ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘আমি কখনো না বলিনি’

চৈতি দাস || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৩১ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আমি কখনো না বলিনি’

‘পেশাদার শিল্পী না হতে পারলেও কখনো ছবি আঁকা ছেড়ে দেবো না। কারণ, ছবি হলো সমাজের প্রতিচ্ছবি। এটি গানের পাখির মতো সমাজের না বলা কথাগুলো বিরতিহীনভাবে বলে যায়। কথাগুলো বলছিলেন হলিক্রস কলেজের মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নাত।

তার সাথে কথোপকথনে জানতে পারি তার বিভিন্ন গুণের কথা। ছবি আঁকা, নাচ-গান, আবৃত্তি, বাগান করা, ডায়েরি লেখা ছাড়াও বিভিন্ন কাজে পারদর্শী সে। আরো শুনিয়েছে সে তরুণ উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প। 

ছোটবেলায় রঙিন রঙিন ছবি দেখে আঁকার চেষ্টা করতো। বোনের রঙ আর খাতা নষ্ট করা দেখে তার বাবা রঙ-পেন্সিল এনে দিতেন আর উৎসাহ দিতেন। তখন থেকে আঁকাআঁকি শুরু। সেও মনের সুখে ছবি আঁকতো। এরপর মায়ের উৎসাহে স্কুলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা। ছবি আঁকায় তার মা এবং বোন খুব সাহায্য করতো। সহপাঠীরা তার স্কেচবুক দেখে অবাক হতো, আবার প্রশংসাও করতো। এছাড়াও শিক্ষকদের থেকেও অনেক প্রশংসা পেতো। এভাবে ছবি আঁকার প্রতি এক ভালো লাগা তৈরি হয়।

জান্নাত বলে, ‘আমার ছোটবেলার অনেকটা সময় কেটেছে নারায়ণগঞ্জে। দৌড়-ঝাঁপের সব খেলাতে ছিলাম পারদর্শী। ছোট থেকে দুরন্ত স্বভাবের হলেও ঢাকায় এসে অনেকটা বন্দিজীবন পার করেছি। টিভি দেখে আর পাঠ্য বইয়ে মুখ গুঁজে সময় কাটাতাম। এরপর থেকেই গল্পের বইয়ের প্রতি এক আগ্রহ তৈরি হয়।’

জান্নাতের শখ স্টিকার জমানো, ডায়েরি লেখা, বুকমার্ক জমানো আর ঘুরে বেড়ানো। নাচের খুব শখ ছিল। বেশ কিছুদিন নাচ শিখেছে ও। বাগান করার প্রতি একটা ঝোঁক আছে। অবসর সময়ে বই পড়তে তার ভীষণ ভালো লাগে। এছাড়াও গান শুনতে, আবৃত্তি করতে, ছবি আঁকতে, স্কেচ করতে তার ভালো লাগে। তার মাছ ধরার এবং নৌকায় চড়ার খুব শখ ছিল। কিন্তু ঢাকায় এমন সুযোগ হয়ে ওঠেনি। যখন সময় পায়, তখন সে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠনে কাজ করে।

‘আমার স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজিতে পড়াবো। যদিও আমার মায়ের ইচ্ছে ল'তে। ছবি আঁকাকে পেশা হিসেবে নিতে তেমন কিছু কখনো ভাবিনি আমি। তাই প্রফেশনাল আর্টিস্ট না হতে পারলেও কখনো ছবি আঁকা ছেড়ে দেবো না। কারণ, এটা আমার প্রাণের সবচেয়ে কাছাকাছি। আমি কখনো কোনো কাজে না বলিনি। না পারলেও করেছি। আবার একটা সময় সেটা হয়েও গেছে’, বলে জান্নাত।

সে চেয়েছে নিজে কিছু করতে। বাবা-মায়ের আঁচল থেকে বের হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। তাই টিফিনের টাকা থেকে একটু একটু টাকা জমিয়ে কাঠের গয়না বানানো শুরু করেছিল। সেখানে রঙ-তুলিতে বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তুলতো। এরপর ফেসবুকে একটা পেইজ খুলে সেখানে সে গয়নার ছবি পোস্ট করত। এভাবে সে কারো সাহায্য ছাড়া নিজে কিছু করে সফল হয়েছে, এটাই তার বড় পাওনা। সে বলে, ‘নিজেকে কখনো হতাশ করিনি, পেরেছি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে।’

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে এখন তার কলেজ ছুটি। এই ছুটি সে কীভাবে কাটাচ্ছে, এমনটা জানতে চাইলে সে বলে, ‘এখন তো বাইরে যাওয়ার অবস্থা নেই। না হলে বেড়াতে যেতাম। সেজন্য বইমেলা থেকে কেনা বইগুলো পড়ছি, পরীক্ষার বাকি থাকা সিলেবাস কভার করছি, পরিচিতদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি, আর মাকে বাসায় কাজে সাহায্য করছি।’

লেখক: শিক্ষার্থী, কবি নজরুল সরকারি কলেজ।

 

ঢাকা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়