যত কাণ্ড নোবেল ঘিরে
আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম
বছরজুড়ে বহুল চর্চিত নাম মাইনুল আহসান নোবেল। ভারতের জি-বাংলার রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা-২০১৯’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সবার নজর কাড়েন এই সংগীতশিল্পী। অল্প সময়েই হয়ে ওঠেন শ্রোতাপ্রিয়। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতেই বিতর্কে জড়ান নোবেল। প্রথম দিকে ভক্তরা তার পক্ষে দাঁড়ালেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা দূরে সরে যেতে থাকেন। অনেকেই মনে করেন সম্ভাবনা থাকলেও শুধু কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজের জন্যই নোবেলের ক্যারিয়ার এখন পড়তির দিকে। বিভিন্ন সময় নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে আলোচনায় এসেছেন এই তরুণতুর্কী।
অভিমানে গান ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা
গত ১১ জানুয়ারি মধ্যরাতে নোবেল ফেইসবুক পেইজে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে গানকে বিদায় জানানোর ঘোষণা দেন। তিনি সেসময় লিখেছিলেন: ‘দীর্ঘ ১১ মাস দুই বাংলার মানুষকে বিনোদন দেওয়ার প্রতিদান তোমরা ভালোই দিলে আমাকে। মাত্র ২৩ বছর বয়সে বিয়ে করে সংসার এবং চার দেয়ালের চাপে কিছু ভুল স্ট্যাটাস দিয়েছি। এই তো আমার দোষ! ভাবছি গান-বাজনা ছেড়েই দেব।’ যদিও পরে নোবেল স্ট্যাটাসটি মুছে ফেলেন।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে মিথ্যাচার
গত ২৩ এপ্রিল দুপুরে নোবেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান তিনি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। কয়েকটি ছবিও তিনি ফেইসবুকে পোস্ট করেন। কিন্তু এ দুর্ঘটনায় একজন বৃদ্ধ আহত হন। নোবেল দাবি করেন—ওই বৃদ্ধকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি আহত হয়েছেন। এ খবর প্রকাশ্যে আসার পর প্রত্যক্ষদর্শীরা ফেইসবুকে প্রতিবাদ করেন। তাদের দাবি— নোবেল মিথ্যাচার করছেন। বৃদ্ধকে বাঁচাতে নয়, বরং নোবেলের বাইকের বেপরোয়া গতির কারণে বৃদ্ধ আহত হয়েছেন। নিজের দোষ ঢাকতেই নোবেল এই নাটক সাজিয়েছেন।
জেমসকে নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ স্ট্যাটাস
গত ১৩ মে ফেইসবুক পেইজে ১ ঘণ্টায় নোবেল ১১টি স্ট্যাটাস দেন। যার বেশিরভাগই বাংলা ব্যান্ডের ‘নগরবাউল’খ্যাত তারকাশিল্পী জেমসকে নিয়ে। সবগুলো স্ট্যাটাসই আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। স্ট্যাটাসে নোবেল ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে দেন জেমসের প্রতি। ‘ওই জেমস! গান গাবা এক স্টেজে? তোমারে ১০০০ মিউজিশিয়ান দেব। আর আমি একা একটা মাইক্রোফোন!’
