ঢাকা     শুক্রবার   ১৭ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

কুবি প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান শিক্ষার্থীদের

কুবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ২ মে ২০২৪   আপডেট: ১৩:৫০, ২ মে ২০২৪
কুবি প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান শিক্ষার্থীদের

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ৯৩তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার (১ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বর সংলগ্ন রাস্তায় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে হল চালু রাখা ও ক্লাসে ফেরার দাবিতে মানববন্ধন করেন তারা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচিতে একাত্মতা পোষণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ নাসির হোসাইন এবং শেখ হাসিনা হলের হাউজ টিউটর আল-আমিন হোসেন।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম আবর্তনের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম পড়াশোনা করার জন্য। তবে বিগত কয়েক মাস বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলছে। কখনো শিক্ষক সমিতি ক্লাস বর্জন করছে, তো এখন আবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনিদির্ষ্ট কালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমার প্রশ্ন শিক্ষকদের এই দ্বন্দ্বে আমরা শিক্ষার্থীরা কিভাবে দোষী? আমরা কেন ভুক্তভোগী?

তিনি বলেন, এখানে অনেক শিক্ষার্থী অর্থাভাবে হলে থাকে। টিউশন করিয়ে নিজের আর পরিবারের ভরণপোষণ সামলায়, তারা কোথায় যাবে? আমরা যে পড়াশোনায় পিছিয়ে যাচ্ছি, এর দায়ভার কে নিবে। আমি একটাই দাবি করতে চাই, আমাদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ও হল চালু করা হোক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম আবর্তনের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহমিদা সুলতানা বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সার্কাস চলছে। প্রথমে প্রশাসন সিদ্ধান্ত দিলো ২ মে পর্যন্ত সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে, অনলাইনে ক্লাস চলবে। এখন আবার প্রশাসন আমাদেরকে হল থেকে বের করে দিচ্ছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে। এমনিতে বেশ কিছু বিভাগ করোনার কারণে পিছিয়ে আছে। তার ওপর তাদের এ ধরনের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষক সমিতি আর উপাচার্যের দ্বন্দ্বে আমরা বলির পাঠা হয়ে আছি। এ পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান আশা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম আবর্তনের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আনাস আহমেদ বলেন, আজ আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখানে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি নিজেদের কিছু ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য। আমাদের ক্লাস, পরীক্ষা চালু করতে হবে, হলগুলো খোলা রাখতে হবে। শিক্ষকদের ওপর বহিরাগতদের হামলার তদন্ত করে দোষীদের সঠিক বিচার করতে হবে। চলমান পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান করতে হবে, অন্যথায় আমরা আমাদের কর্যক্রম চালিয়ে যাব।

শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে নাসির হোসাইন বলেন, চলমান সংকট সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। শিক্ষার্থীদের সংকটের মুখেই এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমার মনে হয় না, এমন কিছু ঘটেছে। আর কাজী নজরুল হলে কোনরকম অবৈধ অস্ত্র বা টাকা ঢুকেনি। আমার হল খোলা থাকবে। আমার হলের শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।

শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষক আল-আমিন বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি- আমার হলে কোনোপ্রকার অবৈধ অস্ত্র নেই, হল স্বাভাবিক আছে। আমি শিক্ষার্থীদের বলেছি, তারা তাদের মতো করে হলে থাকতে পারবে। শিক্ষার্থীদের কেউ জোরপূর্বক হল থেকে বের করতে পারবে না।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, এটা প্রশাসনের একটি স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত। বিভিন্ন হল প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, হল খুব সুন্দরভাবেই চলছে। আর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলুক, সেটাও আমি চাই। আমি মনে করি, এই উপাচার্য একজন অদক্ষ প্রশাসক। তার পদত্যাগই সবকিছুর সমাধান।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের পক্ষেই আছি। যখন কোনো একটা ছুটি হয়, তখন কিন্তু প্রতিবার একই নোটিশ যায় যে, হল ছাড়তে হবে। অনেক সময় হল সিলগালা করে দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে সবাইকে সেটা মানতে হবে। যেহেতু এ নোটিশে সিলগালার কথা বলা নাই, সেক্ষেত্রে কেউ যদি বিকাল ৪টার মধ্যে হল ত্যাগ না করে, তাহলে নিশ্চয়ই হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নিবে।

/এমদাদুল/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