ঢাকা     রোববার   ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রাবি ছাত্রীর মৃত্যুর ৩ দিনেও তৈরি হয়নি প্রতিবেদন, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

রাবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৯, ৩০ অক্টোবর ২০২৫   আপডেট: ১৬:৫৩, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
রাবি ছাত্রীর মৃত্যুর ৩ দিনেও তৈরি হয়নি প্রতিবেদন, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সুইমিংপুলে ডুবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোছা. সায়মা হোসেনের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন তিনদিনেও প্রকাশ হয়নি। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, রবিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বুধবার (২৯ অক্টোবর) প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আরো পড়ুন:

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় তাদের প্রশাসন ভবনের সামনে টায়ার পুড়িয়েও বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।

বিক্ষোভ চলাকালে তারা ‘তুমি কে আমি কে, সাইমা সাইমা’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, সাইমা হত্যার বিচার চাই’, ‘আমার বোন মরলো কেনো প্রশাসন জবাব দে’, ‘প্রশাসনের সিন্ডিকেট, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘কথা ছিলো তিন দিন, বিচার পাবো কোনদিন’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, সায়মার মৃত্যু স্বাভাবিক নাকি কোনো গাফিলতির কারণে হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটিকে তিনদিনের সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনদিন পার হয়ে যাওয়ার পরও প্রশাসন নিশ্চুপ হয়ে আছে। জুলাই আন্দোলনের ফলে যারা প্রশাসনের চেয়ারে বসেছে, তারা কি আদৌ শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো প্রশাসন? যতক্ষণ পর্যন্ত সুষ্ঠু কোনো রিপোর্ট প্রকাশ না করা হবে ততক্ষণ আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

আন্দোলনরত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. সোহাগ হোসেন বলেন, “আজকে আমাদের সায়মা আপুর হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসন এখনো তা দেয়নি। এজন্য আজ আমরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে একত্রিত হয়েছি। প্রশাসন আমাদের ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছিল প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। কিন্তু ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও আমরা কোনো প্রতিবেদন পাইনি। আমরা এখানে সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদনের দাবিতে একত্র হয়েছি এবং এটি আদায় করেই এখান থেকে যাব।”

একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “প্রশাসন সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও তারা এই জায়গায় কেন গাফিলতি করল? আরেকটা বিষয় হলো, তারা যেহেতু তদন্ত প্রতিবেদন দেবে, সেহেতু যেন সঠিক প্রতিবেদন দেয়—এখানে যেন কোনো খামখেয়ালি না থাকে। এমনটা যেন না হয় যে, যারা এর সাথে জড়িত, তাদের প্রশাসন বাঁচানোর চেষ্টা করছে।”

তিনি বলেন, “আমরা চাই, যারা সায়মা হত্যার সময় উপস্থিত ছিল এবং দায়িত্বে অবহেলা করে সায়মাকে রেসকিউ করতে পারেনি, তাদের যেন চাকরিচ্যুত করা হয়। এছাড়াও, সায়মার পরিবারকে যেন এককালীন অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং তার ভাইকে যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়।”

রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, “রাকসু প্রতিনিধিদের অবস্থান এ বিষয়ে সম্পূর্ণ স্পষ্ট। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, তদন্ত কমিটি এবং প্রশাসনের সঙ্গে আমরা রাকসু প্রতিনিধিরা একসঙ্গে সিনেটে বসব। তারা আমাদের কাছে কিছু সময় চেয়েছেন এবং জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সিনেটে তদন্ত রিপোর্ট সবার সামনে প্রকাশ করা হবে। আমরা তাদের সে পর্যন্ত সময় দিয়েছি।”

তিনি বলেন, “রাকসুর প্রতিনিধিরা এখনো তাদের কার্যালয়ে বসেননি এবং প্রথম অধিবেশনও শুরু হয়নি। তবে অধিবেশন শুরু হলেই রাকসুর প্রতিনিধিরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ২ মিনিটও সময় নেবেন না।”

নিহত শিক্ষার্থীর সায়মা হোসেনের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। রবিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে নেমে তিনি পানিতে ডুবে যান। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রতিবাদে ওই দিন রাতেই উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়