রাকসু ভবনের বেহাল দশা, নেই নামফলকও
ফাহমিদুর রহমান ফাহিম, রাবি || রাইজিংবিডি.কম
রাকসু ভবনের ভিতরের অংশ
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। ইতোমধ্যেই মনোনয়ন বিতরণ ও দাখিলের কাজ শেষ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।
এর মধ্যেই রাকসু ভবন ও আবাসিক হলগুলোর ছাত্র সংসদ কক্ষের বেহাল দশা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাকসু ভবনে নেই কোনো নামফলক এবং এর অভ্যন্তরের অবস্থাও জরাজীর্ণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের পেছনে অবস্থিত রাকসু ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির বাইরে নেই কোনো নামফলক। ফলে বাইরে থেকে এটি যে রাকসু ভবন, তা বোঝার কোনো উপায় নেই। ভবনটির ভেতরের অবস্থা আরো ভয়াবহ। ময়লা-আবর্জনা ও অব্যবহৃত আসবাবপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। মাঝে মাঝে শুধু বাইরের অংশে রং করা হলেও ভেতরের সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
রাকসু ভবনের দ্বিতল ভবনটির দ্বিতীয় তলায় রয়েছে কিছু পুরোনো ও অকেজো আসবাবপত্র। তবে এর বেশিরভাগ কক্ষই বর্তমানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন ব্যবহার করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সমকাল নাট্যচক্র, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ড্রামা অ্যাসোসিয়েশন, উদীচী সাংস্কৃতিক সংসদ, অরণি সাংস্কৃতিক সংসদ, অনুশীলন নাট্যদল, তীর্থক নাটক, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অ্যাডুকেশন ক্লাব, সাংস্কৃতিক জোট ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি। এমনকি রাকসুর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি কক্ষও খালি নেই।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, যে নির্বাচনকে ঘিরে এত আমেজ, সেই রাকসু ভবনেরই এমন করুণ অবস্থা হতাশাজনক। ভবনে চেয়ার-টেবিল বা বসার মতো কোনো স্থান নেই। দীর্ঘ সময় পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা প্রশাসনের ভবন সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বসার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে।
এ বিষয়ে রাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেতাউর রহমান জানিয়েছেন, রাকসু ভবন সংস্কারের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে থাকা বিভিন্ন সংগঠনগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে এবং খুব শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি জানান, নির্বাচনের প্রস্তুতির কারণে এই উদ্যোগগুলো আগে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুতই নামফলক স্থাপনসহ সংস্কার কাজ শেষ করা হবে।
রাকসু ভবনের পাশাপাশি হল সংসদগুলোর অবস্থা আরো করুণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৭টি (১১টি ছেলেদের ও ছয়টি মেয়েদের) হলে এখন আর কোনো ছাত্র সংসদ কক্ষের অস্তিত্ব নেই। অনেক হলে পুরোনো ছাত্র সংসদ কক্ষগুলো এখন পত্রিকা রুম বা রিডিং রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিজয়-২৪ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জামিরুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ ৩৫ বছর আগে নির্বাচন হওয়ায় অনেক হলেই ছাত্র সংসদ কক্ষগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমি আমার হলে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি, অন্যান্য হলের প্রাধ্যক্ষরাও দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, “রাকসু ভবনের সংস্কার এবং নামফলক স্থাপনের জন্য কমিটি করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে কোথায় পুনর্বাসন করা যায় তা খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন জমা দিলে দ্রুতই কাজ শুরু হবে।”
ঢাকা/মেহেদী