ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যমজ বোনের এসএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৬, ১৫ জুলাই ২০২৫  
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যমজ বোনের এসএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন

বাবা-মায়ের সাথে আভা ও আফিয়া

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যমজ দুই বোন আভা ও আফিয়া এবার এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। এমনকি ইংরেজি পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের মধ্যে দুই বোনই ১৯৫ করে নাম্বার পেয়েছেন।

উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যমজ দুই বোন সরকারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। জন্ম থেকেই তারা চোখে কম দেখেন। দূরের কিছু দেখতে পান না, কাছ থেকে বই সামনে এনে পড়তে হয়। সব সীমাবদ্ধতা পেছনে ফেলে এই সাফল্য তাদের বড় এক অর্জন।

শিক্ষার্থী আফিয়া আক্তার বলেন, “লেখাপড়ার সময় আমার চোখের সমস্যাটাই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। বোর্ডে লেখা ঠিকমতো দেখতে পেতাম না। স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তা পার হতে ভয় লাগত। অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। আগামীতে ভালো কলেজে ভর্তি হয়ে এইচএসসিতেও ভালো ফল করতে চাই। ভালো রেজাল্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে বিসিএস পাশ করে একজন শিক্ষক হতে চাই।”

অপর বোন আভা আক্তার বলেন, “আমার চোখের সমস্যা লেখাপড়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কখনো মনোবল ভাঙেনি। দূর থেকে বই পড়তে পারি না, খুব কাছে এনে পড়তে হয়। স্কুলে যাওয়া, রাস্তা পার হওয়াসহ সকল কিছুতেই আমার সমস্যা হয়েছে। অনেক কষ্ট করেছি, তবুও থেমে থাকিনি। আমার স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার হব।”

তাদের পিতা প্রকৌশলী গোলাম আক্তার বলেন, “জন্ম থেকেই আমার দুই মেয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। মেয়েরা অনেক কষ্ট করে এসএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। এই জায়গায় আসতে ওদের খুব কষ্টকর ছিল। আমি এবং ওদের মা হাতে ধরে স্কুলে নিয়ে যেতাম। অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত থাকলেও কোচিং থেকে আনতাম। ওদের বন্ধুরা অনেক সহযোগিতা করেছে। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে পড়তে বসতো। এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত লেখাপড়া করতো। আমি বলতাম, এত রাত পর্যন্ত পড়লে চোখের অবস্থা আরও খারাপ হবে। কিন্তু ওরা বলতো, পড়াশোনা না করলে কিছুই হবে না। আমি চাই ওরা ভালো কলেজে ভর্তি হোক। বিসিএস দিয়ে ক্যাডার হোক।”

তাদের মা তানিয়া শাবনাজ বলেন, “ছোট থেকেই দুই বোনের চোখে সমস্যা ছিল। বাসায় আলাদা দুইজন শিক্ষক রাখা হয়েছিল। ওরা পড়াশোনা ছাড়া কিছু বোঝে না। আমরা চেষ্টা করেছি সাহস দিতে। ওরা নিজেদের জন্য যেভাবে লড়েছে, সেটা অনেক বড় ব্যাপার। আমি ওদের ফলাফলে অনেক খুশি। দোয়া করি, ওরা দুই বোন যেন সামনে আরও ভালো করতে পারে।”

শাহজাদপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক ফারজানা ইয়াসমিন বলেন, “ওরা চোখে কম দেখে, কিন্তু পড়াশোনায় চমৎকার। ইংরেজির মতো বিষয়ে ২০০ নম্বরের মধ্যে ১৯৫ পেয়েছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা তাদের থামিয়ে রাখতে পারে নাই। যদি সঠিকভাবে সহায়তা পায়, তাহলে বিসিএসের স্বপ্ন বাস্তব হবেই।”

ঢাকা/অদিত্য/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়