রাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগে ভয়াবহ সেশনজট
মেহেদী হাসান || রাইজিংবিডি.কম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক
রাবি প্রতিবেদক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকুরি, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ণে দীর্ঘসূত্রিতা, নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া, বিভিন্ন সংগঠনে জড়িত থাকা ও গ্রুপিংসহ বিভিন্ন কারণে ভয়াবহ সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষাজীবন প্রলম্বিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভাগের সভাপতির অমনোযোগিতায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।’
বিভাগীয় সূত্র জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫৬ সালে মনোবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এ বিভাগে ২৪ জন শিক্ষক আছেন। পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা না নেয়ায় সেশনজট হচ্ছে।
এ বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স কোর্সের পরীক্ষা শেষ হবে আগামী ২৯ মে। আর ০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের ক্লাস সম্প্রতি শুরু হয়েছে। অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা যখন কর্মজীবন শুরু করছেন, তখন মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে পড়ে আছেন।
২০১১ সালের মাস্টার্সের পরীক্ষা টানা দুই বছরের সেশনজটে পড়ে চলতি মে মাসে শেষ হয়। একইভাবে ২০১২ সালে ভর্তি হওয়া মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের এখন পর্যন্ত মাত্র ২০ ভাগ ক্লাস নেওয়া হয়েছে। ক্লাস কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরা জানান, ক্লাস শেষ করতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
অনার্সের শিক্ষার্থীদের অবস্থা আরো ভয়াবহ। অন্য বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা যখন বিদায় উৎসব পালনে ব্যাস্ত, ঠিক তখন চতুর্থ বর্ষের ক্লাস শুরু করেছে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ২০০৯-১০ সেশনের শিক্ষার্থীদের আগামী মাসের ১৬ জুন থেকে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হবে। আর ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থীদের তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে ১৩ মে থেকে। একই অবস্থা ১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থীদেরও। তাদের আগামী ১৪ জুন থেকে পরীক্ষা শুরু হবে।
একই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হবার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনে ঢুকলেও এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা চার বছরের স্নাতক কোর্স ছয় থেকে সাত বছর এবং এক বছরের স্নাতকোত্তর কোর্স দুই থেকে তিন বছরেও শেষ করতে পারছেন না। এতে শিক্ষার্থদের মূল্যবান সময় অপচয় হচ্ছে তেমনি অভিভাবকদেরও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিভাগের শিক্ষক জানান, বর্তমানে বিভাগে চরম অব্যবস্থাপনা, বিভাগীয় সভাপতির অমনযোগিতায় সুনাম হারাচ্ছে। শিক্ষকরা ক্লাস না নিয়ে ঢাকায় গিয়ে বিনা ছুটিতে অন্যান্য চাকুরি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিজ বিভাগে ক্লাস নেওয়ার চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন শিক্ষকরা। নিয়ম অনুযায়ী একজন শিক্ষকের প্রতি সপ্তাহে যতোগুলো ক্লাস নেওয়ার কথা, তার চার ভাগের এক ভাগ ক্লাসও নেন না শিক্ষকরা।
এ বিষয়ে মনোজ্ঞিানের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগোর চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার সঙ্গে বিভাগে দেখা করতে গেলে, সাংবাদিক পরিচয় জেনে তিনি কক্ষে ঢুকতে দেননি। তিনি বলেন, ‘তোমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য না’। সভাপতি হিসেবে তার দায়িত্ব আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সভাপতি হয়েছি তাতে কি হয়েছে। তোমাদের প্রয়োজন হলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, উপাচার্য, উপ-উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলো।’
এ ব্যাপারে রাবি ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ছাদেকুল আরেফিন মাতিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজটমুক্ত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
রাইজিংবিডি/রাবি/২৬ মে, ৩২০১৪/মেহেদী হাসান/রফিক
রাইজিংবিডি.কম