ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

বাজেটে অগ্রাধিকার খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ সিপিডির

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ২০ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বাজেটে অগ্রাধিকার খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ সিপিডির

প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলতে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আর্থিক বিভিন্ন খাতে অতি দ্রুত সংস্কারের পরামর্শ রেখেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

সংস্থাটি বলেছে, প্রবৃদ্ধি ও ধারাবাহিকতা কথা চিন্তা করলে হবে না। বরং সংস্কার বাড়িয়ে ও তা কার্যকর উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন সক্ষমতা দিয়েই করোনার ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে।

শনিবার (২০ জুন) সিপিডির বাজেট সংলাপ ২০২০ শীর্ষক ভার্চু্য়াল সংলাপে সংস্থাটির পক্ষে এই মূল্যায়ন প্রতিক্রিয়া জানায় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য এই বাজেট পুরোপুরি সক্ষম নয়। বাজের সামর্থ্য আরও বাড়াতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এসব খাতে যে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে তা আরও বাড়াতে হবে। একইভাবে স্বাস্থ্য খাতের জন্য যে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা সুষ্ঠু বন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ছাড় করে কাজে লাগাতে হবে। নজর দিতে হবে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের প্রতি। করোনার কারণে সর্বত্র কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে। মানুষকে আয়-উপার্জনের সুযোগ করে দিতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে এসব বিষয় জোরালোভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। চূড়ান্ত বাজেটে এসব বিষয় বিবেচনা দরকার। নতুবা এই বাজেট ফলপ্রসূ হবে না।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সভাপতিত্ব করেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান।

মূল্যায়ন প্রতিক্রিয়ায় ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনা এখনো চলমান। কিন্তু বাজেটে তার প্রতিরোধ এবং করোনা পরবর্তী যথাযথ কোনো পদক্ষেপ রাখা হয়নি।  প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এ বাজেট দিয়ে করোনা মোকাবিলা পরবর্তি সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। চূড়ান্ত বাজেটে এসব খাতে বরাদ্দ আরও যৌক্তিকভাবে বাড়ানো দরকার।

তিনি বাজেটের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণেরও বেশি ধরা হয়েছে। কিন্তু কোভিড-১৯ এখনও চলমান থাকায় এই অনুমিতি সঠিক হযনি। রফতানির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১৫ শতাংশ। কিন্তু আমাদের আশঙ্কা এ বছর হয়তো তা ১৮ শতাংশ নেগেটিভ গ্রোথ হবে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে আমরা হয়তো সরকারের ভালো কিছু উদ্যোগে দ্রুত কাটিয়ে ওঠবো। কিন্তু বেসরকারি-সরকারি বিনিয়োগের যে ধারাবাহিকতা দেখছি, তাতে বিনিয়োগ ও রফতানি উভয়ই লক্ষ্যচ্যুত হতে পারে।

রাজস্ব খাতের লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে ড. মোস্তিাফিজুর রহমান বলেন, রাজস্বের প্রবৃদ্ধি ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। যেখানে বড় অংশই আসবে অপ্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে। এ সময় কর ফাঁকি কমিয়ে কিভাবে আয়কর থেকে বাড়তি করটা নিতে পারলে ভাল হতো। এতে সাধারণের ওপর চাপ কম পড়তো। ঘাটতি অর্থায়নের বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের অর্থ পেতে সমস্যাই হবে।

১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা সাদা) বিনিয়োগের সুবিধা প্রদান নৈতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কোনোভাবে কাম্য নয় উল্লেখ করে সিপিডির এই ফেলো বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ সুয়োগ আরও আগেও দেওয়া হয়েছে। তাতে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৬ হাজার কোটি টাকা এসেছে। তার মধ্যে তত্বাবধায়ক সরকারের সময় এসেছে ৯ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং এই সুবিধা দিয়ে কোনো লাভ হয়নি। এই সুবিধা দেওয়া ঠিক হয়নি।

টার্নওভার ট্যাক্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টার্নওভার ট্যাক্সের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি। কিন্তু করোনার কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) বড়ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিপিডি মনে করে, টার্নওভার ট্যাক্স পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

মোবাইলের সিমের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো উচিত হযনি। তিনি বলেন, ‘মোবাইলের সিমের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় ইন্টারনেটের ব্যবহার কমবে। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা খুব ভালো অবস্থানে আছি। এখানে ইন্টারনেট বড় ভূমিকা রেখেছে। সেদিক থেকে এটা তুলে নিলেই ভালো হবে।

মোস্তকাফিজুর রহমান বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ১-২ লাখ টাকার অনেক প্রকল্প রাখা হয়েছে। এগুলো ভালো হযনি।

সিপিডি আরও বলছে, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের তৈরি পোশাক খাত সংকটে রয়েছে। রফতানি কমে গেছে। এমন সময় প্রস্তাবিত বাজেটে রফতানির মূল্যের ওপর উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এটি ঠিক হয়নি। এটা কমোনো দরকার।



শাহ আলম/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়