ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আমার ছবি, ছবির আমি…

ফিরোজ আলম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমার ছবি, ছবির আমি…

আমার তোলা প্রথম ছবি

কথায় আছে, ছবি বলে মনের কথা। ছোটবেলা আমার মন দখল করে নিয়েছিল ছবি। তাই ফটোগ্রাফি করার শখ সেই ছোটবেলা থেকেই। ছবিটাও হয়তো ভালই তুলতাম। তাই আত্মীয়-স্বজনের বিয়ে, গায়ে হলুদ, জন্মদিনের ছবি তোলার ভারটা আমার উপরই পড়তো। আমিও অতি উৎসাহে ছবি তুলতে লেগে যেতাম। এমনো হয়েছে সারাদিন ছবি তুলতে গিয়ে খাওয়ার কথা ভুলে গিয়েছি। এসব ছবি তুলতাম যাদের অনুষ্ঠান তাদের ক্যামেরায়। কারন আমার নিজের কোন ক্যামেরা ছিলনা।

ষষ্ঠ্র শ্রেণীতে যখন পড়ি তখন আমার বন্ধুদের শখ ছিল একটি বাইসাইকেলের মালিক হওয়া। যদিও আমার রাত-দিন কাটতো ক্যামেরার স্বপ্ন দেখে। আরাধ্য বস্তুটি কখনো বাবার কাছে চাওয়ার সাহস পাইনি। বড় বোনের ক্যামেরা দিয়ে চলতে থাকে আমার ফটোগ্রাফি। কিন্তু অটো ক্যামেরায় ছবি তুলে কি আর ফটোগ্রাফির তৃষ্ণা মেটে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর ঢাকায়  এলাম। ততদিনে ডিজিটাল ফটোগ্রাফি শুরু হয়ে গেছে। অবাক হয়ে ভাবি, ছবি তুলতে কোন ফিল্ম লাগেনা অথচ কি চকচকে ছবি। বাবার কাছে সাহস করে একটি ক্যামেরা আর কম্পিউটার চাইলাম। কম্পিউটার পেলেও ক্যামেরা পেলাম না। বাবা অনেক টাকা খরচ করে ক্যামেরা কেনার পক্ষে  ছিলেন না।

আমি কম্পিউটার নিয়ে মশগুল হয়ে গেলাম। ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। আমার অবস্থাও তাই। কম্পিউটা্রে আমার মুল বিষয়ই হলো ফটোশপ। ততদিনে ফটোগ্রাফির সাথে সাথে মিডিয়ার প্রতিও এক ধরনের আগ্রহ সৃষ্টি হল। মিডিয়াতে কাজ করতে গিয়ে প্রথম এসএলআর হাতে নেয়ার সুযোগ হল। সে এক অসাধারণ অনুভূতি। নিকন ডি-৪০ ক্যামেরার সেই ধাতব স্পর্শ আমাকে মগ্ন করে রাখলো বেশ কিছুদিন। আমার তখন চিন্তা একটাই, যে করেই হোক একটা এসএলআর চাই।

মিডিয়াতে কাজ করতে করতেই চাকরি পেলাম ওয়ালটনে। ২০০৭ সালের কথা। প্রথম মাসের বেতন থেকেই ক্যামেরার জন্য টাকা জমানো শুরু হলো । কিন্তু চাকুরীর সামান্য বেতন থেকে টাকা জমিয়ে কবে যে ক্যামেরা কিনতে পারবো তা অনিশ্চিত ছিল। আমার খুব কাছের এক বড়ভাইয়ের সঙ্গে সকল বিষয়ে পরামর্শ নিতাম। যিনি আমার ঢাকা আসার পর থেকে পরম মমতায় পথ দেখিয়েছেন। সেই ভাইয়ের এক আর্কিটেক্ট বন্ধু আমার সামনে তার পুরনো নিকন ডি-৭০ ক্যামেরাটি বিক্রির কথা বললেন। আমারতো মন চনমন করে উঠলো। ভাইয়াকে একা ডেকে বললাম আপনার বন্ধুর ক্যামেরাটি কিনতে চাই। যদিও আমার কাছে অতো টাকা নেই। অনেক কষ্টে দশ হাজার টাকা জমিয়েছি। ভাইয়া বললেন ক্যামেরাটা আমি তোমাকে নিয়ে দিচ্ছি টাকা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা।