নোবেলের এমন ধৃষ্টতা দেখে বিস্মিত হন নেটিজেনরা। এরপরই মূলত অনেকে মন্তব্য করেন- এই তরুণ শিল্পী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে ইউ টার্ন নেন নোবেল। তিনি দাবি করেন, তার ফেসবুক পেজ হ্যাকড হয়েছিল।
সাংবাদিককে গালাগাল, তুলে নেওয়ার হুমকি
সাংবাদিককে অপহরণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে চলতি বছর মাইনুল আহসান নোবেলের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। গত ১৭ মে সময় মিডিয়া লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী, প্রশাসন ও পরিচালনা বিভাগের সৈয়দ আসাদুজ্জামান ঢাকার কলাবাগান থানায় ডায়েরি করেন। এ ঘটনায় নোবেল ফেইসবুক পেইজে ‘কুরুচিপূর্ণ’ শব্দ ব্যবহার করে একটি স্ট্যাটাস দেন। বিষয়টি নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন এই গায়ক। এ ঘটনায় পুলিশের সাইবার ইউনিট তাকে তলব করে। সেখানে দোষ স্বীকার করেন তিনি।
মানসিক হাসপাতালে নোবেল
সংগীতশিল্পী জেমসকে চ্যালেঞ্জ এবং সাংবাদিককে অপহরণের হুমকি দিয়ে বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন আলোচনার জন্ম দেন নোবেল। কারণ হঠাৎ করেই পাবনার মানসিক হাসপাতালে দেখা যায় তাকে। এ সময় তার স্ত্রী সঙ্গে ছিলেন। গত ২০ মে পাবনা মানসিক হাসপাতালে যান বিতর্কিত এই গায়ক। সেখানে রোগীদের তাকে জাতীয় সংগীত শোনাতে দেখা যায়।
নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা
চলতি বছরে নোবেলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ইথুন বাবু। দেশের জ্যেষ্ঠ সংগীতশিল্পীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দেন নোবেল। ইথুন বাবুকে নিয়েও তিনি ফেইসবুকে পোস্ট দেন- ‘ইথুন বাবু একটা চোর। অন্যের গান নিজের নামে চালায় দিসে।’ সেই সূত্র ধরে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।
স্ত্রীর বিরুদ্ধে ভ্রুণ হত্যার সন্দেহ
জুন মাসের শেষের দিকে নোবেল ফেইসবুকে উৎফুল্ল হয়ে ঘোষণা দেন— বাবা হতে যাচ্ছেন তিনি। অথচ এর দু’দিন না-যেতেই তার স্ত্রী সালসাবিল দাবি করেন— তিনি অন্তঃসত্ত্বা নন। এরপর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ভ্রুণ হত্যার সন্দেহ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দেন নোবেল। কিন্তু সালসাবিল অভিযোগ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন। এ নিয়েও জলঘোলা কম হয়নি।
নোবেলের ঘনিষ্ঠ ছবি দিয়ে তরুণীর স্ট্যাটাস
গত জুলাই মাসের শুরুর দিকে ‘মিলা চৌধুরী’ নামে একটি ফেইসবুক আইডি থেকে দাবি করা হয়— নোবেল আবার বিয়ে করছেন। ওই আইডি থেকে নোবেলের সঙ্গে তোলা একটি ঘনিষ্ঠ ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়: ‘অবশেষে বুঝি পরিচয় পেতে চলছে তোমার আমার দীর্ঘ পথচলা; দেড় বছর রিলেশনের পর আজ সে দিবস, সে বিয়েতে রাজি। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন প্লিজ।’
এরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় নোবেল-চর্চা। যদিও নোবেল দাবি করেন— এসব মিথ্যা, বানোয়াট। তবে মিলা নামে তার বান্ধবী আছে।
এবার পরকীয়ার অভিযোগ
অন্য নারীর সঙ্গে তোলা ছবি প্রকাশ করার পর নোবেলের পরকীয়া নিয়ে মুখ খুলেন তার স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদ। তার অভিযোগ— নোবেল মাদকাসক্ত। জেবা নামের একটি মেয়ের সঙ্গে নোবেলের পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। শুধু তাই নয়, একাধিক মেয়ের সঙ্গে নোবেলের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। নোবেলের সঙ্গে আর একসঙ্গে বসবাস করেন না বলেও জানান সালসাবিল।
পরকীয়া, মাদক নিয়ে দীর্ঘ দিন স্ত্রীর সঙ্গে নোবেলের দাম্পত্য সম্পর্কের টানাপড়েন চলে। সর্বশেষ গত ১১ সেপ্টেম্বর সালসাবিল নোবেলকে ডিভোর্স লেটার পাঠায়। কিন্তু তালাকের নোটিশে ‘বিচলিত নন’ বলে জানান নোবেল। তিনি দাবি করেন—তাকে বিয়ে করতে প্রস্তুত এমপি-মন্ত্রীর মেয়েরা। এর ঠিক পরের দিন এক স্ট্যাটাসে নোবেল লেখেন: ‘পাত্রী চাই।’
এরপর শুরু হয় সমালোচনা। মুহূর্তে হাসির পাত্রে পরিণত হন তিনি। বছরজুড়ে এমন সব কাণ্ড ঘটিয়ে অনেকবারই হাসির পাত্র হয়েছেন এই শিল্পী। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি অল্প বয়সে খ্যাতির বিড়ম্বনায় বিগড়ে গেলেন তিনি?
/তারা/
আরো পড়ুন