ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শিকলবন্দী স্বপনের জীবন, ঘর দেওয়ার আশ্বাস প্রশাসনের

শেরপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৮, ২৯ মার্চ ২০২২   আপডেট: ১৩:০৯, ২৯ মার্চ ২০২২
শিকলবন্দী স্বপনের জীবন, ঘর দেওয়ার আশ্বাস প্রশাসনের

শেরপুরের শ্রীবরদীতে এক যুগ ধরে বাশঁঝাড়ে শিকলে বন্দী জীবন কাটছে মানসিক ভারসাম্য হারানো স্বপন বর্মণের (৩৫)। টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছে না হতদরিদ্র মা বাবা। মেলেনি প্রতিবন্দ্বি ভাতাসহ সরকারি কোনো সহায়তা। ফলে নির্মমভাবে জীবন কাটছে এই যুবকের। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, স্বপনের থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের একটি ঘর আর তার মেয়ের জন্য  শিক্ষা সহায়তার ব্যবস্থা করবে উপজেলা প্রশাসন।

স্বপন উপজেলার খড়িয়া কাজীরচর ইউনিয়নের বীরবান্দা গ্রামের পবন বর্মণের ছেলে। মানসিক ভারসাম্য হারানোয় তাকে ঘরের পাশের বাঁশঝাড়ে অথবা অন্য কোনো গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। দিন রাত তার কাছে সব সমান। দূর থেকে তাকে খাবার দেওয়া হয়। 

বৃদ্ধ বাবা পবন বর্মণ, মা সুচিত্রা রানী বর্মণ, বড় ভাই সুজন বর্মণ আর মেয়ে প্রীতি রানী বর্মণকে নিয়ে স্বপনের পরিবার।

স্বপনের স্বজনরা জানান, ছোট বেলা থেকেই স্বপনের মধ্যে কিছুটা মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়। সে সময় চিকিৎসা করানোর ফলে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। শুরু করেন কৃষি শ্রমিকের কাজ। তার উপর্জনে সংসার ভালোই চলছিল। পরে পারিবারিকভাবে রানী বর্মণ নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেন স্বপন। বিয়ের দুই বছরের মাথায় তাদের ঘরে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু বিধি বাম। এরপরই আবারো মানসিক সমস্যা দেখা দেয় স্বপনের।

তারা আরো জানান, স্বপন যাতে তাকে কামড়ে দিতে শুরু করেন। সমস্যা এতোটাই বৃদ্ধি পায় যে পরিবারের লোকজন তার হাত ও পায়ে শিকল পড়িয়ে বাঁশঝাড়ের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। এ সময় স্বপনের স্ত্রীও বাপের বাড়ি চলে যায়। তবে তার মেয়ে প্রীতি রানী দাদা দাদির আশ্রয়ে বড় হচ্ছে। সে স্থানীয় একটি কিন্ডার গার্ডেনে ষষ্ট শ্রেণিতে পড়ালেখা করে।

এলাকাবাসীর দাবি, এতোদিন স্বপন মানবেতর জীবন যাপন করলেও কোনো জনপ্রতিনিধি খোঁজ নেয়নি। সরকার যদি তার জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে দরিদ্র এই পরিবারটির পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব হবে। সুস্থ হয়ে আবারো স্বপন পরিবারের হাল ধরতে পারবে।

খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হওয়ার পর স্বপনের খোঁজ নিয়েছি। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে স্বপনের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়েছি তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। যেতেহু উপজেলা প্রশাসন এই ব্যাপারে অবগত তাই উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। এছাড়াও আমার পরিষদের পক্ষ থেকে পরিবারটির জন্য সাধ্য অনুযায়ী সহায়তার চেষ্টা করবো।’

শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা আক্তার বলেন, ‘অতি দরিদ্র এই পরিবারটির পক্ষে স্বপনের চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন ধরে স্বপন মানবেতর জীবনযাপন করছে এই খবরটি আমি অবগত রয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘স্বপনের থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের একটি ঘর আর তার মেয়ের জন্য শিক্ষা সহায়তার ব্যবস্থা করবো। এছাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে আমি সরেজমিনে স্বপনের অবস্থা পরিদর্শনে যাবো।’

তারিকুল/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়