আমি একটি ক্যামেরার জন্য অনেক অপেক্ষা করেছি, কিন্তু এভাবে একটি ক্যামেরা পেতে মন সায় দিলনা। ভা্ইয়া বললেন শেখার জন্য এটা ব্যবহার করো । টাকা জমিয়ে ভাল ক্যামেরা কিনে নিও। এক সন্ধ্যায় ক্যামেরাটি আমার হাতে এলো। কিন্তু ক্যামেরার সিসিডিতে অনেক স্পট ছিল। ছবি তুললে কালো কালো দাগ আসতো। সুপরিচিত মডেল ফটোগ্রাফার আজম ভাইয়ের সাথে আগে থেকেই পরিচয় ছিল। ফোন করে সমস্যাটা জানাতেই তিনি ক্যামেরাটি নিয়ে তাঁর সাথে দেখা করতে বললেন। আমি দ্রুত তার মালিবাগের স্টুডিওতে গেলাম। তিনি তার পরিচিত টেকনিশিয়ান দিয়ে ক্যামেরাটি সার্ভিসিং করিয়ে দিলেন।

শুরু হলো আমার সত্যিকারের ফটোগ্রাফি। পরদিন শুক্রবার থাকায় খুব সকালে চলে গেলাম ধানমন্ডি লেকের ধারে। প্রথম দিনে তুলে ফেললাম বেশ কিছু ছবি। ডিএসএলআর ক্যামেরায় আমার তোলা প্রথম ছবি। যদিও অটো মুডে তোলা। রাতে ছবিগুলো নিয়ে গেলাম আর্কিটেক্ট দিপু ভাইয়ের অফিসে। তিনি খুব উৎসাহ দিলেন। সেইসঙ্গে অটো মুডে ছবি তোলা বাদ দিতে বললেন। তিনি প্রথম শেখালেন কিভাবে ম্যানুয়ালি ছবি তুলতে হয়। আর সেই থেকেই দিপু ভাই হয়ে গেলেন আমার ছবি তোলার গুরু। কিছুদিন পর সুযোগ এলো কুয়াকাটা যাওয়ার। আমাদের দলে ছিলেন ফিল্ম ডিরেক্টর, ফটোগ্রাফার, থ্রিডি এ্যানিমেটর আর আমার গুরু দিপু ভাই। অনেকগুলো ক্রিয়েটিভ এক্সপার্ট লোকের সঙ্গে কুয়াকাটার মত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কাছাকাছি এসে আমার ফটোগ্রাফিক শিক্ষাটা আরো গতি পেলো। দিপুভাই হাত ধরে শেখালেন এক্সপোজার, শাটার স্পিড, ফোকাসিং, ফ্রেমিং সব।

আমার ওই পাচঁ দিনের ট্যুর জীবনের শ্রেষ্ঠতম ট্যুর। এই ট্যুরটিকেই আমার ফটোগ্রাফির একাডেমিক শিক্ষা মনে করি। যদিও ভাল ছবি তোলার জন্য ভালো কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু কোর্স করা জরুরী। কিন্তু আমার মত শখের ছবি তোলার লোকের জন্য ওইটুকুই হয়তো যথেষ্ট। আসলে ছবি তোলার জন্য প্রথম দরকার ইচ্ছা এবং চেষ্টা।

কুয়াকাটা থেকে ঢাকায় ফিরলাম। সাথে নিয়ে এলাম ডিজিটাল ফটোগ্রাফির অসাধারণ অভিজ্ঞতা। চলতে থাকলো আমার ফটোগ্রাফি আর সাথে চাকরি। এরপর আমার আরেক শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি ক্যামেরার চেহারা দেখে বললেন্ এটা দিয়ে তুমি কি ফটোগ্রাফি করবে। নতুন ক্যামেরা কেনো। স্যারের বদান্যতায় অবশেষে একটি নতুন ক্যামেরা পেলাম। আমি জীবনে কোনদিন সেই দিনটি ভুলতে পারবোনা।

সত্যি বলতে আজ আমি যা কিছু করছি তার পেছনে অনেকে অবদান রেখেছেন। কিন্তু আমার জীবনের বেশিরভাগ অর্জন সম্ভব হয়েছে আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের কারনে। ওয়ালটনে কাজ করি মূলত মিডিয়া এবং ব্রান্ডিং-এ। কাজের ধরনের জন্য আমাকে সারাদেশে ঘুরে বেড়াতে হয়। এতেই অনেক ছবি তোলার সুযোগ পাই। কিন্তু তৃষ্ণা মেটেনা। একটা সময় আমার হাতে প্রচুর সময় ‍ছিল কিন্তু ক্যামেরা ছিলনা। আজ ক্যামেরা আছে কিন্তু সময় যেন কীভাবে হারিয়ে যাচ্ছে।

লেখক: যুগ্ম বার্তা সম্পাদক
রাইজিংবিডি২৪.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়