ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

এমপি মারধর করেননি, পাশে বসে দাবি অধ্যক্ষের

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১১, ১৪ জুলাই ২০২২   আপডেট: ১৮:২০, ১৪ জুলাই ২০২২
এমপি মারধর করেননি, পাশে বসে দাবি অধ্যক্ষের

রাজশাহীতে পিটুনির শিকার হওয়ার অভিযোগ ওঠা কলেজ অধ্যক্ষ মো. সেলিম রেজা দাবি করেছেন, সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরী তাকে মারধর করেননি। আর এ সময় আরেক কলেজের অধ্যক্ষ দাবি করেছেন, তিনিই সেলিম রেজাকে ধাক্কা দিয়েছেন। সংসদ সদস্য মারধর করেননি।

বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে মহানগরীর নিউমার্কেট এলাকায় রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। অভিযোগ ওঠে, গত ৭ জুলাই এখানেই সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি এবং হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়েছেন। সেলিম রেজা গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ।

তবে সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্যের পাশে বসে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘গণমাধ্যমে যেভাবে বলা হচ্ছে যে সংসদ সদস্য আমাকে মারধর করেছেন, তা ঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আমরা কয়েকজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ঈদ উপলক্ষে সংসদ সদস্য মহোদয়ের অফিসে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এ সময় আমাদের অধ্যক্ষ ফোরামের কমিটি গঠন এবং অভ্যন্তরীণ অন্যান্য বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য মহোদয় আমাদের নিবৃত করেন। এ ছাড়া আর অন্য ঘটনা ঘটেনি।’

মারধর না হলে ঘটনার রাতে চিকিৎসকের কাছে কেন গেলেন- অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল।’ 

এ সময় গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল আউয়াল রাজু বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে অধ্যক্ষ ফোরামের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্যের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমিই সকল অধ্যক্ষকে ফোন করে ডাকি। সেখানে ফোরামের কমিটি গঠন এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে আমিই অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ধাক্কা দেই। এ সময় সেখানে থাকা আলমারি ও চেয়ারে ধাক্কা খেয়ে সেলিম রেজা আহত হন।’ 

সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী দাবি করেন, ‘আমাকে ঘিরে বার বার চক্রান্ত হয়। আর এর পেছনে থাকেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। আমি যখন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম, তখন সম্পাদক ছিলেন আসাদ।’ 

ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘আসাদই অধ্যক্ষকে মারধরের অপপ্রচার করেছেন। এতে আমি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং পারিবারিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছি। আমার মানহানি ঘটেছে।’ তিনি এর বিচার দেন সাংবাদিকদের কাছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘অধ্যক্ষ নিজে ফোন করে আমাকে জানিয়েছেন যে, এমপি ফারুক চৌধুরী তাকে মারধর করেছেন। আমি তার বাড়ি গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। এ বিষয়ে কোন অপপ্রচার করা হচ্ছে না। যা সত্য তাই বলা হয়েছে। এখন চাপে পড়ে অধ্যক্ষ মার খেয়েও মিথ্যা বলছেন এবং এটাই চিরসত্য। তদন্ত করলেই সত্য বেরিয়ে আসবে।’ 

সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধর করেছেন বলে গত ৭ জুলাই খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে বলা হচ্ছে, গোদাগাড়ীর একটি কলেজের অধ্যক্ষের স্ত্রীকে নিয়ে রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এর বিচার করেননি অধ্যক্ষ সেলিম রেজা। ওমর ফারুক চৌধুরী ওই আপত্তিকর কথাবার্তার অডিও শুনিয়ে অধ্যক্ষকে পেটাতে থাকেন। তবে ওমর ফারুক চৌধুরী, অধ্যক্ষ সেলিম রেজা এবং সেদিন উপস্থিত থাকা অন্য অধ্যক্ষরা সংবাদ সম্মেলনে তা অস্বীকার করেন। 

তবে এই ঘটনা তদন্তে রাজশাহী এসেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) কমিটির সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন। 
 

তানজিমুল/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়