ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

হলমার্ক কেলেঙ্কারি: নন-ফান্ডেড দুর্নীতিতে সরব দুদক

এম এ রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ৫ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হলমার্ক কেলেঙ্কারি: নন-ফান্ডেড দুর্নীতিতে সরব দুদক

এম এ রহমান : হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে সোনালী ব্যাংকের নন-ফান্ডেড দেড় হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অনুসন্ধান নিয়ে নতুন করে নড়েচড়ে বসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

 

সোনালী ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে নন-ফান্ডেড ১ হাজার ১শত কোটি টাকার দুর্নীতির সঙ্গে ৩৭টি দেশি-বিদেশি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পরই দুদক পুরোনো বিষয় নিয়ে ফের সরব হয়ে উঠেছে। দুদকের একটি সূত্র বিষয়টি রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছে।

 

গত ১৬ জুন সোনালী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগ প্রায় ৬ হাজার পাতার তদন্ত প্রতিবেদন দুদকের কাছে হস্তান্তর করে। এখন কমিশনে প্রতিবেদনটির সারাংশ রিপোর্ট তৈরীর কাজ চলছে।

 

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেশের সর্ববৃহৎ এই কেলেঙ্কারীর সঙ্গে ৩৭ টি দেশী-বিদেশী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলেও অদৃশ্য কারনে ২০১৪ সালে নন-ফান্ডেড অংশ অনুসন্ধান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুদক। অথচ হলমার্কের নন-ফান্ডেড অংশে অর্থ আত্মসাৎ, জাল-জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মতো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। যা ছিল দুদকের সিডিউলভুক্ত অপরাধ।

 

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগ থেকে চলতি বছরের ১৬ জুন কয়েক হাজার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন দুদকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই প্রতিবেদনে হলমার্ক কেলেঙ্কারীর সঙ্গে ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে ৩৭ দেশী-বিদেশী ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে সাতটি সরকারি ব্যাংক, ২৫টি বেসরকারি ব্যাংক এবং পাঁচটি বিদেশি ব্যাংক রয়েছে। যেখানে ওই ব্যাংকগুলোর শতাধিক শাখা এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত।’

 

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ইতিমধ্যে কমিশনের নিয়মিত সভায় আলোচনা হয়েছে। গত ২২ জুন কমিশনের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হলমার্কের নন-ফান্ডেড অংশের তদন্ত প্রতিবেদনের সারাংশ রিপোর্ট তৈরীর জন্য কমিশনের মানিলন্ডারিং বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই কাজ শেষ হলেই নতুন করে হলমার্ক কেলেঙ্কারির নন-ফান্ডের অংশের অনুসন্ধান শুরু হতে পারে।’

 

এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর তার সামারি তৈরী করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

 

২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে প্রায় ১ হাজার ৭১০ কোটি টাকার দুর্নীতি অনুসন্ধান না করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। যার স্মারক নং-দুদক/বিঃ অনুঃ ও তদন্ত-১/মানিলন্ডারিং/৩২-২০১২(অংশ-৫)/১০৩১২।

 

যদিও দুদক চেয়ারম্যান বরাবরই বলে এসছেন নন-ফান্ডেড অনুসন্ধান একেবারে ত্যাগ করা হয় নাই। ওই সময় হলমার্কের নন-ফান্ডেড অংশের অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেছিলেন, সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে তাদের তদন্ত টিমের ফলাফল জানার পরই এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

 

এদিকে হলমার্ক কেলেঙ্কারী অনুসন্ধানে দুদকের ৮ সদস্যের যে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছিল তার অধিকাংশ কর্মকর্তাই বর্তমানে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান করছেন। তাই হলমার্ক বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিলে এ সংক্রান্ত নতুন টিম গঠন করতে হবে।

 

২০১২ সালের মে মাসে হলমার্ক কেলেঙ্কারি ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর ওই বছরেই অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধান পর্যায়ে ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর ফান্ডেড (সোনালী ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ) ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২৭ জনকে আসামি করে ১১ মামলা এবং ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ফান্ডেড প্রায় ৩৭২ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে ২৭ মামলা দায়ের করে দুদক।

 

পরবর্তী সময়ে ফান্ডেড মোট ১ হাজার  ৯৫৪ কোটি ৮৩ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৩ টাকা  আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৪ সালের বিভিন্ন সময়ে ৩৮ মামলায়  চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হয়। যেখানে সোনালী ব্যাংকের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হুমায়ুন কবির, হল-মার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ, চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমেদসহ অর্ধশত ব্যাংক কর্মকর্তা ও হলমার্কসহ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

 

দুদকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদিন শিবলীর নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি টিম হলমার্ক কেলেঙ্কারির অভিযোগটি অনুসন্ধান ও তদন্ত করেছেন।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫জুলাই ২০১৫/এম এ রহমান/লেনিন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়