ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে নোবিপ্রবিতে স্থাপনার দাবি

এস আহমেদ ফাহিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৪৩, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে নোবিপ্রবিতে স্থাপনার দাবি

নোয়াখালী জেলার কৃতি সন্তানদের মধ্যে একজন বীরশ্রেষ্ঠ মো. রুহুল আমিন।

তিনি ছিলেন অদম্য এক সাহসী যোদ্ধা। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে ৭ জন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়, তিনি তাদের অন্যতম। তার এই অবদানের জন্য আজীবন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকলেও প্রতিষ্ঠার দেড় যুগেও বৃহত্তর  নোয়াখালীর শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ  নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর নামে কোনো  স্মৃতিস্তম্ভ, ভাস্কর্য, স্থাপনা বা অবকাঠামো তৈরি হয়নি।

বীরশ্রেষ্ঠ  রুহুল আমিন ১৯৩৫ সালে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার বাঘপাঁচড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আজহার পাটোয়ারী এবং মায়ের নাম জোলেখা খাতুন। তিনি ছিলেন বাবা মায়ের প্রথম সন্তান। তারা ছিলেন ৬ ভাইবোন। তিনি বাঘপাঁচড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে আমিষাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখান থেকে এসএসসি পাস করে ১৯৫৩ সালে জুনিয়র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পাকিস্তান নৌবাহিনীতে যোগদান করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় রুহুল আমিনের কর্মস্থল ছিল চট্টগ্রাম। দেশের টানে, দেশকে শত্রুমুক্ত করতে নৌঘাঁটি থেকে বেরিয়ে  পড়েন তিনি। যোগদান করেন মুক্তিযুদ্ধে। অংশ নেন জল ও স্থলযুদ্ধের বিভিন্ন অভিযানে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সেক্টর ও সাব-সেক্টর থেকে নৌবাহিনীর সদস্যদের একত্রিত করে গঠন করা হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

যুদ্ধকালীন নৌবাহিনীর গানবোট ‘পলাশ’ এর প্রধান ইঞ্জিনরুমে আর্টিফিসার হিসেবে দায়িত্বপালন করেন মোহাম্মদ রুহুল আমিন। এসময় ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর গানবোট ‘পলাশ’ বাঁচানোর চেষ্টায় শহীদ হন তিনি। দেশকে মুক্ত করার জন্য দায়িত্বকে যিনি সবচেয়ে পবিত্রতম মনে করেছেন, তিনি আর্টিফিসার বীরশ্রেষ্ঠ  রুহুল আমিন। তিনি অন্য সবার মতো অধিনায়কের নির্দেশে অনায়াসে জাহাজ ত্যাগ করে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিজের জীবন বাঁচাতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। নিজের প্রাণের চেয়েও মূল্যবান ভেবেছেন নিজের রণতরীকে। তিনি করে গেছেন জীবন দিয়ে যুদ্ধ। তাই তিনি শহীদ, পরম গৌরব, বীরশ্রেষ্ঠ এবং বাংলার পতাকার রক্তিম পলাশ।

তার স্মৃতি রক্ষার্থে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তায় স্মৃতিস্তম্ভ, সোনাইমুড়ির জন্মস্থানে পাঠাগার, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিক শাখার নামকরণ ছাড়া জেলায় আর তেমন কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হয়নি। নোয়াখালীতে তাঁর নামে কোনো কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেডিয়াম বা বড় কোনো ভবন প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের নিজ জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পার করতে যাওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হন। অথচ অনেক শিক্ষার্থীই জানেন না নোয়াখালীতে একজন বীরশ্রেষ্ঠ আছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচটি আবাসিক হল, অডিটোরিয়াম, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, একটি নির্মাণাধীন একাডেমি ভবনসহ ৩টি একাডেমি ভবন থাকলেও কোনোটির নামকরণেই ঠাঁই পায়নি এই বীরশ্রেষ্ঠের নাম।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থী ও নানা অঙ্গ সংগঠনের দীর্ঘদিনের দাবি, জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের নামানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনা, স্মৃতিস্তম্ভ কিংবা ভাস্কর্য করার জন্য অতিদ্রুত যেন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের পরিবারের সঙ্গে কথা হলে তার দৌহিত্র সোহেল চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন এর নামে হবার কথা ছিল। কিন্তু তখনকার রাজনৈতিক ফ্যাসাদে তা আর হয়নি। এ নিয়ে আমাদের কোনও আফসোস নেই। আজ হোক আর ৫০ বছর পর হোক, জাতি ঠিকই এই নামগুলো খুঁজে নেবে। তাদের নিজেদের পরিচয়ের জন্য, নিজের ইতিহাসের জন্য।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান  বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান আরিফ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ও স্বাধীনতা যুদ্ধ শিক্ষা’ নামে বিষয়ে পাঠদান করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লালন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মানপ্রদর্শন করার চেষ্টা করা হলেও বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীনকে কোনোভাবে স্মরণীয় করে রাখতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কিছুতে ঠাঁই মেলেনি তার। তাই একজন শিক্ষার্থী হিসেবে প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, যেন তার  নামে একটি স্থাপনার নামকরণ করে আমাদের কাছে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীনকে সবসময়ের জন্য স্মরণীয় করে রাখেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মমিনুল হক জানান, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন শুধু নোয়াখালী জেলার নয়, গোটা জাতির। তার নাম বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকাটা আসলেই দুঃখজনক। তার নামে স্থাপনার নামকরণের প্রস্তাব কয়েকবার উঠেছিল।’

এ বিষয়ে সদ্য নিযুক্ত (৫ মাস) নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম বলেন, ‘বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের নামে এখন পর্যন্ত কেন কিছু করা হলো না, সেটা আমাদের এক ধরনের ব্যর্থতা। যাইহোক, আমার আগের কেউ, হয়তো যেকোনো কারণেই করতে পারেনি। এখন যখন এটা আমার দিকে আসছে, আমি এটা নিয়ে কাজ করবো।’



নোবিপ্রবি/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়