ঢাকা     রোববার   ০৫ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২২ ১৪৩১

কলেজ অধ্যক্ষকে ১৫ মিনিট ‘পেটালেন’ এমপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী   || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১১, ১৩ জুলাই ২০২২  
কলেজ অধ্যক্ষকে ১৫ মিনিট ‘পেটালেন’ এমপি

সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত

রাজশাহীর একটি কলেজের অধ্যক্ষকে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস‌্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তবে নিজের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এমপি ফারুক।

গত বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) রাত ৯টার দিকে নগরীর থিম ওমর প্লাজায় এমপির ব্যক্তিগত চেম্বারে এ ঘটনা ঘটে।

আহত কলেজ অধ্যক্ষের নাম সেলিম রেজা। তিনি গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। 

জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে ওই শিক্ষক এখনও ভীতসন্ত্রস্ত্র। চিকিৎসা শেষে নগরীর নিজ বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে অবস্থান করছেন তিনি। এমপির হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হলেও লজ্জা-আতঙ্কে কোথাও অভিযোগ করেননি বলে জানান সেলিম রেজা।

অধ্যক্ষ সেলিম জানান, বৃহস্পতিবার গোদাগাড়ীর মাটিকাটা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল আউয়াল রাজু ফোন করে উপজেলার বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষদের এমপি ফারুকের ব্যক্তিগত চেম্বারে উপস্থিত হতে বলেন। রাত ৯টার দিকে নগরীর থিম ওমর প্লাজায় এমপির ব্যক্তিগত চেম্বারে আট জন উপস্থিত হন।

জানা গেছে, এমপি ফারুক প্রথমেই অধ্যক্ষ সেলিম রেজার কাছে জানতে চান তার কলেজের একজন শিক্ষক একজন অধ্যক্ষ ও দলীয় নেতার স্ত্রীকে নিয়ে অশালীন কথাবার্তা বলেছেন। অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন। জবাবে অধ্যক্ষ সেলিম বলেন, যদি আপনার কাছে প্রমাণ থাকে আমি তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। এর পরপরই এমপি তার ফোনের রেকর্ড অন করে বিষয়টি অধ্যক্ষ সেলিমকে শুনতে বলেন। 

এরই মধ্যে এমপি ফারুক উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে বাম চোখের নিচে সজোরে ঘুষি মারেন। এরপর হকিস্টিক বের করে বেশ কয়েকটি বাড়ি দেন। এতে অধ্যক্ষের বাম হাত, কোমর ও পায়ে মারাত্মক জখম হয়। প্রায় ১৫ মিনিট সময় ধরে সবার সামনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পিটিয়ে জখম করেন তিনি। 

একপর্যায়ে অধ্যক্ষ সেলিম প্রায় অচেতন হয়ে পড়লে অন্য অধ্যক্ষদের একজন দৌড়ে এসে তাকে এমপির কবজা থেকে ছাড়িয়ে চেম্বার থেকে বের হয়ে আসেন। পরে ওই অধ্যক্ষ সেলিমকে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কয়েকজন সহকর্মীর সহায়তায় তিনি বাড়ি ফেরেন। 

অধ্যক্ষ সেলিম রেজা আরও বলেন, ‘৭ জুলাই রাতের ঘটনার পর আমি বাড়িতেই থাকছি। তবে সোমবার বিকেলে এমপির ঘনিষ্ঠ গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক বেলাল উদ্দিন সোহেল আমার বাসায় আসেন। তিনি হোয়াটসঅ্যাপে এমপির সঙ্গে কথা বলেন। পরে আমাকে ফোন ধরিয়ে দেন। এসময় এমপি সাহেব ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এমপি সাহেব সময় করে আমাকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন।’

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা নিয়ে কলেজের অনেকে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। কমিটি গঠন নিয়ে নিজেরা দ্বন্দ্ব থেকে মারামারি শুরু করেন। আমি গিয়ে তাদের থামিয়েছি।’

অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে হকিস্টিক দিয়ে কেন পিটিয়েছেন- এমন এক প্রশ্নের জবাবে এমপি বলেন, ‘ওগুলো বানানো কথা। আমি সেলিম রেজার গায়ে হাত তুলিনি। তাকে কারা মারধর করেছে এ বিষয়ে কিছুই জানি না’।

তানজিমুল/মাসুদ/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়