বালাইনাশক ঝুঁকি হ্রাসে বাকৃবিতে আঞ্চলিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
বাকৃবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ময়মনসিংহে কৃষিক্ষেত্রে বালাইনাশক বা পেস্টিসাইডের ঝুঁকি হ্রাস ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আঞ্চলিক কর্মশালা ও ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন (এফজিডি) অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদীয় ডিন অফিসের সম্মেলন কক্ষে ওই কর্মশালাটি শুরু হয়।
ক্যাব-ই এর ‘প্ল্যান্টওয়াইজ প্লাস’ প্রোগ্রামের আওতায় ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ময়মনসিংহ অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কর্মশালায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের শতাধিক প্রগতিশীল কৃষক প্রতিনিধি ও বালাইনাশকের ডিলারগণ এতে অংশ নেন।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কীট তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। কর্মশালাটি ‘পেস্টিসাইড রিস্ক মিটিগেশন স্ট্র্যাটেজি’ বা বালাইনাশক ঝুঁকি প্রশমন কৌশলের ওপর ভিত্তি করে সাজানো হয়। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ ও পরিবেশ রক্ষায় বালাইনাশকের সঠিক ও পরিমিত ব্যবহারের লক্ষ্যে আয়োজিত কর্মশালায় ৩টি মূল বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। এর মধ্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণের জন্য প্রস্তুত করা সচেতনতামূলক লিফলেট, ভিডিও ও পোস্টার কতটা কার্যকর তা যাচাই করার বিষয়টি আলোচিত হয়।
পাশাপাশি লিঙ্গ ও বয়সভেদে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছে তথ্য আরো সহজ ও কার্যকরভাবে পৌঁছাতে প্রচারণামূলক উপকরণ পরিমার্জনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। এছাড়া বালাইনাশকের অপব্যবহারজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ের কৃষক ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সচেতন ও সংবেদনশীল করে তোলার ওপর জোর দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক তৌফিক আহমদ খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম আহমাদ, ময়মনসিংহ অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সালমা আক্তার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাকৃবি কীট তত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক প্রধান ড. কৃষ্ণা রাণী দাস।
এ সময় কৃষি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম আহমাদ বলেন, “বালাইনাশক আমরা মূলত ভালো উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করি-ফসল রক্ষা ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য। তবে এর ব্যবহার হতে হবে অত্যন্ত সতর্কতা ও সচেতনতার সঙ্গে। কারণ বালাইনাশক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।”
তিনি আরো বলেন, “এছাড়াও, বাজারে অনেক ক্ষেত্রে ভেজাল ও নিম্নমানের বালাইনাশক বিক্রি হচ্ছে, যা বালাই দমনে কার্যকর নয়। আমরা আপনাদের সমস্যাগুলো জানতে চাই। আপনাদের অভিজ্ঞতা ও বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের সঙ্গে শেয়ার করলে, সেগুলো নিয়ে কাজ করে বাস্তবসম্মত ও কার্যকর সমাধান বের করা সম্ভব হবে।”
ময়মনসিংহ অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক তৌফিক আহমদ খান বলেন, “প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এটি প্রকৃতির একটি মৌলিক নিয়ম। আমরা সবকিছু চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু, তার প্রভাব অবশ্যই অনুভূত হয়। বালাইনাশক আমরা ফসল রক্ষার জন্য ব্যবহার করি, তবে এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা এখনো যথেষ্ট নয়। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা এর অসুবিধা ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির দিকটি বুঝতে পারি না।”
তিনি বলেন, “নিরবে ও অজান্তেই বালাইনাশকের অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। মাটি, পানি, উপকারী পোকা এবং সর্বোপরি মানবদেহ, সবকিছুই এই ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ তা সমস্যার সমাধান না করে বরং নতুন সঙ্কট তৈরি করে।”
আজকের এই আলোচনায় উপস্থিত সকল পক্ষের গঠনমূলক পরামর্শ ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যদি আমরা একটি সমন্বিত, বিজ্ঞানভিত্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার নীতিমালা অনুসরণ করতে পারি, তাহলে বালাইনাশকের সুফল নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং একই সঙ্গে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে। সচেতন ব্যবহারই হতে পারে টেকসই কৃষি ও নিরাপদ ভবিষ্যতের মূল চাবিকাঠি, বলেও মনে করেন তিনি।
ঢাকা/লিখন/জান্নাত