ঢাকা নগরী যেন কালো পতাকার শহর
শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম
একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ট্রেনিং ক্যাম্প (রশিদ তালুকদারের আলোকচিত্র)
আজ অগ্নিঝরা মার্চের দশম দিন আরও একটি উত্তাল দিন। এই দিন ছিল বুধবার। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের তৃতীয় দিবস। সর্বাত্মক অসহযোগে কার্যত পুরো দেশ অচল হয়ে পড়েছিল।
বিক্ষোভের তরঙ্গ প্রবহমান টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। কোর্ট, কাছারি, অফিস-আদালত ছিল বন্ধ। এদিন রাজধানী ঢাকায় সকল সরকারী আধা-সরকারী বিভাগের কর্মচারী অফিসে যোগদানে বিরত থাকেন। তবে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী বেসরকারি অফিস, ব্যবসা কেন্দ্র, স্টেট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক এবং সরকারি ট্রেজারিসহ বিভিন্ন ব্যাংক খোলা থাকে।
স্বাধিকার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ঢাকা নগরীর সকল বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস, বাসভবন এমনকি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বাসভবন এবং রাজারবাগ এলাকায় অবস্থিত পুলিশ বিভাগের অফিসগুলোর শীর্ষেও কালো পতাকা উত্তোলিত ছিল। নগরীর বিভিন্ন সড়কে সকল প্রকার যানবাহনের সম্মুখে শোকের স্মারক কালো পতাকা ছিল। পুরো ঢাকা নগরী যেন কালো পতাকার শহরে পরিণত হয়েছিল।
অন্যদিকে এদিন নারায়ণগঞ্জ সাব জেলের ২২৩ জন কয়েদী পলায়নকালে পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়। বিগত ৩ ও ৪ মার্চে চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে যারা আহত হয়েছিল আজ তাদের মধ্যে এক কিশোর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
সারাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশবাসীকে ওয়াকিবহাল করার অভিপ্রায়ে বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতি প্রদান করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই আজ শেষ কথা। বাংলাদেশের জনগণের নামে আমরা যে নির্দেশ দিয়েছি সেক্রেটারিয়েটসহ সরকারী ও আধা-সরকারী অফিস-আদালত, রেলওয়ে, স্থল এবং নৌবন্দরসমূহে তা পালিত হচ্ছে। যারা মনে করেছিলেন, শক্তির দাপটে আমাদের ওপর তাদের মত চাপিয়ে দেবেন বিশ্বের কাছে আজ তাদের চেহারা নগ্নভাবে ধরা পড়েছে। বিশ্ব জনমতের কাছে তারা বাংলার নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের ওপর শক্তির নগ্ন প্রয়োগের যৌক্তিকতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। এতদসত্ত্বেও বিবেকবর্জিত সেই গণবিরোধী শক্তি তাদের সশস্ত্র পথই অনুসরণ করে চলেছে। তাদের সমর সজ্জা সমানে অব্যাহত।’
এদিকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান ও তাহরিখ-ই-ইশতিকলাল পার্টির প্রধান এয়ার মার্শাল (অব) আসগর খান এদিন করাচির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। এদিন তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিনবার দেখা করেন এবং উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একান্তে আলোচনা করেন।
ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিবের ওপর কোনরূপ দোষ দেবার আমি কোন কারণ দেখি না। তিনি সঠিক এবং ন্যায্য ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ ছাড়া তার পক্ষে অন্য কোন ভূমিকা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। আমি তার এ অবস্থানকে সমর্থন করি।’
বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচীর প্রতি আসগর খানের সমর্থনসূচক উক্তিতে পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য নেতৃবৃন্দও তাদের মনোভাব প্রকাশ করতে শুরু করেন। ন্যাপপ্রধান ওয়ালী খান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আগামী ১৩ মার্চ ঢাকা আসার ঘোষণা দেন।
অপরদিকে ঢাকায় ন্যাপ (ভাসানী), ন্যাপ (মোজাফফর) সহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের সংগঠনসমূহ অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এসে মিলিত হতে থাকে। যেন এটাই বাঙালীর ঠিকানা।
ঢাকা/টিপু
- ১০ মাস আগে লটারির টিকিট নিয়ে বিরোধে যুবক খুন
- ৩ বছর আগে যেমন ছিল একাত্তরের ২৬ মার্চ
- ৩ বছর আগে ২৫ মার্চ : সেই ভয়াল দিনের ঘটনাক্রম
- ৩ বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্রের বিশাল চালান নিয়ে সোয়াত জাহাজ
- ৩ বছর আগে ঢাকা হয়ে ওঠে পতাকার নগরী
- ৩ বছর আগে প্রাক্তন সৈনিকদের রক্তশপথ
- ৩ বছর আগে ঢাকায় ভুট্টো-ইয়াহিয়ার গোপন বৈঠক
- ৩ বছর আগে বিভিন্ন স্থানে বিহারিদের সঙ্গে বাঙালীর তুমুল সংঘর্ষ
- ৩ বছর আগে প্রথম স্বতঃস্ফূর্ত সশস্ত্র বিদ্রোহ
- ৩ বছর আগে ৩২ নম্বরে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল
- ৩ বছর আগে বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়ার আড়াই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক
- ৩ বছর আগে নতুন সামরিক আদেশের বিরুদ্ধে উত্তাল সারাদেশ
- ৩ বছর আগে জাতিসংঘ কর্মীসহ ২৬৫ বিদেশি নাগরিকের ঢাকা ত্যাগ
- ৩ বছর আগে একগুচ্ছ নাটক নির্মাণ করবে বিটিভি
- ৩ বছর আগে ঢাকাসহ সারাদেশে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু
- ৩ বছর আগে যেমন ছিল ৭ মার্চের দৃশ্যপট
- ৩ বছর আগে বাঙালিকে শায়েস্তা করার হুমকি ইয়াহিয়ার
- ৩ বছর আগে উত্তাল মার্চ: টঙ্গীর বিক্ষোভ মিছিলে সেনাবাহিনীর গুলি
- ৩ বছর আগে ৪ মার্চ ছিল লাগাতার হরতালের তৃতীয় দিন
- ৩ বছর আগে পতাকা মুক্তি ও স্বাধীনতার সর্বোচ্চ অহঙ্কার
- ৩ বছর আগে স্মৃতিতে অগ্নিঝরা মার্চ: আজ পতাকা দিবস
- ৩ বছর আগে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বার্তা নিয়ে এলো আগুন ঝরা মার্চ
আরো পড়ুন