ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কাগজের কারিগর উদ্যোক্তা তাহমিদ

জি এম আদল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ৫ ডিসেম্বর ২০২০  
কাগজের কারিগর উদ্যোক্তা তাহমিদ

আহনাফ তাহমিদ জাহিন। পেপার ক্রাফটিং নিয়েই যার সব ভাবনা। সচরাচর চারপাশে মেয়েদেরই ক্রাফটিং নিয়ে কাজ করতে দেখা যায়, ছেলেদের এ পেশায় তেমন দেখা যায় না। তাহমিদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে। ছেলে হয়েও তিনি উৎসাহের সঙ্গে ক্রাফটিং নিয়ে কাজ করছেন। এই শিল্পমনা তরুণ ছবি আঁকা থেকে শুরু করে হাতে লেখা ক্যালিগ্রাফিও করে থাকেন।

তাহমিদ চট্টগ্রামের ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি কাগজের ক্রাফটিং নিয়ে কাজ করে হয়ে উঠেছেন একজন উদ্যোক্তা। তার উদ্যোগের নাম ‘কারিগর’। তিনি ভালোবেসে নিজেকে কাগজের কারিগর হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।

তার এই সৃজনশীল উদ্যোগের শুরুর গল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহিন বলেন, ‘‘ক্রাফটিংয়ে আসার শুরু থেকেই বিভিন্ন মানুষের মুখে একটা কথা শুনে আসছি, ছেলেরা এগুলো করে না। ছেলেদের এগুলো করার ধৈর্য্য নেই। ভালো লাগতো মাঝে মাঝে আবার খারাপও লাগতো, এটা ভেবে যেকেউ আমার কাজটা দেখছে না! ছেলে হয়ে কেনো ক্রাফটিং করছি সেটা দেখছে।

আবার মাঝে মাঝে একটা জিনিস চিন্তা করতাম যে, আমি আমার কাজটা কতদূর ভালো পারছি। কোনো ক্ষেত্রে একটু উনিশ-বিশ হলেই হয়তো সবাই বলবে, আরেহ ছেলে মানুষ এত ধৈর্য্য নিয়ে এই কাজ করতে পারবে না, টিটকারি করবে।’’

ক্রাফটিংয়ের উদ্যোক্তা হিসেবে এই পথ চলায় নানা অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জাহিন বলেন, ‘‘একটা রিয়েলিটি শো-তে একজন জাজ খুব সুন্দর করে বলেছিলেন, মেয়েরা ছেলেদের কাজ ছেলেদের মতো করলে তাদের উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দেওয়া হয়, কিন্তু ছেলেরা তা করলে হীতে বিপরীত হয়।

আমার চারপাশের মানুষ, আমার পরিবারের সবাই যথেষ্ট সাপোর্টিভ ছিল। ক্রাফটিংয়ে আসার পর অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়, তাদের অনেক উৎসাহ অনুপ্রেরণাও পেলাম। তেমনি এক আপুর অনুপ্রেরণায় আমি আমার কাজটা এখনো চালিয়ে যেতে পারছি, তিনি আমাকে সবসময় বলেন, আর যাই করো, এ কাজটা ছাড়বে না। কারণ, এটা তুমি অনেক ভালো পারো।’’

ছোটবেলা থেকেই আহনাফ তাহমিদ জাহিনের ছবি আঁকা ও কাগজ দিয়ে টুকটাক জিনিস বানানোর শখ ছিল। কলেজে আসার পর আস্তে আস্তে পেপার ক্রাফটিংয়ে মনোযোগ বাড়ায় ও সবার কাছে জিনিসগুলো ভালো লাগায় এ কাজে আরও দক্ষতা আনার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তিনি।

শখ থেকে বাণিজ্যিক উদ্যোগের ভাবনা কীভাবে মাথায় এলো তা জানতে চাইলে তরুণ এ উদ্যোক্তা বলেন, ‘‘আমি আমার এই উদ্যোগ শুরু করি প্রথমে মূলত আমার কাজের ম্যাটারিয়াল খরচ যোগানের জন্য, এরপর নিজের একটু বাড়তি আয়ের জন্য। এখন এটা দিয়ে আমি আমার পড়ালেখার খরচের পাশাপাশি আমার পরিবারকেও সহায়তা করতে পারছি।

আমি কাগজ দিয়ে ছবির ফ্রেম, স্ক্র্যাপবুক, কাগজের বিভিন্ন রকমের ফুল, কার্ড, গিফট বক্স, ঘর সাজানোর জিনিস বানাই। তাছাড়া লাইট দিয়ে জগ ও কয়েক রকমের বক্সও তৈরি করি।

প্রথমত ছেলে উদ্যোক্তা হিসেবে এ কাজে আমার প্রচুর বাঁধার সম্মুখীন হতে হলেও আমার পরিচিত অন্য ক্রাফটার ও পরিবারের সবার সহায়তায় সেটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। তাছাড়া আমরা কাগজের কারিগররা আমাদের জিনিসের উপর্যুক্ত দাম সবসময় পাই না, কিন্তু এ কাজের যথাযত প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।’’

তার শৈল্পিকর্মের জন্য পহেলা বৈশাখে ‘ঘরে বসে আলপনা আঁকি’ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার অর্জন করেছেন। তার উদ্যোগ ‘কারিগর’ অংশ নিচ্ছে দেশের নানা মেলায়। নুশিস শিল্পকলা একাডেমি আয়েজিত   বর্ষবরণ উৎসব-১৪২৬, চট্রগ্রাম শিশু একাডেমিতে সাজে নকশা আয়োজিত শীতকালীন উৎসব-২০১৯, চট্রগ্রাম ই-কমার্স ফোরাম আয়োজিত ১ম বর্ষবরণ উৎসব ও পণ্য প্রদর্শনী মেলা উল্লেখযোগ্য। 

কাগজের ক্রাফটিংয়ের এই তরুণ উদ্যোক্তা তার ‘কারিগর’ নামক উদ্যোগ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, কারিগরকে সবাই একটি ব্র্যান্ড হিসেবে চিনবে। দেশে-দেশের বাইরে নিজেকে ও নিজের পণ্যকে তুলে ধরার স্বপ্ন দেখেন এই তরুণ উদ্যোক্তা।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়