ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পাবনার রোগী বাড়ছে, তবে অক্সিজেন সঙ্কট অনেকটাই কেটেছে 

শাহীন রহমান, পাবনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫২, ৭ জুলাই ২০২১  
পাবনার রোগী বাড়ছে, তবে অক্সিজেন সঙ্কট অনেকটাই কেটেছে 

উত্তরের জেলা পাবনায় বেড়ে চলেছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিন রেকর্ড হচ্ছে সর্বোচ্চ আক্রান্তের। হাসপাতালে করোনা রোগী বাড়লেও অক্সিজেন সঙ্কট এখন তেমন নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, চারিদিকে এত করোনার শঙ্কা, তার মাঝেও সচেতনতা বাড়ছে না মানুষের। কঠোর লকডাউন দিয়েও কাজ হচ্ছে না। বিভিন্নভাবে ঘরে থাকতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হচ্ছে। মাঠে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী রয়েছে কিন্তু তারপরও অযথাই বাইরে বের হচ্ছে মানুষ। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে। জেলায় করোনার সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। 

বুধবার (০৭ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে সরেজমিন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে সবখানে মানুষের ভিড়। বেশ কয়েকজনকে পাওয়া গেলো তাদের মুখে মাস্ক নেই। জিজ্ঞেস করতেই পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরলেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। স্বাস্থবিধি মানারও বালাই নেই।

হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের সামনে গিয়ে দেখা যায়, উপসর্গ নিয়ে দুইজন রোগীকে ভর্তি করতে এসেছেন স্বজনরা। ভর্তি শেষে কিছু সময় পর তাদের সঙ্গে আলাপ হয়। সুজানগর উপজেলার চরদুলাই গ্রামের বাচ্চু খানের (৭০) করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার ভর্তি করতে নিয়ে এসেছেন ছেলে এরশাদ খান। এরশাদ খান বলেন, ভর্তির পর অক্সিজেন না পাওয়ায় বাইরে থেকে সিলিন্ডার কিনে আনতে হয়েছে। অক্সিজেন সঙ্কট একটা বড় সমস্যা।

বেড়া উপজেলার কাশীনাথপুর গ্রাম থেকে মা আলেয়া খাতুন (৬০) কে নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করেন ছেলে আলামিন হোসেন। তিনি বলেন, ভর্তির পর হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন দিয়েছে। তবে ফুরিয়ে গেলে কী হবে সেটা নার্সদের জিজ্ঞেস করলে তারা বলেছেন- থাকলে পাবেন, না থাকলে বাইরে থেকে আনতে হবে।

করোনা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের একশত শয্যার করোনা ইউনিটের মধ্যে ভর্তি আছে ৯৬ জন। চিকিৎসাধীন বেড়া উপজেলার মাশুমদিয়া গ্রামের মানিক হোসেনের (৪০) ছেলে মোহাম্মদ মোল্লা বলেন, ১০ দিন হলো তার বাবা ভর্তি রয়েছেন। দুইদিন হলো হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন দিচ্ছে। তার আগের আট দিন বাইরে থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে আনা লাগছে। 

আরও কয়েকজন রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা হলে তারা অভিযোগ করেন, ডাক্তার সারা দিনে একবার মাত্র আসেন। নার্সদের ডাকলেও কাছে আসতে চায় না। 

হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের পাশে দেখা গেল, হাই ফ্লো সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপনের কাজ চলছে। শ্রমিকরা দ্রুত কাজ শেষ করতে চেষ্টা করছেন। বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয় পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এম এম জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, অক্সিজেন সঙ্কট ছিলো কয়েকদিন আগে। কিন্তু বর্তমানে ১২টি বড় সিলিন্ডার একসঙ্গে করে অস্থায়ী সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা ‘মিনি ফোল্ট’ চালু করে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। করোনা ওয়ার্ডের একশত শয্যার মধ্যে ৫৬টিতে এই ব্যবস্থায় অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। বাকিগুলোতে সিলিন্ডার দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে অক্সিজেন সঙ্কট অনেকটাই কেটে গেছে। আর হাসপাতালে ছোট-বড় মিলিয়ে ২১০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। আরও ৫০টি সিলিন্ডার কেনার প্রক্রিয়া চলছে।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডা. সালেহ মুহাম্মদ আলী বলেন, চিকিৎসক ওয়ার্ডে না যাওয়া কিংবা নার্সদের না পাওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। কারণ এই মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসক নার্সরাই সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা ঠিকভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন। আর সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুত এই প্লান্ট চালু হলে অক্সিজেন নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকবে না।

জেলার মধ্যে এখন করোনার হটস্পট ঈশ্বরদী উপজেলা। যেখানে জেলায় প্রতিদিন আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি থাকে এই উপজেলার।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল) জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ২০.৪৪ শতাংশ, গত সাতদিনে যা ১৮.৭১ শতাংশ। চলতি জুলাই মাসের গত সাতদিনে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ১২৫ জন। অর্থাৎ এই মাসে গড়ে প্রতিদিন ১৬০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে গত জুন মাসে ১ হাজার ৫৬৪ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।

পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করে যাচ্ছে করোনা মোকাবিলায়। তারপরও যদি মানুষ নিজে সচেতন না হয় তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। জেলায় পিসিআর ল্যাব ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালুর জন্য সবাই মিলে চেষ্টা করছেন বলে জানান সিভিল সার্জন। 

পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, করোনা লকডাউনে মানুষকে ঘরে রাখতে ও সচেতন করতে প্রতিদিন মাঠে কাজ করছে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। গত ১১ দিনে ১৮৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। এ সময় তারা ৯৯৬টি মামলায় ১ হাজার ১১ জনকে জরিমানা করেছে। আর এ সব ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৬০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়