ঢাকা     শনিবার   ১৮ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

১১৫ বছরে গফরগাঁও ইসলামিয়া সরকারি হাই স্কুল

তৌহিদুজ্জামান অন্তর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ১৭ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
১১৫ বছরে গফরগাঁও ইসলামিয়া সরকারি হাই স্কুল

বিংশ শতকের শুরুর দিকে শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়া গফরগাঁওয়ের মানুষকে অজ্ঞতা ও কুসংস্কার থেকে মুক্তি দিতে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন শিলাসী গ্রামের নাসির উদ্দিন খাঁন। বাল্যকালে পিতৃহারা জ্ঞান পিপাসু এই ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও ছিলেন স্বশিক্ষিত। শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করতেন তিনি। উন্নত ও সভ্য সমাজ বিনির্মাণে এবং নিজের জন্মস্থানের মানুষকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার তাগিদ অনুভব করেন এ শিক্ষানুরাগী।

এই স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য এনট্রান্স পরীক্ষায় পাস করা ভারইল গ্রামের মৌলভি ছাবেদ উল্লাহ মাস্টারের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনে অনুরোধ করেন তাকে। খাঁন সাহেবের প্রস্তাব মেনে তিনি অবৈতনিক শিক্ষকতা করবেন বলে জানান। এরপর ১৯০৬ সালের ১০ আগস্ট বর্তমান ডাকবাংলোর নিকট প্রাচীন বটতলায় ‘গফরগাঁও ইসলামিয়া ইংরেজি উচ্চবিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন।

বিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে নাসির উদ্দিন খাঁন কখনো দমে যাননি। প্রতিষ্ঠার পর পরিচালানা ও যাবতীয় ব্যয় নির্বাহে প্রচুর অর্থ ও সম্পত্তি দান করেন তিনি। বর্তমানে গফরগাঁও ইসলামিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গফরগাঁও ইসলামিয়া সরকারি হাইস্কুল, মার্কাজ মসজিদ ও গফরগাঁও সরকারি কলেজের জায়গা তারই দেওয়া।

প্রতিষ্ঠালগ্নে ছাত্র পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। ফলে তিনজন ছাত্র দিয়ে শুরু হয় যাত্রা। সেই তিনজন সৌভাগ্যবান ছাত্র ছিলেন রাঘাইচটি গ্রামের দুই চাচাতো ভাই- আহমদ আলী এবং জনাব আবেদ আলী ও অন্যজন কাজী গ্রামের আব্দুর রহমান। মৌলভি সাহেব প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়ার পর কামিনীকান্ত সোম ও বশরত খান শিক্ষকতার মহান কাজে যোগদান করেন।

‘ইসলামিয়া’ নামকরণের কারণে প্রথমেই স্থানীয় হিন্দু জমিদারদের প্রবল বাঁধার সম্মুখীন হয় বিদ্যালয়টি। খাঁন সাহেব কোন্দলে না জড়িয়ে সলিমুল্লাহ, মৌলভি ইসমাইল খাঁন, মৌলভি আব্দুল খালেক, ধনবাড়ির নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরি ও মোহনগঞ্জের মুন্সি ইব্রাহিম খাঁনের সহায়তা কামনা করেন।

তারা কলকাতা বিভাগীয় পরিদর্শকের নিকট বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সুপারিশ করেন। এরই অংশ হিসেবে নাসির উদ্দিন খাঁন সাহেব ও মৌলভি ছাবেদ উল্লাহ সাহেব কলকাতা বড়ো লর্ড সাহেবের অফিসে সশরীরে গিয়ে বিদ্যালয়ের নাম ‘ইসলামিয়া’ করতে অনুমতি প্রার্থনা করেন। লর্ড অনুমতি দেন।

তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার সহকারি প্রশাসক মিস্টার সেক্সি সাহেব ১৯০৮ সালে মৌলভি হালিম সাহেবের মক্তবটিকে একত্রিত করে ‘গফরগাঁও ইসলামিয়া ইংরেজি উচ্চবিদ্যালয়’ নামকরণ করে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। এই নামেই বিদ্যালয়টি এগিয়ে চলে। 

১৯৩০ সালে নাসির উদ্দিন খাঁন, নওয়াব আলী চৌধুরি, খান বাহাদুর ইসমাইল, আব্দুল খালেক ও ছাবেদ উল্লাহ এই পাঁচজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে বিদ্যালয়টি দেখাশোনা করেন। উপজেলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে সহজেই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে বিদ্যালয়টি ১৯৮৫ সালের ১ জুন সরকারিকরণ করা হয়।

উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন ছাত্ররা হচ্ছেন

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রীড়া, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এ প্রতিষ্ঠান গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখে চলছে। কৃতি ছাত্রদের মধ্যে যারা স্মরণীয়, তারা হলেন গিয়াস উদ্দিন পাঠান (পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী), তোফাজ্জল হোসেন (পূর্ব পাকিস্তানের যোগাযোগ উপ-সচিব), তাশারফ হোসেন (তৎকালীন প্রাদেশিক সরকারের যুগ্ম-সচিব), আব্দুল মোমেন (প্রাদেশিক সরকারের জেলা প্রশাসক ও সংস্থাপন বিভাগের উপ-সচিব), হাফিজুর রহমান (পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের অন্যতম সদস্য)।

গত ১০ আগস্ট ছিল এই ঐতিহ্যবাহী স্কুলের ১১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে প্রতিষ্ঠাতা সব শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ও শিক্ষককে জানাই শ্রদ্ধা ও সালাম।

লেখক: শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা কলেজ।

ঢাকা/মাহফুজ/মাহি

রাইজিংবিডি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়