ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ফেনীতে আবারও বন্যায় ৭৫ গ্রাম প্লাবিত 

ফেনী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫২, ২০ আগস্ট ২০২৪  
ফেনীতে আবারও বন্যায় ৭৫ গ্রাম প্লাবিত 

ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে মুহুরী, কুহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বেড়ে আবারও ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ৭৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মাত্র দেড় মাসের মধ্যে তিন বার বন্যার কবলে পড়েছে এ দুই উপজেলা।

গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি ভাঙন অংশ দিয়ে পানি ঢুকে ৭৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টায় নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম। পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপজেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

আরো পড়ুন:

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, সোমবার (১৯ আগস্ট) গভীর রাত থেকে নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। পানি বেড়ে যাওয়ায় ভাঙন অংশগুলো দিয়ে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। গত ২ আগস্ট মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭ অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। সেগুলো মেরামত করার আগেই গত দুই দিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের পানিতে ভাঙন অংশ দিয়ে আবারও লোকালয়ে পানি ঢুকেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফেলতির কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বার বার লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে গড়িমসি করার কারণে আবারও একই স্থানে ভাঙনের দেখা দিয়েছে। এখন ভাঙন স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম অলকার মাস্টারবাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধের ভাঙন অংশ দিয়ে, মির্জানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাউতলী কাশিনগর ও চম্পকনগর এলাকায় বাঁধের দুই অংশ দিয়ে, চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন, দক্ষিণ শালধর, কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের টেটেশ্বর ও সাতকুচিয়া এলাকার ভাঙন অংশ দিয়ে এবং পশ্চিম মির্জানগর এলাকার সিলোনিয়া নদীর বাঁধের ভাঙন অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ৭৫টি গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।

পরশুরামের মালীপাথর এলাকার বাসিন্দা মো. সাইফ উদ্দিন বলেন, ‘অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে ঘরবাড়ি তিন বার পানিতে তলিয়ে গেছে। এভাবে টানা বৃষ্টি হলে আমাদের অবস্থা কী হবে আল্লাহ ভালো জানেন। প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করছে। খুব কষ্টে দিন পার করছি।’ 

বীরচন্দ্র নগর এলাকার বাসিন্দা বাহার উদ্দিন বলেন, ‘এদিকের এলাকা উঁচু হওয়ায় সাধারণত বন্যার পানি প্রবেশ করে না। কিন্তু এবার ভারি বর্ষণে ঘর পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও আত্মগোপনে। এখনও কোনো ধরনের সহায়তা বা কেউ খোঁজখবরও নেয়নি।’

ফুলগাজী উপজেলার নিলক্ষী এলাকার কৃষক আলী আজম বলেন, জুলাইয়ের বন্যায় ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে যায়। নতুন করে বীজতলা তৈরি করে রোপণের কয়েক দিন পরে ২ আগস্ট আবারও পানিতে ডুবে যায়। গত দুই দিনের ভারি বৃষ্টিতে এখন নতুন করে সব জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। দেড়মাসে তিনবারের বন্যায় এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠার সুযোগ নেই।

এ ব্যাপারে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীর ১২টি ভাঙন অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে অন্তত ৯ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৫০ টন চাল মজুদ রয়েছে।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, বন্যার পানিতে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। এখনও নদীর বাঁধ উপচে প্রবল স্রোতে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। উপজেলায় ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১৮ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে।

এদিকে, গত কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিপাতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও শহরের একাধিক সড়কেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে যানচলাচল ব্যাহত হওয়ায় সাধারণ মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ফেনীতে টানা দুই দিন মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিন জেলাজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
 

সাহাব/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়