ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জাবিতে অতিথি পাখির শুভাগমন 

শেখ তাজুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৩, ৩১ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৫:১০, ৩১ অক্টোবর ২০২০
জাবিতে অতিথি পাখির শুভাগমন 

শীত আসতে না আসতেই এই নগরে নেমে এসেছে কুয়াশা। দু’চারদিন ধরে হালকা পোশাকে মাঝ রাতে রাস্তায় বেরিয়ে রীতিমতো কাঁপুনি ধরার উপক্রম। এমন পরিবেশে কিসের যেন অপূর্ণতা অনুভব করছিল দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টি। বলছি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। 

অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি উড়ে এসে সেই অপূর্ণতার অবসান ঘটিয়েছে ক্যাম্পাসে। নগরের লাল পদ্ম শোভিত লেকগুলোয় জলকেলি ও কলকাকলিতে মুখরিত করে জানান দিচ্ছে তাদের উপস্থিতি।

ক্যাম্পাসের চারদিকে এখন উঠছে পাখিদের কলরব। নিজ আনন্দে তারা গান গেয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে এক লেক থেকে অন্য লেকে। এমন আচরণে মনে হচ্ছে যেন কোনো উৎসবে মেতেছে তারা। কেউ সাঁতার কাটছে, কেউ ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে শাপলা পাতার ওপর, কেউ আবার খুঁজছে খাবার, কারো বা অন্যদের সাথে খুনসুটি করেই কাটছে সময়। এই সুবর্ণনগরে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আপন মনে বিচরণ তাদের।

শিক্ষার্থী শূন্য ক্যাম্পাসে এ যেন তাদেরই রাজত্ব। সবচেয়ে বেশি পাখির দেখা মিলছে ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার, মনপুরা, বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতরের লেকগুলোয়। এছাড়া ট্রান্সপোর্টের পাশের কিংবা রেজিস্ট্রারের পেছনের লেকেও তাদের আধিক্য চোখে পড়ার মতো।

হিমালয়ের উত্তরের সুদূর সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপাল প্রভৃতি দেশ থেকে প্রচন্ড তুষারপাতের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে না পেরে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে শীতের শুরুতেই আসতে শুরু করে এসব পাখি।

অতিথি পাখিদের অধিকাংশই হাঁসজাতীয়। এর মধ্যে পাতি সরালি, পান্তামুখী, পাতারি, পচার্ড, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, গার্গেনি, কোম্বডাক, পাতারী হাঁস, জলকুক্কুট, খয়রা, ফ্লাইফেচার ও কামপাখি প্রধান। এছাড়া লাল গুড়গুটি, নর্দানপিনটেল, কাস্তে চাড়া, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, মানিকজোড়, খঞ্জনা, চিতাটুপি, বামুনিয়া হাঁস, নাকতা, লাল গুড়গুটি, নর্দানপিনটেল ও কাস্তে চাড়া প্রভৃতি নামের হাজার হাজার পাখিও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসে এই ক্যাম্পাসে।

করোনায় দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ ক্যাম্পাস। তবুও চলার পথে দেখা মিলছে কিছু শিক্ষার্থীর। নিজ ক্যাম্পাসে আসা অতিথি পাখি সম্পর্কে ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা জানালেন ৪৭তম আবর্তনের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম তুহিন। 

তিনি বলেন, ‘এই পাখিগুলো জাহাঙ্গীরনগরে অতিথি নয় বরং তারা আমাদের ক্যাম্পাসের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের ঘুরিয়ে দেখানোর ও গর্ব করার মতো অনেক উপাদানের ভেতর অতিথি পাখি অন্যতম। তাছাড়া পাখিদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। শীতের শেষে যখন পাখিরা নিজ গন্তব্যে উড়াল দেয়, তখন আমারও স্মরণ হয় এই পৃথিবীতে আমিও স্থায়ী নই। আমাকেও চলে যেতে হবে।’

পাখিরা ভয় পায় এমন কাজ থেকে বিরত থাকেন শিক্ষার্থীরা বলেও জানান তিনি। 

৪৩তম আবর্তনের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জেনিফার এহসান বলেন, ‘পাখি দেখতে আসা দর্শনার্থীরা মাঝে মাঝেই নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি পার্কিং করেন না। গাড়ি নিয়েই চলে আসেন লেকগুলোর কাছে। এছাড়া মোটরচালিত যানবাহনগুলো উচ্চশব্দে হাইড্রোলিক হর্ন দিয়ে থাকে, ফলে পাখিরা অনেক ভয় পায়। এ ব্যাপারগুলোয় প্রশাসনের আরও মনোযোগী হওয়া উচিত। যদিও এ বছর ক্যাম্পাসে মোটরচালিত রিকশা চলছে না, কিন্তু ঢুকতে পারছে গাড়ি।’

পাখিদের নিরাপত্তা ও অবাধ বিচরণের জন্য প্রশাসন থেকে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লেকগুলো পরিষ্কার রাখা, উচ্চ শব্দে হর্ন না বাজানো, বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন টানানো ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও।

এদিকে দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় আগের বছরের চেয়ে এ বছর ক্যাম্পাসে অতিথি পাখির সংখ্যা বেশি থাকবে বলে আশা করছেন পাখি গবেষকরা। তাদের ধারণা শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই ক্যাম্পাসেও বাড়তে থাকবে অতিথি পাখির সংখ্যা। ডিসেম্বরের শুরু থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অতিথি পাখির উপস্থিত লক্ষ করা যেতে পারে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। 

জাবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়