ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘আমার ছেলেরে যারা গুলি করে মেরেছে, সে যেন হাজার গুলি খেয়ে মরে’

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৫, ১৮ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ১৬:২৪, ১৮ জুলাই ২০২৫
‘আমার ছেলেরে যারা গুলি করে মেরেছে, সে যেন হাজার গুলি খেয়ে মরে’

সন্তান হারিয়ে দীপ্ত সাহার মা বিভা রানী সাহার আহাজারি

“আমার ছেলেরে যারা গুলি করে মেরেছে, সে যেন হাজার গুলি খেয়ে মরে। আমি যেন মরার আগে দেখে যেতে পারি আমার ছেলের হত্যাকারী হাজার গুলি খেয়ে মরেছে। তাহলে আমার আত্মা শান্তি পাবে।’’

সন্তানের মৃত্যুতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিলাপ করছিলেন গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে গুলিতে নিহত দীপ্ত সাহার মা বিভা রানী সাহা।

তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে ওরা গুলি করে মারলো, আমার সোনার ছেলের কত স্বপ্ন ছিল ওরা তা পূর্ণ করতে দিলো না। বিয়ে করবে, কত আশা করে বাড়ি বানালো কিন্তু বিয়ে করে বউকে আর আনতে পারলো না। মেয়ে দেখেছি, আমার বাবাকে ধুমধাম করে বিয়ে দেব, সেই আশা আর আমার পূরণ হলো না। ওতো দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিল। ওর কী দোষ ছিল যে ওকে গুলি করে মারতে হবে?”

বুধবার (১৬ জুলাই) এনসিপির সমাবেশ শেষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা।

দীপ্ত সাহার ভাই সঞ্জয় সাহা শুভ বলেন, “আমার ভাই ব্যবসায়ী। মারামারি বা গোলাগুলি শুরু হলে আমাদের চৌরঙ্গী রোডের চন্দ্রমুখী গার্মেন্টস বন্ধ করে বাসায় ফিরছিল। দীপ্ত চৌরঙ্গীর মিলন ফার্মেসির কাছে পৌঁছলে হঠাৎ ওর পেটের বাম পাশে গুলি লাগে। আমাকে রমেশ নামে একজন ফোন দিয়ে জানালে আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি ভাইকে অপারেশন থিয়েটারে নিচ্ছে। আমি ভাইকে বলি তুই ভালো হয়ে বাড়ি ফিরবি। ভয় করিস না। কিন্তু পাঁচ মিনিট পর খবর আসে আমার ভাই আর বেঁচে নাই।”

তিনি বলেন, “এই বিচার কার কাছে দেব? বিচার চাওয়ার জায়গা আমাদের নাই। তাই ভগবানের কাছে বিচার চাই। এর যেন সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়।”

দীপ্ত সাহার বৌদি তিথি সাহা বলেন, “বর্তমান সমাজে আমার দেবরের মতো ছেলে পাওয়া খুবই কষ্ট। ভালোরাই এভাবে চলে যায়। কিন্তু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাবে এটা কাম্য নয়। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।”

একই দিনে গুলিতে নিহত হন শহরের বেদগ্রামের বাসিন্দা মো. ইদ্রিস মোল্লার ছেলে সোহেল মোল্লা। তিনি শহরের কেরামত আলী প্লাজার মোবাইল ব্যবসায়ী। হইহুল্লো শুনে দোকান থেকে বেরিয়ে কিছু দূরে চৌরঙ্গীতে গিয়েছিলেন ঘটনা দেখতে। এ সময় তিনটি গুলি এসে লাগে তার বুকে, পায়ে ও পেটে। বিষয়টি জানান সোহেলের বাবা ইদ্রিস মোল্লা।

সোহেলের মা লাইলী বেগম ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে শুধু কেঁদেই চলেছেন। কারো সঙ্গে কথা বলছেন না। সাংবাদিক দেখলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন, আর চিৎকার করে সোহেলের নাম ধরে ডাকেন।

সোহেল ও নিশি বেগম দম্পত্তির দুই ছেলে রাইয়ান মোল্লা (৫) ও দেড় বছরের সোহান ইসলাম নিহান। সন্তানদের জড়িয়ে ধরে নিশি শুধুই কাঁদছেন আর বলছেন, ‘‘এদের আমি কী জবাব দেব? ওরা তো বাবাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। এদের আমি কীভাবে বাঁচাব? আল্লাহর কাছে শুধু বলি এই হত্যাকারীদের যেন এভাবেই মৃত্যু হয়।”

গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। পরে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন, দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (২৪), ইমন তালুকদার (১৮), সোহেল মোল্লা এবং অটোরিকশা চালক রমজান মুন্সী (৩২)।

ঢাকা/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়