ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

তিন বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ, ৩২ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা ঠিকাদার

মেহেরপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৪:১৬, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
তিন বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ, ৩২ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা ঠিকাদার

সময়সীমা তিন বছর পার হলেও শেষ হয়নি ভবনের নির্মাণকাজ। বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। নির্মাণকাজের বাকি থাকলেও অতিরিক্ত ৩২ লাখ টাকা তুলে নিয়ে লাপাত্তা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। 

অভিযোগ উঠেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঠিকাদার যোগসাজশে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার করমদি দারুসসুন্নাহ নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার বহুতল ভবন নির্মাণকাজ শেষ না করে অতিরিক্ত ৩২ লাখ টাকা বিল তুলেছেন। বিল উত্তোলনের পরপরই নরসিংদীতে বদলি হয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। ঠিকাদার হয়েছেন লাপাত্তা। 

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে দ্রুত ভবন নির্মাণ ও দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। 

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে মাদ্রাসা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার করমদি দারুসুন্নাহ নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার ৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে চারতলা বহুতল ভবনের কাজ পায় কুষ্টিয়ার ঠিকাদার আনিসুর রহমানের প্রতিষ্ঠান। 

২০২১ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৭৫ ভাগ। তার বিপরীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫ হাজার টাকা। কাজ শেষ না করার পরও ২০২২ সালের ১২ এপ্রিলে আরো ২৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এছাড়াও কাজ শেষ হওয়ার আগেই পিজি (পার্সোনাল গ্যারান্টেড) থাকা প্রায় ১৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মুত্তাকিনের সহযোগিতায় উত্তোলন করেন ঠিকাদার। এছাড়াও কাজের শুরুতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ উঠলেও কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত না করায় কাজ চালিয়ে যায় ঠিকাদার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসার ভবন নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা মেঝে, খোলা আকাশে ও পরিত্যক্ত ভবনগুলোতে ক্লাস করছেন। 

জান্নাতুল নামের এক শিক্ষার্থী জানান, ভবন না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ও বিভিন্ন ব্যবহারিক ক্লাস থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এক রুমেই অনেকজন আবার কখনও কখনও খোলা আকাশের নিচে ও মেঝেতে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে। সঠিকভাবে লেখাপড়ার পরিবেশ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন। 

শিক্ষার্থীদের দাবি, নবনির্মিত ভবনের কাজ শেষ করে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু জাফর বলেন, “পরিত্যক্ত বিল্ডিংয়ে শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতে অনেক কষ্ট হয়। অনেক সময় ঝড়-বৃষ্টির সম্মুখীন হতে হয়। অন্যদিকে, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক ক্লাসসহ অন্যান্য ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।” 

তিনি আরো বলেন, “উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিল্ডিংয়ের কাজ দ্রুত শেষ করে হস্তান্তর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।” 

মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান বলেন, “সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কী কারণে অতিরিক্ত ৩২ লাখ টাকা বিল দিয়েছেন, সে বিষয়টি আমার জানা নেই।” 

অতিরিক্ত বিল কীভাবে দেওয়া হলো, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মেহেরপুরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে নরসিংদী জেলায় কর্মরত) গোলাম মুস্তাকিন বলেন, “ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন দুই থেকে তিনটি কাজ নেওয়ার ফলে এই বিল্ডিংয়ের কাজ করতে পারেননি।” নিজের কিছুটা দায় স্বীকার করে সংবাদটি প্রচার না করার অনুরোধ জানান সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী।

এ সময় তিনি আরো বলেন, “আনিসুর রহমানের কাজ গাংনীর নুর ইসলাম নামের এক ঠিকাদার কিনে বাস্তবায়ন করছেন।” 

নুর ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদার আনিসুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার জন্য বার বার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

ঢাকা/ফারুক/ইমন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়