ভৃঙ্গরাজ: পথের ধারে হলুদ আভা
রফিক সরকার || রাইজিংবিডি.কম
পথের ধারে কিংবা বড় এপার্টমেন্টের আঙিনাজুড়ে তার বসবাস। চকচকে সবুজ পাতার আড়ালে উঁকি দেওয়া ছোট্ট হলুদ ফুল। গড়ন অনেকটা সূর্যমুখীর মতো। বলছিলাম ছোট গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ ভৃঙ্গরাজের কথা।
চেনা ফুল ভৃঙ্গরাজের আছে অচেনা অনেক নাম। প্রচলিতভাবে একে ভৃঙ্গরাজ নামে ডাকলেও এর বৈজ্ঞানিক নাম Eclipta alba Linn এবং পরিবারিক নাম Anacardiaceae.
ভৃঙ্গরাজের তিনটি প্রজাতি লক্ষ্য করা যায়। একটির ফুল নীল, একটির সাদা এবং অন্যটির ডাঁটা একটু লালচে। ডাঁটা রসালো, নরম, সুক্ষ্ম রোম আছে ও দ্রুত বাড়ে। বর্ষাকালে এর হলুদ রঙের ফুল হয় এবং শরৎকালে ফল হয়। এ ডাঁটার প্রতি গিরা থেকে দুটি করে বিপরীতমূখী পাতা বের হয়। পাতা ৪.০-৮.০ সে.মি. লম্বা এবং ১.২-২.০ সে.মি. পর্যন্ত চওড়া হয়। পাতার কিনারা হালকা খাঁজকাটা। পাতার আকৃতি লম্বাটে বর্ষাকৃতি, অমসৃণ ও খসখসে।
বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র এ তৃণ দেখা যায়। ভেজা বা আর্র্দ্র জায়গা উদ্ভিদটির জন্য বিশেষ উপযুক্ত স্থান। ভৃঙ্গরাজের চাষ করা খুবই সহজ। শিকড়সহ বা শিকড় ছাড়া লতা লাগালেও নতুন গাছ জন্মে। তবে যত্ন নিতে হয়।
উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঈশ্বরপুর গ্রামের মরহুম সোহেল মেম্বারের বাড়ির পাশে বিশাল একটি ভৃঙ্গরাজ বাগান দেখে দাঁড়ালাম। প্রাকৃতিকভাবে জন্মা নেওয়া এই বাগানের কেউ যত্ন নেয় না। কথা হয় ঈশ্বরপুর গ্রামের মুদি দোকানি ছানাউল্লাহ ছানার সাথে। তিনি বলেন, আমি এই গাছ বা ফুলের নাম জানি না। তবে এমনিতেই জম্ম নিয়েছে এই হলুদ ফুলের গাছগুলো। সব সময় দেখি ওই জায়গায় হলুদ ফুল ফুটে থাকে। মাঝেমধ্যে দেখি রাস্তা দিয়ে চলাচল করে কিছু মানুষ ছবি তোলে ও ফুল ছিড়ে নিয়ে যায়।
পথচারী নুরুল ইসলাম বলেন, আমি এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করি। আর মাঝেমধ্যে যখন দেখি ভৃঙ্গরাজের সব ফুল ফুটে আছে তখন স্মার্ট ফোনে ছবিটি ধরে রাখি। এই গাছ ও ফুলের নাম কীভাবে জানালেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছবি তুলে নেটে স্ক্যান করে এর নাম ও গুণ সম্পর্কে জেনেছি।
ভেষজগুণ সংক্রান্ত বই থেকে জানা যায়, সূর্যোদয়ের পর অনেকের মাথায় যন্ত্রণা হয় বা আধকপালে ব্যথা হয়, সেক্ষেত্রে ভৃঙ্গরাজের পাতার রস মাথায় মাখলে উপশম হয়। মাথার চুল ওঠায় এই পাতার রস দুপুরে মাথায় লাগালে চুল পড়া বন্ধ হয়। নারীরা শ্বেত প্রদরের শিকার হলে প্রায়ই মাথার চুল উঠে যায়, সেক্ষেত্রে ভৃঙ্গরাজের পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে দিনে দুইবার মাথা ধুলে ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়।
এ ছাড়াও পাইরিয়া হলে ভৃঙ্গরাজের পাতার গুঁড়া করে মাজনের মতো ব্যবহার করলে সেরে যায়। এতে মাড়ি শক্ত হয়। গুঁড়া কৃমির উপদ্রব হলে এর পাতার রস পূর্ণবয়স্কদের জন্য এক চা চামচ এক কাপ পানিতে মিশিয়ে খেলে উপদ্রব কমে যায়।
/তারা/