সৈকতে জেগে ওঠা কংক্রিট-জিও ব্যাগ পর্যটকদের গলার কাঁটা
পটুয়াখালী (উপকূল) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

সমুদ্রে গোসলে নেমে এসব জিও ব্যাগ এবং স্থাপনার অংশ বিশেষ পড়ে থাকার কারণে প্রতিনিয়ত আহত হচ্ছেন পর্যটকরা।
কুয়াকাটায় সমুদ্র সৈকতের বুক চিরে জেগে উঠেছে পুরনো স্থাপনার অংশ বিশেষ। আর এ স্থাপনার বিম, কংক্রিট এবং শ্যাওলাযুক্ত জিও ব্যাগ এখন পর্যটকদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমুদ্রে গোসলে নেমে এসব জিও ব্যাগ এবং স্থাপনার অংশ বিশেষ পড়ে থাকার কারণে প্রতিনিয়ত আহত হচ্ছেন পর্যটকরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব কংক্রিট ও জিও ব্যাগ অপসারণের দাবি জানিয়েছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটা চৌরাস্তা থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল সৈকতের জিরো পয়েন্ট। কুয়াকাটাকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার পর কিছু স্থাপনা নির্মাণ করে সরকার। পরে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে সৈকতে ভাঙন শুরু হয়। সেই সঙ্গে স্থাপনাগুলোও ভেঙে যায়।
এসব স্থাপনার অংশ বিশেষ অপসারণ করা হলেও মাটির নিচের স্থাপনার অংশ বিশেষ এখনও অপসারণ করা হয়নি। বর্তমানে বালুক্ষয়ে বেরিয়ে এসেছে এসব স্থাপনার বিম, কংক্রিট ও ঢালাই।
এদিকে ভাঙন রক্ষায় সৈকতের দুই কিলোমিটার এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এসব ব্যাগ ছিড়ে বালু বেরিয়ে এসেছে। অনেক জিও ব্যাগের উপর শ্যাওলা জমে পিছলা হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও জিও ব্যাগ সরে গিয়ে আবার ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিনিয়ত সৈকতে সাঁতার কাটতে নেমে জিও ব্যাগের শ্যাওলায় আছাড় খেয়ে পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছেন পর্যটকরা।
এছাড়া পুরনো স্থাপনার অংশ বিশেষ জোয়ারের পানিতে তলিয়ে থাকায় গোসলে নেমে মারাত্মক জখম হচ্ছেন। ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটায় আসা অন্তত অর্ধশতাধিক পর্যটক গোসলে নেমে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পটুয়াখালীর কালিকাপুর থেকে আসা পর্যটক মো. সাগর হোসেন (২১) বলেন, “বন্ধুদের সঙ্গে সৈকতে তাড়াহুড়ো করে গোসলে নামতে গিয়ে পুরনো বিমের ঘষা থেকে পায়ের আঙ্গুল থেকে রক্ত বের হয়েছে। পরে সবাই তীরে উঠে এসেছি এবং স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ড্রেসিং করে ওষুধ খেয়েছি।”
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক জাহিদ হোসেন বলেন, “পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমরা কুয়াকাটায় এসেছি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভালো লাগলেও সৈকতের অবস্থা খুবই খারাপ। যত্রযত্র বালু ভর্তি জিওব্যাগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পিছলা হয়ে রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে পুরনো স্থাপনার অংশবিশেষ জেগে উঠেছে। আপনার কংক্রিটে আমার ছেলে রইসুল (৮) মারাত্মক জখম হয়ছে। আর যে ব্যাগ থেকে পড়ে গিয়ে আমার বৃদ্ধ বাবা কোমরে ব্যাপক ব্যথা পেয়েছে।”
কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, “কুয়াকাটাকে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণার পরে এলজিইডির বায়োগ্যাস প্লান্ট কাম রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমানে যে স্থাপনার অংশবিশেষ বেরিয়ে এসেছে সেগুলো এ ভবনের। এর আগেও বেশ কিছু ভবনের অংশ বিশেষ বেরিয়ে এসেছিল। সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে।”
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম বলেন, “পুরনো স্থাপনার অংশ বিশেষ এবং জিও ব্যাগ অপসারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। জিও ব্যাগগুলো যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ড দিয়েছিল, এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”
ঢাকা/ইমরান/এস