ঢাকা     মঙ্গলবার   ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৬ ১৪৩১

ইবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল, এক দফা দাবি 

ইবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ৩ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ২২:২৭, ৩ আগস্ট ২০২৪
ইবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল, এক দফা দাবি 

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের গণহারে গ্রেপ্তার, মামলা, জুলুমও নির্যাতনের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৩ আগস্ট) পৃথকভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিছিল শুরু হলেও পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে একত্র হন। এ সময় সরকার পতনের দাবিতে এক দফা ঘোষণা করেন তারা।

এর আগে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বেলা ১১টায় মাথায় লাল কাপড় বেঁধে ‘নিপীড়ন ও বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক সমাজ’র ব্যানারে মিছিল বের করেন শিক্ষকরা। 

মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বর হয়ে প্রধান ফটকে অবস্থান করে এবং পরবর্তীতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা।

এ সময় কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, কোটা আন্দোলনের সময় রাজধানীতে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে এ সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডে সব শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির এই কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করছি। আমি মিরপুর যে হত্যাকাণ্ড দেখেছি, বাংলাদেশে অবশ্যই তার বিচার হওয়া উচিত। এটা না হলে ছাত্রসমাজ তার ভাইয়ের প্রতি শতভাগ বেইমানি করবে। এজন্য আমি এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি।

সমাবেশে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. একেএম মতিনুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে সব দায়-দায়িত্ব ছেড়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করুন। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও ছাত্ররা এতো প্রাণ দেয়নি, আজকের ছাত্রসমাজ যতটা দিয়েছে। ২৬৬টি প্রাণের বিনিময়ে আপনি কোটা মেনে নিলেও, তাদের এই রক্তঝরা তাজা প্রাণের সঙ্গে নাটক করছেন। 

তিনি আরও বলেন, আমি গত ১০ দিন ধরে ঘুমাতে পারছি না। আমার সন্তান যখন আমাকে বলে, আমাকে কেনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামতে দিচ্ছো না। তখন আমার উত্তর দেওয়ার জায়গা থাকে না। আমরা বিচার চাই। যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি আদায় না হবে, আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।

সমাবেশে ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, অধ্যাপক ড. মোহা. তোজাম্মেল হোসেন ও অধ্যাপক ড. জাকির হুসাইনসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, একই সময়ে ডায়না চত্ত্বর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে শিক্ষকদের সঙ্গে মিলিত হন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করেন তারা।

সেখানে শিক্ষকরা সংহতি সমাবেশ শুরু করলে তারা মিছিল নিয়ে পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া বাজার ঘুরে প্রধান ফটকের সামনে এসে দেড় ঘণ্টা খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেন।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা, ‘ছেলেহারা মায়ের ডাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’, ‘চব্বিশের রাজাকার, এই মুহুর্তে বাংলা ছাড়’, ‘এক দফা এক দাবি, স্বৈরাচার কবে যাবি’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

সমাবেশে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যার বিচারের জন্য নয় দফা দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু আপনারা আবারও আমাদের ওপর হামলা করলেন। এখন আমাদের আর নয় দফা নেই, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাব। আগামীকাল থেকে আমরা অসহযোগ আন্দোলন শুরু করবো।

দেশের আমজনতাকে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবাসিক হল খুলে দিতে হবে। এর মধ্যে হল না খুললে আমরা আমাদের মতো ব্যবস্থা নেব।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বিক্ষোভ সমাবেশের শেষ দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে একদল যুবক ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। শান্তিপূর্ণভাবে তারা প্রধান ফটক থেকে জিয়া মোড় পর্যন্ত আসলেও হঠাৎ আশপাশে থাকা লাঠিসোটা দিয়ে সেখানে অবস্থিত শাখা ছাত্রলীগের কার্যালয়ে হামলা চালান। এ সময়ে কার্যালয়ের ভেতরে থাকা চেয়ার, টেবিল, টিভি ও অন্যান্য আসবাবপত্র ভেঙে গুড়িয়ে দেন তারা।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, বন্ধ ক্যাম্পাসে বিএনপি-জামায়াতের শিক্ষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছাত্রশিবিরকে লেলিয়ে দিয়ে আমাদের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে। ক্যাম্পাস বন্ধ, আমাদের নেতাকর্মীরা কেউ নেই। এ সুযোগটা কাজে লাগিয়েই তারা ক্যাম্পাসে এসে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আবারও এরকম কিছু করার চেষ্টা করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।

/ইদুল/মেহেদী/এনএইচ/

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়