ঢাকা     রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

কেএনএফ’র সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সরকারের পদক্ষেপ

বান্দরবান প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ৫ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৭:১৬, ৫ এপ্রিল ২০২৪
কেএনএফ’র সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সরকারের পদক্ষেপ

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন

বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংক ডাকাতির ১৫ ঘণ্টা পর থানচি উপজেলাতেও সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে লুটপাট চালিয়েছে।

বুধবার (৩ এপ্রিল) রাত ৮টা থেকে থানচি বাজার, থানা এলাকা ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পিছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যেদের সঙ্গে কেএনএফে'র ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলি চলে। এ ঘটনা জনসাধারণের মনে ভীতি তৈরি করেছে। স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোন ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে, এমন প্রশ্ন জনসাধারণের মনে।

পাহাড়ের বম, পাঙ্খুয়া, খুমি, ম্রো ও খিয়াং নামক ক্ষুদ্র ছয়টি জাতি-গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠন করা হলেও এ সংগঠনে সিংহভাগ বম সম্প্রদায়ের। ফলে, পাহাড়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ‘বম পার্টি’ নামেই বেশ পরিচিত। সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে তৎপরতা শুরু করে। পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছর অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া ও কেএনএফ’র বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

ওই সময় বান্দরবানে রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি ও আলীকদমে কয়েক দফায় ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্থানীয় প্রশাসন। বহু আলোচনার পরে কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি’ গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে। ওই কমিটির সঙ্গে কেএনএফ'র সশরীরে দ্বিতীয় দফা ৫ মার্চ বৈঠক হয়েছিল বেথেল পাড়ায়। বৈঠকে কেএনএফ আর সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এরইমধ্যে গত মঙ্গলবার ও বুধবার রুমা-থানচি দুই উপজেলায় তিনটি ব্যাংকে ডাকাতি, গোলাগুলি ও অর্ধশত মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় কেএনএফ সদস্যরা।

সম্প্রতি কেএনএফ সদস্যরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের পর 'শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি’ শান্তির আলোচনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।  
শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রুমা ও থানচির ঘটনায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি তীব্রভাবে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির চলমান সকল ধরনের প্রচেষ্টা পদানত ও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে কেএনএফ শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে সংলাপ করার সকল ধরনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। বিধায় আগামীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এইসব সন্ত্রাসী কার্যকলাপের পর স্থানীয়দের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এলাকায় এমন পরিস্থিতি হলে বাড়িতেও থাকা যাবে না, অন্য কোথাও চলে যেতে হবে। বাড়ির বাইরেও যেতে ভয় করে। দিনদুপুরে ব্যাংক ডাকাতি, গোলাগুলির কারণে জনসাধারণ বাজারে যেতেও ভয় পাচ্ছে। সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে জনসাধারণের মনে প্রশ্ন থেকেই যাবে যে, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী করছে?

গত বুধবার দুপুরে রুমায় ব্যাংক লুটের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশের মহাপরিচালক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দুষ্কৃতকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। রুমা এবং থানচিতে ব্যাংকে হামলার ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাহাড়ে শান্তি বিনষ্টকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সকালে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং’র পরিচালক খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কেএনএফ সদস্যরা তাদের সক্ষমতা ব্যাংক লুট, অপহরণ, পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে বোঝাতে চেয়েছে। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আজ থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান শুরু করবে। যারা শান্তিপ্রিয় এলাকায় ব্যাংক ডাকাতিসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে তাদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না।

চাইমং/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়