চাকরি নয়, উদ্যোক্তা হওয়াই স্বপ্ন মামুনের
ফামিন জাহান ঐশী || রাইজিংবিডি.কম
‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?’
কবিতার ছন্দে কথাগুলো বলেছেন কবি কুসুমকুমারী দাশ। এমনই একজন তরুণের সন্ধান পাওয়া গেছে। পাঠকদের সঙ্গে আজ পরিচয় করাবো কুসুমকুমারী দাশের সেই আদর্শ ছেলের। তিনি কীভাবে শিক্ষার্থী হয়েও সফল উদ্যোক্তা বনে গেলেন।
জুয়েল মিঞা ওরফে জুয়েল মামুনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য পা রাখলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগে। বিষয়টি পছন্দসই না হওয়াতে বসলেন আবার ভর্তি পরীক্ষায়। এবার তিনি পুরো দস্তুর অর্থনীতির ছাত্র।
স্নাতক পর্বের শুরুতেই পেয়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘মানুষ মানুষের জন্য’ থেকে স্কলারশিপ। ভালোই চলছিল লেখাপড়া। দু’বছর বাদে স্কলারশিপের সময় এলো ফুরিয়ে। শিক্ষানগরী রাজশাহীতে শুধু টিউশনের কথা ভেবে বসে থাকলে জীবনযুদ্ধটা যেন একটু বেশিই কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। ভাবতে লাগলেন নতুন কী করা যায়। সেই চিন্তার ধারায় আলোর মুখ দেখালো উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন।
২০১৮ সালে শুরু করলেন অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশে আমের ডেলিভারি দেওয়া। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়াতে প্রথম বছরই দেখলেন সবার ইতিবাচক সাড়া। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়ার পথ দেখালো।
দাঁড় করালেন অনলাইন ভিত্তিক নিজ প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রুটস হান্ট’। এরপর গবাদিপশু, কালোজিরা, মধু ইত্যাদি পণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে যুক্ত হলো ক্যাটল হান্ট, গ্রোসারি হান্ট, অ্যাপারেলস হান্ট। থেমে ছিল না লেখাপড়াও। সম্পন্ন করেছেন স্নাতক, রাবি থেকেই যুক্ত হয়েছেন স্নাতকোত্তর পর্বে।
তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে শিক্ষার্থীরা কিন্তু স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজেই বহন করেন। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরাও যদি চায়, তাহলে তাদের জন্যও অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে স্বনির্ভর হওয়ার।’ শুধু বাবা-মায়ের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমানো উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই যুক্ত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে। লেখাপড়া, বিতর্ক, সাংবাদিকতা, সমাজসেবা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাফল্য রেখে গেছেন সমানভাবে। ব্যবসার শুরুতেও পেয়েছেন পরিবার, সহপাঠী ও শিক্ষকদের সহায়তা। বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি কনিষ্ঠ এইচএম আলমগীরকে। বললেন সবার ইতিবাচক সাড়া পেলেও যিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন এবং প্রতিটি পদক্ষেপে সাহায্য করেছেন তিনি হচ্ছেন ফ্রুটস হান্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর। আলমগীর বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করছেন, পাশাপাশি বড় ভাইকে সাহায্য করছেন ব্যবসার কাজে। তিনিও জ্যেষ্ঠের পদাঙ্কে তৈরি করেছেন নিজের অনন্য ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য।
চাকরি নাকি স্বনির্ভরতা, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের এখনো চিন্তা চাকরি কেন্দ্রিক। তারা মনে করেন যদি কোনো কাজ না পাও তাহলে বসে থাকো; যেটা একদমই ঠিক না। আমাদের প্রচুর সুযোগ রয়েছে স্বনির্ভর হওয়ার। যেই শ্রম আমরা নির্দিষ্ট চাকরি বা কাজের জন্য দিচ্ছি, সেই একই শ্রম আমরা যদি নিজেদের প্রতিষ্ঠানে দেই, তাহলে আমরাও অন্যদের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরি করে দিতে পারি।
বর্তমানে অনলাইন মার্কেট প্লেস বড় হচ্ছে। অনলাইনে আপনি সারাদেশ থেকেই নিজের পছন্দসই পণ্য কিনে নিতে পারেন ঘরে বসেই।’’
তিনি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানান, তিনি তার এই ব্যবসাকেই আরো বড় করতে চান। ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হলে প্রথমত নিজের উপর আত্মবিশ্বাস ও নির্ভরতা যেমন জোড়ালো হয়, তেমিন এটি দেশের অর্থনীতিতেও অনন্যসাপেক্ষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। বর্তমান তরুণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিজেদের বিচারবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সঠিক পথে অগ্রসর হবেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
পবিপ্রবি/মাহি
আরো পড়ুন