ঢাকা     বুধবার   ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ৩ ১৪৩১

অর্জিত হচ্ছে না রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ৭ আগস্ট ২০২৪   আপডেট: ০৮:২৭, ৭ আগস্ট ২০২৪
অর্জিত হচ্ছে না রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা

জাতীয় রাজেটে রাজস্ব আয়ের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়ায় কোনো অর্থবছরই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয় না। অর্থবছর শেষে দেখা যায় প্রকৃত লক্ষ্যমাত্রা তো দূরের কথা, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা সম্ভব হয় না। আর এই ধরনের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাকে বড় ধরনের ‘সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)।

সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সম্পাদিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ)  বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করতে গিয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছে বিভাগটি। 

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এপিএ-তে কাঙ্খিত মাত্রায় কর আদায়ে চারটি সমস্যা থাকার কথা উল্লেখ করেছে আইআরডি। এগুলো হচ্ছে- কর পরিসর সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে জরিপ কার্যক্রমে পদ্ধতিগত সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘসূত্রিতা; আন্তঃকর ব্যবস্থাপনায় তথ্য বিনিময়ের অপ্রতুলতা; দক্ষ জনবলের স্বল্পতা ও ভৌত অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় সুবিধাদির অভাব।

এদিকে, বাজেট পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত আট অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর আওতাধীন রাজস্ব ঘাটতিই সবচেয়ে বেশি।

উচ্চ লক্ষ্যমাত্রার রাজস্ব আহরণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও চলতি অর্থবছরে মোট ৫ লাখ ৬ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে আইআরডি। তবে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার অটোমেশন এবং সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাটা চ্যালেঞ্জের বিষয় বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

এনবিআর এর মতে, সংস্থাটির সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জনবল স্বল্পতা ও প্রশিক্ষিত জনবলের অপ্রতুলতা।

আইআরডি’র তথ্যমতে, গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট প্রায় ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা এবং ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৩৫০ কোটি রাজস্ব আদায় হয়েছে।

এনবিআর এর সাময়িক তথ্য থেকে দেখা যায়, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে মোট ৩ লাখ ৭১ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসাবে মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব কম আদায় হয়েছে ৩৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা।

আইআরডি’র হিসেবে, গত অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত কমেছে। সমাপ্ত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ।

অন্যদিকে, একই অর্থবছরে এনবিআর এর হিসাবে কর-জিডিপি অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এ অনুপাত ছিল ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে শেষে কর-জিডিপি অনুপাত ৮ দশমিক ৪৫ থেকে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ দাঁড়াতে পারে।

এদিকে, চলতি বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা নির্ধারণ হলেও চলতি অর্থবছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে চায় আইআরডি। তবে এ ধরনের লক্ষ্যমাত্রা কোনোভাবে অর্জন করা যাবে না বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ এখন নানা বিধি-নিষেধের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি অনেকে কমে গেছে। এখন তা নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। সঞ্চয়পত্র মানুষ কিনছে তো নাই, বরং বিক্রি বহুলাংশে বেড়ে গেছে।

ঢাকা/হাসনাত/ইভা 


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়