবে তিনি রান্না করছেন কী না জানতে চাইলে বলেন, ‘রোদ থেকে বাঁচতে নয়, রাতে কুয়াশা পড়ায় এটি টাঙানো হয়েছিল। সকালে আর খোলা হয়নি। কারণ, আরো কয়েক রাত হয়তো এভাবেই আমাদের থাকতে হবে।’

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ ডিসেম্বর ২০১৬/আহমদ নূর/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়