মাকে ছাড়া মা দিবস
আফরিনা ফেরদৌস || রাইজিংবিডি.কম
মায়ের সঙ্গে সাহেদের একমাত্র ছবি এটি। তাও আবার বাবার কোলে বসে আছেন। মায়ের মুখটাও তার মনে পড়ে না। মনে পড়ে না মা কীভাবে কথা বলতেন, কীভাবে আদর করতেন বা কীভাবে বকা দিতেন। সত্যি কথা বলতে মায়ের সঙ্গে কোনো স্মৃতি নেই সাহেদের। কি কষ্ট তাই না! আমরা যারা মায়ের আদরে বড় হয়েছি, তারা এই দৃশ্য চিন্তা করতে পারবো না কোনোদিন।
মায়ের থেকে দূরে থাকি তাও সব সময় মনে হয় বাড়ি গেলেই মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমাবো। অথচ চিন্তা করুন যে মানুষটার মায়ের মুখই মনে পড়ে না তিনি কী করে জানবেন মায়ের কোলে মাথা রাখার কি প্রশান্তি। কি করে জানবেন মায়ের গায়ের গন্ধটা ঠিক কতটা অন্যরকম। কি করে জানবেন মায়ের আঁচলে হাত মোছার শাস্তি কী হয়! মা এমন একজন মানুষ যিনি তার ত্রিরিশ পেরোনো সন্তানকেও বুকে আগলে রাখতে চান। কৈশোরে মায়ের বকা খেয়ে কতই না মনে মনে মাকে বকা দিয়েছি। এখন মনে পড়লে হাসি পায়। তাই বলে আমার যদি মা না থাকত বা আমি আমার বাকি জীবনে মাকে আর পাবো না এই কথা চিন্তা করলে বুক ফেটে কান্না পায়! কীভাবে একটা মানুষ মাকে ছাড়া বড় হয়, তা আমার জানা নেই। অনেক বাবাই খুব ভালো সন্তান লালন-পালন করতে পারেন, কিন্তু মায়ের জায়গা নিতে পারেন না কেউ। কোথাও একটা কমতি ঠিকই থেকে যায়।
মা আজ দুপুরে বেগুন ভর্তা করোতো বা মা এবার বাড়ি গেলে তোমার হাতের ওই হালকা মশলা দিয়ে রান্না মুরগির ঝোল খাব বা মাকে এখনো মা বলে ডাকতে পারা, এই ছোট ছোট আবদারগুলো করতে পারার মর্ম আমরা আসলেই বুঝি।
আমরা যদি একটি ঘরকে একটি পরিবারের দিক থেকে তুলনা করি, তাহলে বাবা হলেন ছাদ এবং মা হলেন দেয়াল। ভালোভাবে বেড়ে ওঠার জন্য ছাদ এবং দেয়াল দুটোই প্রয়োজন। তবে সময়ে বা অসময়ে মাথার উপর ছাদ ঠিকই থাকবে কিন্তু দেয়াল না থাকলে প্রতিটি ঘটনার প্রভাব থেকে যায় জীবনে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তানদের লালন-পালনে একজন বাবার চেয়ে মায়ের ভূমিকায় বেশি থাকে। অনেক মা উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার পরেও শুধু সন্তানদের সময় দেওয়ার জন্য নিজের ক্যারিয়ার বাদ দেন।
মায়ের সঙ্গে সন্তানের ছবিতে আজ সোশ্যাল মিডিয়া ভরে গেছে। অনেকে মাকে নিয়ে না বলা কথাগুলো ব্যক্ত করেছেন ফেসবুকের দেয়ালে। যার বেশিরভাগ কথা, ছবি মায়েদের কাছে পৌঁছায় না। আসলে আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ তাদের বাবা-মাকে কখনো বলতেই পারেন না যে তিনি তাদেরকে কতখানি ভালোবাসেন। বলতে না পারুন আরো ভালো, লম্বা করে একটা চিঠি লিখে আজ তুলে দিন মায়ের হাতে। তাতে লিখুন শুধু আজকের দিনে নয়, বরং সারা বছর মায়ের কি কি জিনিসের জন্য আপনি ব্যাকুল হয়ে থাকেন।
আমার বস একজন বিজনেস আইকন। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, মায়ের কথা মনে পড়লে কি ইচ্ছা করে! তিনি বললেন, মনের ভেতর যদি একটা লম্বা সিঁড়ি থাকতো যেটা বেয়ে উঠে মাকে একটু ছুঁয়ে আসতে পারতাম, একটু আদর নিয়ে আসতে পারতাম। আসলে মাকে নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন ছোট-বড় বা উঁচু-নিচু দেখে হয় না। যে যেই অবস্থানেই থাকি না কেন মায়ের অভাব সবাই টের পাই।
সাহেদের মতে, মায়ের সংস্পর্শে বেড়ে না ওঠা সন্তানেরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। আর এই মা দিবস সাহেদের মতো মানুষদের জন্য এক প্রকার কষ্টের। সারাদিন সোশ্যাল মিডিয়ার অত্যাচার আরো বেশি কষ্ট দেয় এই মানুষগুলোকে। অন্যের মাকে দেখে শুধু এটাই মনে হয়- ইশ, আজ যদি আমারো মা থাকতো।
সাহেদ অনুরোধ করেন, যাদের মা আছেন তারা যেন তাদের মায়েদের কাছাকাছি-ই থাকেন, সময় দেন এবং যত্ন নেন। অন্তত এই মা দিবসে সাহেদের মতো মানুষরা অন্য মায়েদের উপহার কিনে দিয়ে যে অভাবটা বোধ করেন সেটা যেন না পেতে হয়। বিশেষ এই দিনে মায়েরা শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতে নয়, সবার মনের মধ্যে বেঁচে থাকুক, যুগ যুগ বেঁচে থাকুক। মায়ের জায়গা যেন বৃদ্ধাশ্রম বা ঘরের কোণ না হয়, বরং বুকে হোক যেভাবে মায়েরা আমাদের আগলে রাখেন। মা হারানোর কষ্ট কাউকে যেন না পেতে হয়।
ঢাকা/ফিরোজ/শান্ত
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন