ছুটির দিনে সমুদ্রসৈকতে আনন্দে মেতেছেন হাজারো পর্যটক
তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম
স্মৃতি ধরে রাখতে কক্সবাজার সৈকতে ভ্রমণের ছবি তুলছেন এক দম্পতি
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। গরম ও ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি ভুলে হাজারো পর্যটক পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ছুটে এসেছেন নীল জলের শহরে। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে তারা মেতে উঠেছেন হাসি-আনন্দ আর প্রাণের উচ্ছ্বাসে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেলে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রের জলে প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ করছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা। কেউ কোমর সমান পানিতে নেমে উপভোগ করছেন ঢেউয়ের আলিঙ্গন, আবার কেউ সাগরের পাড়ে খালি পায়ে হেঁটে খুঁজে নিচ্ছেন প্রশান্তি। শিশুরা ভেজা বালু দিয়ে গড়ে তুলছিল রূপকথার মতো প্রাসাদ।
ঢাকার ইমন, হোসেন ও সূর্য সিরাজদিখান ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কক্সবাজার এসেছেন। ইমন বলেন, “আমরা ৪৫ জনের একটি দল কক্সবাজারে এসেছি আজ শুক্রবার সকালে। আজ দিনভর সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করছি। আগামীকাল হিমছড়ি, পাটোয়ারটেক ও ইনানী ঘুরে দেখার পরিকল্পনা রয়েছে। হোটেল ভাড়া ও খাবারসহ সবকিছুই বেশ মানসম্মত, এই দিক থেকে কোনো অভিযোগ নেই।”
সৈকত পাড়ে রূপকথার প্রাসাদ তৈরিতে ব্যস্ত দুই শিশু
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক ফারদিন হোসেন রবিন বলেন, “ব্যস্ত জীবনে কিছুটা প্রশান্তির জন্য কক্সবাজার সবসময়ই আমার প্রথম পছন্দ। আজকের দিনে সৈকতের সৌন্দর্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভালো লেগেছে।”
সিরাজগঞ্জের রেহেনা আক্তার বলেন, “বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজারে ছুটি কাটাতে এসেছি। সমুদ্রের ঢেউ আর বালুর ছোঁয়ায় মন ভালো হয়ে গেছে। সুন্দর আবহাওয়ায় আমরা নির্বিঘ্নে ঘুরতে পারছি।”
ট্যুরিস্ট পুলিশের হিসাবে, এদিন অন্তত ২০ হাজার পর্যটক ঘুরতে এসেছেন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন রয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন লাইফগার্ড, বিচকর্মী এবং নতুন সংযুক্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স ও গোয়েন্দা সদস্যরা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ রাইজিংবিডিকে বলেন, “শুক্রবার ও শনিবারকে কেন্দ্র করে আমরা পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করেছি। সাগরে নামার আগে ও পরে সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। লাইফগার্ড এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়মিত টহল দিচ্ছে সৈকতে।”
শহরের হোটেল-মোটেল জোনেও পর্যটকদের আনাগোনা কিছুটা বেড়েছে। অনেক হোটেলে কয়েকদিনের তুলনায় বুকিং ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
হোটেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম বলেন, “অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পর্যটক রয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো রেল যোগাযোগ উন্নত। ট্রেনে করে পর্যটকরা নির্বিঘ্নে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারছেন।”
তিনি আরো বলেন, “ছুটির দিনগুলোতে পর্যটক বাড়লে আমাদের ব্যবসায়েও গতি আসে। পরিবেশ ঠিক রাখতে সবারই সচেতন হওয়া দরকার।”
সমুদ্রে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে লাইফগার্ডরা সজাগ রয়েছেন। তাদের কয়েকজন জানান, সকাল থেকে তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। পর্যটকরা গভীর পানিতে যাওয়ার চেষ্টা করলে তারা নিরুৎসাহিত করছেন। লাল পতাকা ও বাঁশি বাজিয়ে পর্যটকদের সচেতন করছেন।
গত ৮ জুলাই সকাল ৭টার দিকে হিমছড়ি সৈকতে গোসলে নেমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরিত্র হাসান নিখোঁজ হন। ১১ দিনেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/মাসুদ