ঢাকা     সোমবার   ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রাজবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থানে দুর্বৃত্তের আগুন 

রাজবাড়ী সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৩, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৬:৫৫, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
রাজবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থানে দুর্বৃত্তের আগুন 

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার তারাপুর কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত অংশে আগুন দি‌য়ে‌ছে দুর্বৃত্ত। 

রবিবার (৭ ডিসেম্বর) ভোররাতে দুর্বৃত্তরা কবরস্থানটির বাঁশের সীমানা প্রাচীরে আগুন দেয় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফজরের ওয়াক্তে মসজিদে মুসুল্লিরা নামাজ পড়তে এলে কবরস্থানে আগুন দেখতে পায়। মসজিদের মাইকে আগুনের সংবাদ জানার পর স্থানীয়রা এসে আগুন  নেভায়। 

এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী একে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের পরিকল্পিত নাশকতা হিসেবে দেখছেন। তাদের অভিযোগ— যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মানে না, তারাই এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজ করতে পারে। 

জানা যায়, তারাপুর কবরস্থানটি ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় তিন একর জমির ওপর অবস্থিত এ কবরস্থানে ২০২২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দুই শতাংশ জায়গা আলাদা করে বাঁশের সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হয়। বর্তমানে সেখানে পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে।

তারাপুর জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন ও কবরস্থানের কেয়ারটেকার শহিদুল ইসলাম জানান, ফজরের নামাজের আযান দিতে যাওয়ার সময় তিনি আগুন দেখতে পান। পরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে স্থানীয়রা ও হেফজখানার শিক্ষার্থীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

তিনি বলেন, “এটি দুর্ঘটনা নয়। কবরস্থানে বিদ্যুৎ নেই, আশপাশেও আগুন ধরার কোনো উৎস নেই। এটি স্পষ্টভাবে পরিকল্পিত নাশকতা।”

বাহাদুরপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা মো. সমশের আলী বলেন, “একটি স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর পর্যন্ত এখন হামলার শিকার হচ্ছে। মনে হচ্ছে, ৭১-এর পরাজিত শক্তিরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”

পাংশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সদস্য সচিব ও সাবেক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম খান জাহাঙ্গীর বলেন, “এ ধরনের ঘটনার বিচার না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্তিত্ব ঝুঁকিতে পড়বে। বিজয়ের মাসে এমন ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।”

বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ঈদগাহ্ কবরস্থানের সভাপতি সজীব হোসেন বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ঘটনাস্থলে এখনও কেরোসিনের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। স্বাধীনতা-বিদ্বেষীরাই এ কাজ করেছে। আমরা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি।”

পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিফাতুল হক বলেন, “ঘটনাস্থলে গিয়ে মনে হয়েছে আগুন ইচ্ছাকৃতভাবে লাগানো হয়েছে। এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি এবং পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

ঘটনাটি এলাকায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ তৈরি করেছে। স্থানীয়রা দ্রুত তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
 

ঢাকা/রবিউল//

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়