সালাহউদ্দিন আম্মারের আচরণ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শামিল: ছাত্রদল
রাবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারের আচরণ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শামিল বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ বিনষ্ট করে কুচক্রী মহল অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক সিয়াম বিন আইয়ুব স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
রাকসুর জিএস সালাউদ্দিন আম্মারের বক্তব্যকে হুমকিমূলক উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের উদ্দেশে রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারের হুমকিমূলক বক্তব্যে অছাত্রসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে; যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠ পরিবেশের পরিপন্থি। একজন ছাত্র বা ছাত্রনেতা হিসেবে বার বার শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন ও মারমুখী আচরণ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের শামিল।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে তথাকথিত ‘তালা ঝোলানো’ সংস্কৃতি ফ্যাসিবাদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।। অতীতে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উপ-উপাচার্যসহ এক কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা শিক্ষক সমাজকে অপমান করেছিল, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি কালো অধ্যায়। শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. সৈয়দ শামসুজ্জোহার ঐতিহাসিক বিদ্যাপীঠে সালাহউদ্দিন আম্মারের মতো মব-সন্ত্রাসী উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার অপচেষ্টা চালালে শাখা ছাত্রদলের সব স্তরের নেতাকর্মী তা শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।
ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকলে দেশের প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে সমন্বয়ক নামধারী কিছু ছাত্র ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসবাদ কায়েমের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তথ্য-উপাত্ত ব্যতিরেকে অহেতুক ট্যাগিংয়ের মাধ্যমে চরমপন্থিদের কু–স্বার্থ চরিতার্থ করার নিমিত্তে কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাহলে তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী ও সাধারণ সম্পাদক সরদার জহুরুল ইসলাম যৌথভাবে বিবৃতিতে বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হুমকি, অশালীন ও মারমুখী আচরণ জ্ঞানচর্চার পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। একজন ছাত্রনেতার কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ অগ্রহণযোগ্য ও অছাত্রসুলভ। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়া অপপ্রচার ও হুমকির মাধ্যমে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা বরদাশত করা হবে না। সালাহউদ্দিন আম্মারের মতো মব-সন্ত্রাসী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার অপচেষ্টা চালালে শাখা ছাত্রদলের সব স্তরের নেতা-কর্মী তা শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।”
এদিকে গত রবিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদের ডিনদের পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি পালন করেন রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার। সকালে তিনি রাকসু ভবনের সামনে অবস্থান নেন। ৬ ডিনের কেউ ক্যাম্পাসে না থাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে একে একে তাদের সবাইকে কল করেন সালাহউদ্দিন আম্মার। সেই সঙ্গে তাদের উদ্দেশে লেখা পদত্যাগপত্রও প্রকাশ করেন। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার ক্লাস নিচ্ছেন জানতে পেরে তার বিভাগেও যান সালাউদ্দিন আম্মার। তবে সেখানে ওই শিক্ষককে পাননি তিনি। এরপর দুপুরে শিক্ষার্থীরা ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের ৩জন ডিনের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর উপাচার্যসহ প্রশাসন ভবনের সব কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। প্রশাসনের আশ্বাসে পরে তালা খুলে দেওয়া হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ও ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’ নামের গ্রুপে পোস্ট দিয়ে আওয়ামীপন্থি ডিনদের পদত্যাগের সময় বেঁধে (আল্টিমেটাম) দেন এবং ডিনদের চেয়ারে দেখলে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও ‘বাকিটা বুঝিয়ে দেব’ বলেও হুঁশিয়ারি দেন। এছাড়া, গত শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) আওয়ামী ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তা চাকরি করলে তাদের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বেঁধে রাখা হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা/ফাহিম/জান্নাত