ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

যে কারণে হেরে গেলেন গোলাপ

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ৮ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৭:৩৪, ৮ জানুয়ারি ২০২৪
যে কারণে হেরে গেলেন গোলাপ

আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপ

আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে তিনি ছিলেন হেভিওয়েট প্রার্থী। ২০১৮ সালে এই আসন থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচিত হন তিনি। এরপর থেকেই নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে শুরু করেন তিনি। ভোটারদের ধারণা, নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় আওয়ামী লীগের ঘাটিতেই স্বতন্ত্র ‘ঈগল’ প্রতীকের প্রার্থীর কাছে ৩৪ হাজার ৬৬২ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন তিনি। 

মাদারীপুর-৩ আসনে আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ ‘নৌকা’ প্রতীকে পেয়েছেন ৬১ হাজার ৯৭১ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী তাহমিনা বেগম ‘ঈগল’ প্রতীকে ৯৬ হাজার ৬৩৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর-৩ আসনটি মাদারীপুরের সদরের ৫ ইউনিয়ন, কালকিনি ও ডাসার উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনের স্থানীয় রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। আওয়ামী লীগের মধ্যে রয়েছে গ্রুপিং। একাংশের নেতৃত্ব দেন আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপ, অপরাংশের নেতৃত্ব রয়েছেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম। কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যের কমিটির মাত্র ৩ জন ছিলেন গোলাপের সঙ্গে। এছাড়া মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ অধিকাংশ নেতাকর্মীর সঙ্গেই গোলাপের ভালো সম্পর্ক ছিলো না। যার কারণে নির্বাচনি প্রচার-প্রচরণায় তার সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ ও দলটির কোনো অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছিলেন না।

এছাড়া, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপের বিরুদ্ধে আমেরিকাতে অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয় স্থানীয়দের মধ্যে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, গোলাপ তার নিজ গ্রাম রমজানপুরে অসংখ্য মানুষের জমি দখল করেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। তার জবাব ভোটের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।

কালকিনি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন বলেন, টিআর এবং কাবিখাসহ বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দে সংসদ সদস্য গোলাপ এবং তার স্ত্রী গুলশান আরা বেগম ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। এইসব বিষয় উল্লেখ করে বিভিন্ন অনিয়মের ফিরস্তি তুলে ধরে ৭০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে পেশ করা হয়েছে। 

কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহীন বলেন, এখানে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়নি। পরাজিত হয়েছেন গোলাপ। তার বিভিন্ন অন্যায় ও অনিয়মের কারণে জনগণ ফুঁসে উঠেছিল। তার জবাব জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে দিয়েছে। এ কারণেই হেরেছেন তিনি।

মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মাদারীপুরের কালকিনিতে নির্বাচনি জনসভায় এসেছিলেন। এ সময় তার নির্বাচনি সভা মঞ্চে আমাদের ১১ জন নেতাকে যেতে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন কারণেই মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান গোলাপ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। তবে তার হেরে যাওয়া মানে আওয়ামী লীগের হেরে যাওয়া নয়। যিনি জয়লাভ করেছেন তিনিও আওয়ামী লীগের লোক। যিনি জয় লাভ করেছেন তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

এ বিষয় জানতে আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল রিভিস করেননি। গ্রামের বাড়ি গিয়েও তার দেখা পাওয়া যায়নি।

মাসুদ

ঘটনাপ্রবাহ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়