ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

৬০০ টাকাতেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন সুমি

প্রকাশিত: ১৭:৩০, ২২ মার্চ ২০২১   আপডেট: ২৩:১৬, ২২ মার্চ ২০২১
৬০০ টাকাতেই উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন সুমি

সুমি আজম, জন্ম নরসিংদী জেলায় হলেও বেড়ে ওঠেছেন ঢাকার মিরপুরে। সুমির বাবা-মা দুজনেই বন বিভাগে চাকরি করেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই বড়। চিড়িয়াখানা বোটানিক্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন তিনি। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষ করে নিজের পরিচয় তৈরি করবেন। কিন্তু ক্লাস নাইনে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পড়ালেখা আর হয়ে ওঠেনি। অল্প বয়সেই স্বামী সন্তান নিয়ে মেনে নিতে হয় সংসার জীবন। 

শ্বশুর বাড়ি পাবনাতেই তার পরিবার নিয়ে বসবাস। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে নিজের নকশা করা হাতের কাজের শাড়ি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন সুমি। ক্রেতাদের তালিকায় ছিল ছেলের স্কুলের অন্য বাচ্চাদের অভিভাবকরা। স্কুলে বসেই শাড়িতে ডিজাইন করে মনোমুগ্ধকর সেলাই করতেন তিনি। স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ক্যাডেট স্কুলে পড়াশোনা করাবেন তাই দিনরাত পরিশ্রম করতেন। নিজে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেননি সেই আক্ষেপ থেকেই সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করাই তার ইচ্ছে।

ছেলে-মেয়ে বড় হচ্ছে বাড়ছে খরচ। এজন্য কাপড়ের ব্যবসার পাশাপাশি ঢাকায় এসে বিউটি পার্লারের কাজ শিখে বাসায় বসে পার্লারের কাজ করেও আয় করতেন সুমি। ২০ হাজার টাকার পুঁজিতে ব্যবসা ভালোই চলছিল তার। হঠাৎ করোনা এসে সবকিছু তছনছ করে দেয়। বন্ধ হয়ে যায় তার ব্যবসা। স্বামীর অল্প আয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। পূর্বে আত্মীয় স্বজনের সহযোগিতায় ছেলেকে পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি করালেও, আর্থিক সমস্যার কারণে বিপদে পরে যান সুমি।

লকডাউনের সময় ফেসবুক ওয়ালে উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) নামক ফেসবুক গ্রুপ চোখে পড়ে। সেখানে তিনি জানতে পারেন নারীদের অনলাইনভিত্তিক ব্যবসার খুঁটিনাটি। তারপর ফেসবুক পেজের মাধ্যমে হয়ে উঠেন অনলাইন উদ্যোক্তা। তার পেজের নাম ‘সুমি’স আপন ভুবন’। বর্তমানে তিনি অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের খাবার এবং পোশাক নিয়ে ব্যবসা করছেন।

নিজের উদ্যোগের কথা বলতে গিয়ে সুমি আজম বলেন, ‘উদ্যোক্তা হয়ে উঠা আমার জন্য সহজ ছিল না। কারণ আমি যখন ফোন নিয়ে উই’র পোস্ট পড়তাম, তখন এটা নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু আমি থেমে যাইনি। করোনা মহামারী দেখা দেওয়ায় আমার আয়ের সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক ঐ সময়  উই  আমাকে পথ দেখায়। আমি  মাত্র ৬০০ টাকায় খাবার নিয়ে কাজ শুরু করি। এখন আমার শুধু উইতেই বিক্রি ২ লাখ টাকার উপরে। এই আয় দিয়ে আমার ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চলে। আমার ছেলে পাবনা ক্যাডেট কলেজে ১০ম শ্রেণিতে ও মেয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। বর্তমানে পরিবার আমার ওপর নির্ভরশীল। এছাড়াও আমার উদ্যোক্তা জীবনের সফলতার ভূমিকায় সবার আগে বলবো রাজিব স্যারের কথা। কারণ স্যারের প্রতিটা পোস্ট পড়ে আমি কাজ করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আমার কাস্টমারদের ভূমিকাও ছিল অনেক। তারা আমাকে সাপোর্ট করেছেন বলেই আজকে আমি উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পেরেছি।’

ভালো মানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু তার কাছে সেরকম কোনো পুঁজি ছিল না। সুমি রান্না ও সেলাই ভালো পারেন। নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে সামান্য টাকা নিয়ে কাজ শুরু করেন। খাবার ও পোশাকের মতো পণ্য নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি। এভাবেই ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান অনেক দূর।

ঢাকা/সিনথিয়া

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়