ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গুণীদের বায়োগ্রাফি হতে পারে চলচ্চিত্রের সম্ভাবনা

নুর মোহাম্মদ শাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২১, ১৩ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৩:২৭, ১৩ জানুয়ারি ২০২১
গুণীদের বায়োগ্রাফি হতে পারে চলচ্চিত্রের সম্ভাবনা

কিছু দিন আগে বলিউডের একটা সিনেমা দেখলাম, নাম ‘সুপার ৩০’। সিনেমাটির কাহিনী নির্মিত হয়েছে ‘আনন্দ কুমার’ নামের এক শিক্ষকের মহৎ উদ্যোগের কাহিনী নিয়ে। যিনি অনেক বাঁধা-বিপত্তির পরও তার মহৎ উদ্যোগ বন্ধ করেননি। ইদানিং দেখা যাচ্ছে বলিউডে বিভিন্ন সফল ব্যক্তিদের জীবনী ও মহৎ উদ্যোগের উপর সিনেমা বানাচ্ছে। ফলে গুণী ব্যক্তি, দেশে তাদের অবদান ও উদ্যোগ সম্পর্কে সহজে জানা যাচ্ছে, যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয়। 

চলচ্চিত্র হচ্ছে একটি দেশের শক্তিশালী মাধ্যম। এর মাধ্যমে যদি কোনো নির্দিষ্ট বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলে সেটা সহজে মনে গেঁথে যায়। যেমন- শিক্ষক আনন্দ কুমারকে যখন প্রভাবশালীদের ভাড়াটে খুনি দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়, তখন আনন্দ কুমার সাংবাদিককে একটি অনুরোধ করেছিলেন, যদি তার খারাপ কিছু হয়ে যায় তাহলে যেন সে তার এই সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ না করে। যেন তার মতো আরো যারা বিপ্লবী আছেন, তারা যেন তার এই সংবাদ শুনে তাদের উৎসাহ না হারান।

এমনভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক মহান ব্যক্তিত্ব আছেন আমাদের দেশে। তারা তাদের নিজের স্বার্থকে না দেখে দেশের মানুষের কথা ভেবেছেন, দেশে ফিরে এসেছেন বিদেশের লোভনীয় প্রস্তাবকে না বলে। যেমন, জামান নজরুল ইসলাম স্যার। তিনি বিশ্বে জেএন ইসলাম নামে পরিচিত এবং বিজ্ঞানীমহলে বাংলাদেশ জেএন ইসলামের দেশ নামে পরিচিত। 

১৯৮৩ সালে প্রকাশিত তার ‘দি আলটিমেট ফেইট অব দি ইউনিভার্স’ বইটি ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অভ্ টাইম’ এর চেয়ে যে কোনো বিবেচনায় শ্রেষ্টতর। অথচ আমরা কতজনই এই বইটির নাম বা এ সম্পর্কে জানি! এমন আরো অনেক মহান ব্যক্তিত্ব আমাদের দেশে রয়েছেন, অনেককে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু তাদের কতজনকে আমরা তাদের প্রাপ্য সম্মনটুকু দিতে পেরেছি? ‘আমরা আমাদের জ্ঞানীদের সম্মান করতে পারি না’ এ দিক দিয়ে আমাদের যথেষ্ট দুর্নাম রয়েছে। আবার অনেকে কিছু সম্মাননা পান মৃত্যুর পরে। কিন্তু তাদের কর্মজীবন, ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে আমরা কতজনই জানি? 

তাদের কাছ থেকে শেখার অনেক কিছু আছে কিন্তু তা জানার বা জানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে কতটুকু? এ ক্ষেত্রে তাদের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র একটি প্রচার মাধ্যম হবে। কারণ, তাদের জীবনবৃত্তান্ত বই আকারে প্রকাশ করা হলে, তা শুধু শিক্ষিত সমাজের কিছু অংশের কাছেই ব্যাপ্তি লাভ করবে। অন্যদিকে, তাদের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র তৈরি হলে তা সব শ্রেণির মানুষের কাছেই খুব সহজে পৌঁছাবে। তাই বলে আমি বই প্রকাশের বিপক্ষে নই। বই প্রকাশের পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণ হলে, তা সর্বশ্রেণির মানুষের কাছে সহজেই পৌঁছায়। কারণ, এখন বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে, কোনো একটি বিষয়ে জানার জন্য মানুষ বই পড়ার চেয়ে যদি ইউটিউবে সেই বিষয়টি পেয়ে যায়, তাহলে সেখান থেকেই মানুষ তথ্য সংগ্রহের দিকে বেশি প্রাধান্য দেয়। আর বিনোদনের মাধ্যে কোনো বিষয় জানলে সেই বিষয়টি মানব মস্তিষ্কে বেশি প্রভাব ফেলে। 

বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। এ শিল্পকে ভালো অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। হল মালিক সমিতি হল বাঁচাতে ভারতীয় হিন্দী সিনেমা আমদানি করে প্রদর্শনের উদ্যোগ নিচ্ছে। বর্তমানে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় মানুষ বিভিন্ন দেশের মুভি সহজেই দেখতে পাচ্ছে, ফলে মানুষের এখন আর প্রচলিত মসলাদার ছবিতে আগ্রহী নেই। তারা মৌলিক কাহিনীর প্রতি আগ্রহী। 

বাংলাদেশেও মৌলিক কাহিনীনির্ভর সিনেমার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ‘আয়নাবাজি’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমাগুলো। তাই আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে মৌলিক গল্পের দিকে জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে গুণীদের বায়োগ্রাফি হতে পারে এই মৌলিক গল্পের একটি বড় উৎস।

লেখক: শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

ইবি/মাহি  

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়